আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বিদায় ওবামা, স্বাগত ট্রাম্প!

চিররঞ্জন সরকার  

কিছু কিছু জিনিস আছে যা ছেড়ে দিতে মন সায় দেয় না, কেবল ধরে রাখতে ইচ্ছে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক মানুষের এখন অনেকটা সেই অবস্থা। বারাক ওবামা বিদায় নিচ্ছেন, অথচ তাকে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিয়ম বড়ই কঠিন। এর ব্যতিক্রম হওয়ার নয়। মেয়াদ শেষে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সাদরে বরণ করে নিতেই হবে। তা সে যতই তিনি প্রগতির বিপরীত পথে হাঁটুন না কেন!

সাধারণত নতুনের প্রতি আমাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। অনেকটা নতুন জামার মতো আকর্ষণীয়, অমলিন, বা নতুন বউয়ের মতো মিষ্টি মধুর, রহস্যময়ী। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে নতুনের সেই রহস্য-মাখানো ইমেজ নেই। এমন নতুনকে বরণ করতে মন খুব একটা সায় দেয় না। তবু নতুনের মধ্যে পুরনোকে দেখা, নতুনকে নতুন করে দেখা বা পুরনোকে নতুনভাবে গ্রহণ করার মধ্যেই আছে ভালো থাকার আশ্বাস। মার্কিন মুলুকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘সাদা বাড়ি’তে কালো পরিবারের বিদায়ের দিন আজ। বারাক ওবামা বিদায় নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প হবেন এই বাড়ির বাসিন্দা।

দুজনে রাজনৈতিক দলগতভাবে দুই মেরুর বাসিন্দাই শুধু নন, দুটি আলাদা মাপের মানুষ। একজন বিনয়ী, ভদ্র, শিক্ষিত, সুশীল, রুচিশীল, মার্জিত ও মধুর। আরেকজন উদ্ধত, অ–বিনীত, অহঙ্কারী, সৌজন্যের ধার ধারেন না। বিদায় নেওয়ার আগে গত ১০ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন ওবামা। ১৭৯৬ সালে প্রথম জর্জ ওয়াশিংটন ওভাল অফিস ছাড়ার পর ৩২ পাতার এক বিদায়ী ভাষণ লিখে গিয়েছিলেন। ঐক্য ও সম্প্রীতিরক্ষা সেই ভাষণের মূল আবেদন ছিল। প্রেসিডেন্ট ওবামা দুশো বিশ বছরের সেই ঐতিহ্যকে সম্মান করেই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীর কাছে শিকাগো থেকে ভাষণ দিয়েছেন। শিকাগোর সঙ্গে তাঁর আত্মার সম্পর্ক। শিকাগোতেই তাঁর স্ত্রী মিশেলের সঙ্গে পরিচয়, পরিণয় এবং সন্তানদের জন্ম। শিকাগো শহরকে নিজের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ওবামা বলেন, ‘এক সময়ে এই শহরের তরুণ ছেলেটি আজও নিজের অস্তিত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এবং আজও খুঁজে চলেছে জীবনের মানে।’

বিদায়ী ভাষণ শুনতে ২০ হাজারের বেশি সমর্থক হাজির ছিলেন। বাকিদের চোখ ছিল টিভির পর্দায়। বিদায় বেলাতেও তাঁর জনপ্রিয়তা কোনও অংশে কম ছিল না, বিশেষ করে দেশের শিক্ষিত যুবক সম্প্রদায়ের চোখে তিনি ছিলেন আদর্শ রাষ্ট্রপতি। মানুষের চোখে জল, তাঁর চোখেও ছিল বিদায় অশ্রু। জনতা আরও চার বছর থাকার কথা চিৎকার করে অনুরোধ করেছেন। উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘তা হয় না’, ‘ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর আমাদের গণতন্ত্রের অন্যতম পরিচিতি।’ ভাষণের শুরুতেই তিনি দেশবাসীকে দায়িত্ব পালনকালে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। ‘আপনাদের জন্য দায়িত্ব পালন আমাকে সম্মানিত করেছে, গর্বিত করেছে। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তার থেকে একটা উন্নততর আমেরিকাকে রেখে যাচ্ছি। প্রতিদিন আমি আপনাদের কাছে শিখেছি। আপনারাই আমাকে আরও উন্নত রাষ্ট্রপতি ও উন্নত মানুষ বানিয়েছেন। আপনারাই পারেন আরও ভাল এক আমেরিকা উপহার দিতে। জীবনের বাকি দিনগুলোতেও আপনাদের সঙ্গেই থাকব, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে।’

হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্ট্রাম্প বিশ্বায়নের বিপরীতে হাঁটতে চলেছেন। ওবামা মনে করিয়ে দিয়েছেন, আজ যাঁরা নিজেদের খাঁটি মার্কিন বলে দাবি করছেন, তাঁরাও এক সময় মার্কিন ভূখণ্ডে বহিরাগতই ছিলেন। ‘আমরা এমন একটি জাতি, যে জাতি অভিবাসীদের নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং চিরকাল আমরা অভিবাসীদের জাতি হয়েই থাকব।’

ট্রাম্প পরের দিনই নিউ ইয়র্কে সাংবাদিক–সম্মেলন করে বুঝিয়ে দিলেন, ওবামা যাই বলুন না কেন, তিনি তাঁর মতো করেই দেশ চালাবেন। কাউকে জবাবদিহি করবেন না। ওবামা প্রশাসনের আদ্যোপান্ত বদলে দেবেন। প্রচুর কর্মসংস্থান করবেন, ওবামা কেয়ার তুলে দেবেন, প্রতিবেশী মেক্সিকোর সীমানায় দেওয়াল তুলবেন। তার নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি করে সমীহ করে চলবে বিশ্ব। অভিযোগ এসেছিল আমেরিকায় ভোট চলাকালীন ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁর কিছু অশ্লীল ভিডিও রাশিয়ার সংগ্রহে আছে। সেসব মিথ্যে এবং বানানো বলে মিডিয়ার বদনাম করলেন, নির্বাচনে রাশিয়ার পক্ষপাতিত্ব বা হ্যাকিং অস্বীকার করলেন।

এদিকে মার্কিন মুলুকে ক্ষমতার হস্তান্তর, নতুন ও পুরনো প্রশাসনের মতান্তর, নতুন রাষ্ট্রপতির খামখেয়ালি উগ্র মনোভাব, সামাজিক মাধ্যমে টুইটারের কূটনীতি, হোয়াইট হাউসে স্বজনপোষণ, পরিবারতন্ত্র, রাজনৈতিক চরমপন্থা, বর্ণ বৈষম্যের ফল্গুধারা, মেক্সিকোর সীমানায় দেওয়াল তুলে আপনকে পর করে দেওয়া বা চিরশত্রু রাশিয়াকে মিত্র করার সুপ্ত প্রবণতা— সব কিছুই কেমন যেন ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীজুড়ে প্রগতির যে মুক্তি বায়ু বইতে শুরু করেছিল সেইখানে আজ দেওয়াল তোলার পরিকল্পনায় সে দেশের অবৈধ অভিবাসী সমস্যা কতটা মিটবে জানি না। নাকি প্রতিবেশীর সীমানায় দেওয়াল উঠলে দমবন্ধ হয়ে যাবে মুক্ত পৃথিবীর?

মনে পড়ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সেই বিখ্যাত ভাষণ 'I have a dream one day my children will not be judged by their color but by their content of character.' মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যে স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে তাঁর সন্তানদের বিচার করা হবে না চামড়ার রঙ দিয়ে, সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছিল ২০০৮ সালে যেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন বারাক ওবামা। তাঁর বিজয় ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমরাই অর্থাৎ দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক, খেটে খাওয়া মানুষই পারে পরিবর্তন আনতে।’

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টানা আট বছর বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন শেষে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিচ্ছেন। রেখে যাচ্ছেন তার সমৃদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ কার্যকালের রেকর্ড। তার কার্যকাল যে খুব বেশি সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত ছিল তা নয়। তথাপি তার কিছু কিছু অর্জন দীর্ঘদিন টিকে থাকবে। তিনি বেশকিছু সাহসী সংস্কারের প্রস্তাব করেছিলেন যদিও সেগুলো আইনের রূপ লাভ করেনি। তিনি ইরাক হামলার বিরোধিতা করেছিলেন এবং নিজের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যদের ইরাক থেকে স্বদেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তিনি কিছু যুদ্ধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও লড়েছিলেন, কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে লড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে নেমে ওবামা অনেক কিছুই অর্জন করতে পেরেছিলেন যা আর কেউ পারতেন কিনা সন্দেহ। ২০০৮ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে যে ব্যাপক মন্দা শুরু হয়েছিল তা থেকে দেশকে উদ্ধার করা ওবামার এক বিরাট সাফল্য। এর জন্য তিনি কর হ্রাস করেন, বেকার সুবিধা বাড়ান, গণপূর্ত প্রকল্পে অর্থায়ন করেন ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেন। এর ফলে জিডিপি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে।

ওবামা মার্কিন অহংবোধ ভেঙ্গে চুরমার করে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা সফরে যান এবং হাভানা ওয়াশিংটন কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান ৬০ বছরের উত্তেজনার সমাপ্তি টানেন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তি সম্পাদনে যে ক’জন বিশ্ব নেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ওবামা তাদের একজন। বলতে গেলে তিনিই ছিলেন এই চুক্তির মূল হোতা। পরমাণু অস্ত্র করায়ত্ত করা থেকে ইরানকে নিবৃত্ত রাখার জন্য ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি হয়, সেটিও ওবামার ব্যক্তিগত কূটনীতিরই ফল।

প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার জনসমক্ষে কেঁদেছেন ওবামা। তার এ কান্নার পেছনে ছিল শোক ও ব্যর্থতার মিশ্রণ। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করতে ব্যর্থ হওয়া এবং নিষ্পাপ শিশুরা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কেঁদেছেন তিনি। ওবামা সত্যিকার অর্থেই ছিলেন বিশ্বনেতা।তার বক্তব্যের মধ্যে যে উজ্জীবনী শক্তি ছিল, বর্তমান বিশ্বে তা বিরল। অনেক সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার পরও তিনি যেটুকু যা করেছেন, আগামী দিনে কোনো মার্কিন রাষ্ট্রপতির কাছে তেমন কিছু পাওয়া যাবে কি-না সন্দেহ!

আজ ট্রাম্পের শপথ কি কোনও নতুন ইতিহাস লিখে যাবে? জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে পারবে কি এই দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট প্রগতির রঙে দেশটাকে রাঙিয়ে তুলতে? নাকি কয়েকদিন পর আমেরিকাবাসী সমস্বরে বাঙালি সুরসাধক শাহ আবদুল করিমের গান গাইবেন-‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…?’

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ