প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আরিফ জেবতিক | ১০ এপ্রিল, ২০১৯
গতকাল (৯ এপ্রিল) খবর বেরিয়েছে যে এখন থেকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হতে হলে নারীদেরকে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। এটা ঠিক যে দেশে নারী শিক্ষার প্রসার অনেক বেড়েছে এবং এখন স্নাতক ডিগ্রিধারী নারীদের অভাব নেই, কিন্তু তবুও প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা পদে সাধারণ গ্রাজুয়েট ডিগ্রির কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
দেশের স্নাতক ডিগ্রিতে এমন কিছু পড়ানো হয় না, প্রাথমিক স্কুলের জন্য যা জরুরি হয়ে পড়েছে। বরং যারা এইচএসসি পাশ করে যেসব কাজ করা যায়, সেসব কাজের জন্য এইচএসসি পাশের পরেই প্রার্থীদেরকে দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ প্রত্যেক স্নাতক পড়ুয়ার পেছনে রাষ্ট্রের ব্যাপক ভর্তুকি আছে, যাদের এই ডিগ্রির প্রয়োজন নেই, তাঁদেরকে স্নাতক পড়ানো রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় মাত্র।
তবে একান্তই যদি স্নাতক শিক্ষিকা প্রাইমারি স্কুলে রাখা দরকার হয়ে পড়ে, তাহলে বিশেষায়িত কোর্স তৈরি করা যায়। যেমন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অফিসাররা এইচএসসি পাশ করার পর চাকুরিতে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে তাঁরা সমরবিদ্যায় বিশেষায়িত স্নাতক ডিগ্রি নেন, যা তাঁদের পেশার জন্য প্রয়োজনীয়। তাঁদেরকে খামোখাই জেনারেল স্নাতক পাশ করার পর কমিশনের জন্য আবেদন করানো হলে আবার তাঁদেরকে সমরবিদ্যা পড়তেই হতো, মাঝখান থেকে জেনারেল স্নাতক পড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং ঐ অফিসারদের জীবনের একটা মূল্যবান সময় অপচয় হতো।
একই বিষয় আমাদের নার্সিং পেশাতেও আছে। তাঁরাও গ্রাজুয়েট না হয়েই নার্সিং ইন্সটিটিউটে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেবার পেশায় আসতে পারেন (যদিও তাঁদের ডিগ্রিটা গ্রাজুয়েশন নয়)।
আমাদের দেশে অনেকগুলো শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট আছে। তাঁদের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে সেখানে বিশেষায়িত স্নাতক ডিগ্রির প্রচলন করা যেতে পারে। এইচএসসি পাশের পর সেখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন এবং ২ অথবা ৩ বছর 'প্রাথমিক শিক্ষার' উপর বিশেষায়িত গ্রাজুয়েশন করবেন।
প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির ভিত্তি গড়ে দেয়। সেখানে পড়ানো একটা বিশাল ব্যাপার। শিশুদের মনস্তত্ত্ব বুঝার ব্যাপার আছে, তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত রাখা, এনগেজ রাখা, তাঁদের শিক্ষাকে আনন্দময় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা, ক্লাসরুমে বিভিন্ন ধরনের মডেল তৈরি করা, নাটক-গান-ছন্দ-ছবির যথাযথ ব্যবহার করা; সব মিলিয়ে বলা চলে যে বাচ্চাদেরকে যদি সত্যিকার অর্থেই শিক্ষা দিতে হয়, সেটার জন্য অনেক জ্ঞান থাকা দরকার। সে জ্ঞান হচ্ছে বিশেষায়িত জ্ঞান।
এই বিশেষায়িত স্নাতক ডিগ্রিতে শিক্ষার্থীদেরকে এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেয়া হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাকসেসফুল পড়াশোনার মডেলগুলো সেখানে শেখানো হবে, পর্যালোচনা করা হবে। ক্লাস প্রেজেন্টেশনের কোর্স করানো হবে। শিশু মনস্তত্ত্বের কোর্স রাখা হবে। একটি বাচ্চার পরিপূর্ণ অভিভাবক হওয়ার পুরো বিষয়টি শেখানো হবে।
একমাত্র তাহলেই এই স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষিকাদের কাছ থেকে আমরা ভালো কিছু পেতে পারি।
নইলে সাধারণ বিএ পাসকোর্স আর এইচএসসির মাঝে এমন কোনো তফাৎ দেখি না, যা প্রাইমারি স্কুলে আলাদাভাবে ভ্যালু এড করতে পারবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য