আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা কি সময়ের দাবি নয়?

এনামুল হক এনাম  

কয়েকদিন আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল। পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সিলেট শহরে প্রায় অর্ধ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সাথে ২/১জন অভিভাবক মিলিয়ে লক্ষাধিক লোকের জনসমাগম হয়েছিল সিলেট শহরে।

অনেক বছর ধরেই আমি ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ইনভিজিলেটর হিসেবে কাজ করার সুযোগে দেখেছি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছাত্র ছাত্রীরা এসেছিল ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিতে। সেই রাজশাহী, খুলনা, পঞ্চগড় দূরদূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সাথে চিন্তিত, ক্লান্ত অভিভাবকদের পদচারণায় ব্যস্ত ছিল নগরী।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে এই ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য গুনতে হয়েছে বড় অংকের টাকা। ভর্তি ফিস, যাতায়াত, থাকা, খাওয়া বাবদ এই অর্থের পরিমাণ কোনক্রমেই ৫-৭হাজারের কম নয়। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীকে একাধিকবার এই ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী... শহরে শহরে দৌড়াতে হয়। ভর্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এইসব ছাত্র ছাত্রীর একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের জন্য যাতায়াত এবং থাকা খাওয়ার অর্থ জোগাড় করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমি একটি ছেলেকে চিনি যাকে যে কিশোরগঞ্জ থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছিল, যার যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়ার খরচ দিয়েছেন প্রতিবেশিরা। সবাই তার মত সৌভাগ্যবান হয় না। অনেকের পিতা-মাতা ঋণ করে এই অর্থ যোগাড় করেছেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা সাদামাটা চেহারার ছাত্রছাত্রীদের ক্লান্ত মুখগুলো আমায় পীড়া দিয়েছে ভীষণ।

গত বছর সীমিত পরিসরে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিলো। যার আওতায় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একই সময় একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাবনা করেছিলো। কিন্তু ‘সচেতন সিলেটবাসী’র আন্দোলনের ফলে তা বাতিল হয়ে যায়। আঞ্চলিকতার নেশায় বুদ তথাকথিত সচেতন(!) নগরবাসীরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া শিক্ষকদের সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণাও করেছিলেন। তাদের দাবির অন্তরালে সুপ্ত মনোবাসনা ছিল, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলেটে অবস্থিত, সেহেতু আগে সিলেটের ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাবে, তারপর বেঁচে যাওয়া আসনগুলো অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরা পাবে। তারা ভীত ছিলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে, অন্যান্য জেলার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতায় সিলেটের ছাত্র-ছাত্রীরা পেরে উঠবে না। তাদের মনোবাসনা এবং চিন্তা-চেতনা আমায় কষ্ট দেয়, ভীত করে, অন্তঃসারশূন্য মেধাহীন আঞ্চলিকতার কুৎসিত ভবিষ্যতের আভাস দেয়।

আমি বিশ্বাস করি, মেধাবী শিক্ষার্থী যে অঞ্চলেরই হোক, যে পরিবারেরই হোক... যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তির সুযোগ পাওয়া উচিত। অর্থাভাবে বা আঞ্চলিকতার মারপ্যাঁচে যদি কোন মেধাবী ভর্তির সুযোগ হারায় তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেলে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তারা ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহরের সারা বছর ভাল ভাল শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া, স্বনামধন্য কোচিং-এ সাজেশন, নোট পাওয়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে নামকরা মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়। আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই এমন অনেকে আছে... আমি মুগ্ধ চোখে তাদের দেখি!

ভর্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় আয়ের সুযোগ থাকে, অধিকাংশ সময় তা টাকার অংকে কয়েক কোটি। যেসব শিক্ষক বা ব্যক্তিবর্গ এই আয়ের সুযোগ খোয়াতে চান না তা নিশ্চিতভাবেই আঞ্চলিকতাকে উসকে দিয়ে আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢালবেন আর সচেতন নাগরিকদের কূপমণ্ডূকতার স্লোগান শুনবেন।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ব্যতিক্রমধর্মী বিষয় পড়ানো হয় যা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না... এমন যুক্তি অনেকেই দেখান। আমি বলি সেইসব ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদাভাবে সমন্বিত প্রশ্ন করলেই হয়ে যায়। আরও অনেক সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধানের পথও নিশ্চয়ই আছে। বিজ্ঞজনেরা বসে সেই সমাধান খুঁজে নিলেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের এবং তাদের পরিবারের কষ্ট লাঘব হয়।

আঞ্চলিকতার স্বার্থ, ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্তহীনতার জন্য শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হবে তা মেনে নেয়া যায় না। স্মরণ রাখবেন গুটিকতক শিক্ষার্থীরা চাইলে হেলিকপ্টার নিয়েও পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারবে, কিন্তু অধিকাংশের বাস কিংবা ট্রেনের টিকেটের টাকাটা জোগাড় করাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।

চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করুন।

এনামুল হক এনাম, কলামিস্ট, সাহিত্যিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ