আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

প্রসঙ্গ: প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

সাব্বির খান  

যেকোনো আসামীর জামিন দেয় আদালত; সরকার নয়! সরকার বিচার বিভাগ কন্ট্রোল করেন না। কিছুদিন ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু 'ইতর' বাঙালি "ধন্যবাদ-বিষয়ক" ট্রল শুরু করেছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। এরা ছ্যাবলামি করতে গিয়ে এমন সব নোংরামিতে জড়িয়ে পড়ছে যা শুধু দুঃখজনকই নয়; একই সাথে ভয়ংকরও বটে! এর নেপথ্যের কারণ হচ্ছে, অভিনেত্রী নওশাবা সহ প্রায় ৪২ জন আটককৃত ছাত্রের জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বিভিন্ন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা।

হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী নিজেও চেয়েছেন আটককৃতরা জামিনে মুক্তি পেয়ে যার যার পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে ঈদ উদযাপন করুক। প্রধানমন্ত্রীর এ চাওয়া নিঃসন্দেহে মানবিক এবং একই সাথে ফুটে ওঠে দেশের জনগণের প্রতি তাঁর ভালবাসার মানসিকতা!

একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, শেখ হাসিনা-সরকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে একটা মহল যেমন তাঁর বিরোধিতা করে এবং প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সৎ কাজগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে অসহযোগিতা করে; তেমনি তিনি ভাল কিছু করার চেষ্টা করলেও ঠিক একই ভাবে 'ইতরামি-ছ্যাবলামি' করে সে ভাল কাজের মহত্ব এবং গুরুত্বকে ঢেকে দিতে হেন কাজ নেই যা করেন না। এটা কি শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা, নাকি এর পেছনে ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য কাজ করে?

অনেকেই হয়ত জানেন না যে, জামিনের জন্যও আদালতে শুনানি হয়। শুনানিতে বাদী এবং বিবাদী, দুই পক্ষই জামিনের পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। সরকার যদি হয় বাদী পক্ষ, তাহলে সরকারের আইনজীবী আসামীকে জামিন না দেয়ার জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও মামলার জটিলতা-সাপেক্ষে আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারার কথা তুলে ধরেন। ঠিক একইভাবে আসামীপক্ষের আইনজীবী সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যকে খণ্ডন করে বলেন, কেন তাঁর মক্কেলকে জামিন দেয়া উচিত এবং তখন তিনিও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারার আশ্রয় নেন।

দুপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পরে মহামান্য বিচারক/বিচারপতি তখন একটি রায় দেন। সে রায় সরকার পক্ষে যেতে পারে কিংবা আসামীপক্ষেও যেতে পারে। অর্থাৎ আসামীর জামিন হতেও পারে, আবার না-ও হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি, দু'ধরণের রায়েই "গোবরডাঙার" এসব ইতররা সরকারকেই দায়ী করছে এবং ইতরামি করছে!

এখন দেখা যাক, নওশাবা সহ ৪২ জন আসামীর জামিনের ক্ষেত্রে কিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেন; অর্থাৎ প্রসেসটা কি হতে পারে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি আদালতের বিচারপতিকে ফোন করে বলেছেন যে, আসামীদের জামিন দিয়ে দেবেন এবং এটা আমার আদেশ! কখনোই না। তিনি কি প্রধান বিচারপতিকে তাঁর অফিসে ডেকে একই কথা বলেছেন? অসম্ভব! তাহলে তিনি কি এমন কাজ করলেন যে তিনি ধন্যবাদ পাচ্ছেন!

কাজটি খুবই সোজা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কেবিনেট সদস্য আইনমন্ত্রীকে ডেকে বলে দিতে পারেন যে 'নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে' গ্রেপ্তারকৃত সব আসামীকে ঈদের আগেই জামিনে মুক্তি দিতে হবে। আইনমন্ত্রী তখন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেলকে ডেকে প্রধানমন্ত্রীর আদেশটির কথা জানান। এটর্নি জেনারেল নিজে শুনানিতে অংশগ্রহণ না করলে যে আদালতে মামলাটির শুনানি হবে, সে আদালতের কর্মরত সরকারি আইনজীবীকে (পিপি) একই কথা বলে দেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারী আইনজীবী (পিপি) কি হম্বি-তম্বি করে মামলার জজ বা বিচারপতির অফিস বা বাসভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আদেশটির কথা জানান? না, তিনি তাও করবেন না। আদালত বা বিচারপতিরা প্রধানমন্ত্রীর আদেশ-অনুরোধ মান্য করতে বাধ্য নন। তাহলে কিভাবে আসামী জামিন পায় প্রধানমন্ত্রীর কথায়?

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের শুনানিতে অনেকটা বোবার ভূমিকা পালন করেন। তিনি জামিনে বাধা দিতে শক্ত কোন বক্তব্য বা আর্গুমেন্ট দেন না। আসামী পক্ষের শুনানি বা বক্তব্যের কোন বিরোধিতাও তেমনভাবে করেন না। সরকারের আইনজীবী মিন মিন করে বুঝিয়ে দেন যে, আসামীদের জামিন হলে রাষ্ট্রপক্ষের কোন আপত্তি নাই। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারক/বিচারপতি যখন দেখেন যে, আসামী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য আইনের ধারায় অনেক শক্তিশালী ও যৌক্তিক এবং পাশাপাশি সরকার পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য এতটাই দুর্বল যে আসামীদের জামিনের আদেশ না দিয়ে উপায় নাই। তখন আসামী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যকে "জয়ী" হিসেবে ঘোষণা দেন এবং আসামীদের জামিনে মুক্তি দিতে সরকারকে আদেশ দেন।

নোংরামিতে ভরা এসব বাঙালদের ঘটে যদি 'হাল্কা-পাতলা' কোন স্তর থেকে থাকে, তাহলে কেন প্রধানমন্ত্রীকে সবাই ধন্যবাদ দিচ্ছে এবং কেনইবা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে, তা বুঝতে পারার কথা। অবশ্য যারা বুঝে এবং জেনেশুনে নোংরামি করছে, তাদের হীন-উদ্দেশ্যকে বাধা দিতে সরকার নিশ্চয়ই সক্রিয় হবে!

সাব্বির খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলাম লেখক ও সাংবাদিক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ