আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আদিবাসী কারা

ইমতিয়াজ মাহমুদ  

আমাদের এখানে আদিবাসী শব্দটা নিয়ে আগে কোন বিতর্ক ছিল না। আমাদের দেশের বড় বড় সব রাজনৈতিক দল ও নেতানেত্রী সকলেই পাহাড়ের ও সমতলের সকল আদিবাসীকে আদিবাসী বলেই চিহ্নিত করতেন এবং সেইভাবেই ওদের অধিকার ইত্যাদির জন্যে বিবৃতি দিতেন, বক্তৃতা দিতেন। ২০০৭ সনের পর থেকে কথাটা নিয়ে আমাদের এখানে একটু তর্ক তুলছে কিছুসংখ্যক লোক। এদের মধ্যে পাহাড়ের সেটেলারদের আকুলি বিকুলি একটু বিশেষভাবে চোখে পড়ে। ২০০৭ সনের পর থেকে কেন এই তর্কটা শুরু হয়েছে? কারণ ২০০৭ সনে জাতিসংঘে ঐ ঘোষণাটা গৃহীত হয়েছে, UN Declaration on the Rights of Indigenous People, যেখানে আদিবাসীদের কিছু অধিকার ও সেগুলি রক্ষায় রাষ্ট্রসমূহের করণীয় সম্পর্কে নানা কথা রয়েছে। এখন আপনি যদি আমাদের এখানে কোন জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী বলে মেনে নেন তাইলে তো ওদের সেইসব অধিকারের প্রশ্ন চলে আসে- এটা এড়ানোর জন্যেই এই তর্কটা।

এইসব তর্কের দুইটা দিক বলি। একটা দিক ইন্টারেস্টিং দিক, আরেকটা দিক হচ্ছে কৌতুকের দিক।

ইন্টারেস্টিং দিকটা কী? ইন্টারেস্টিং দিক হচ্ছে যে কে আদিবাসী আর কে আদিবাসী নয় এটা কোন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের কোন বিশেষ সংস্থা কর্তৃক নির্ধারণের বিষয় নয়। কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, সেগুলি বৈশিষ্ট্য আছে এরকম যে কোন জনগোষ্ঠী যদি নিজেকে আদিবাসী মনে করে তাইলেই ওরা আদিবাসী। অর্থাৎ এই আদিবাসী কথাটার একটা সাবজেক্টিভ দিক আছে আর কিছু অবজেক্টিভ দিক আছে। একটু ভেঙে বলি।

জাতিসংঘের ঐ ঘোষণা আর তার আগের আইএলও (ILO)এর একটা কনভেনশন মিলে নির্ধারণ করা হয় কারা আদিবাসী আর কারা নয় তার বৈশিষ্ট্য। সেগুলি কী? সেগুলি হচ্ছে এরকম- যেসব জনগোষ্ঠী একটি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রটি সৃষ্টির আগে থেকেই রাষ্ট্রের কোন একটা ভৌগোলিক অংশে বসবাস করে আসছে এবং যাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নিজেদের বিচার ও প্রশাসনিক ধরনের একরকম ব্যবস্থা আছে যেগুলি সেই রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরুর সাথে মিলে না- এইগুলি হচ্ছে অবজেক্টিভ বৈশিষ্ট্যগুলি। আর সাবজেক্টিভ ব্যাপারটা হচ্ছে যে এইসব জনগোষ্ঠীর একরকম একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে যে ওরা ওদের এইসব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে চায়। এইসব বৈশিষ্ট্য থাকলে একটি জনগোষ্ঠী হয় আদিবাসী। আপনি মানেন কি না মানেন সে আপনার ইচ্ছা, তাতে কিছু যায় আসে না।

কৌতুকের দিকটা কী? কৌতুকের দিকটা হচ্ছে যে আমাদের এখানে একদল লোক খুব করে চীৎকার করে যে বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী বা বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই ইত্যাদি। প্রশ্ন করতে পারেন যে এখানে কৌতুকের কী আছে? বা এটাকে তো ভিন্নমত বললেই হয়। এটাকে আমি কৌতুক বলছি তার কারণ হচ্ছে যে একটি রাষ্ট্রে যারা সংখ্যাগুরু এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে তারা কখনো আদিবাসী হয় না। আদিবাসী কথার অর্থ আদিমতম অধিবাসী নয়। আদিবাসী কথাটা হচ্ছে সেইসব সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যাদের বেলায় উপরের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রযোজ্য হয়। সংখ্যাগুরুর বিপরীতে সংখ্যালঘু স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠীকে বুঝানোর জন্যে যে শব্দটা সেটাকে যদি সংখ্যাগুরুরাই দখল করতে চায় সেটা কৌতুক নয়?

দেখেন দুইটা শব্দ মিলে যখন তৃতীয় একটা শব্দ হয় তখন ঐ দুইটা মুল শব্দের আক্ষরিক অর্থ তৃতীয় শব্দটির উপর সবসময় আরোপ করা যায় না। যেমন গবেষণা। গবেষণার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর এর প্রায়োগিক অর্থ মিলিয়ে দেখেন। Indigenous শব্দটির বাংলা আদিবাসী করার ক্ষেত্রে আদি শব্দটি 'রাষ্ট্রের উৎপত্তির তুলনায় আদি' এইভাবে দেখতে পারেন, তাইলে কোন অসুবিধা হয় না।

আদিবাসী নিয়ে জাতিসংঘের ঐ ঘোষণার সময় এই কথাটা বিবেচনায় ছিল, indegenous মানে কি তবে ওরাই হবে যারা একটা জায়গায় একদম প্রথম থেকে সেটেলমেন্ট তৈরি করেছে? এই ধারনাটা ত্যাগ করা হয়েছে। তার কারণও আছে। অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী আছে যারা একটা এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেছে খুব বেশিদিন হয় না। ওরাও যেন আদিবাসী সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে সেইজন্যে এই আদিমতম বাসিন্দা ধারনাটা ত্যাগ করা হয়েছে। আপনি যদি আদিমতম বাসিন্দাকেই আদিবাসী বলেন তাইলে তো ইংরেজদেরকে কোলকাতার কন্টেক্সটে আদিবাসী বলতে হয়- কেননা ওরাই তো শহরটা পত্তন করেছে।

শুদ্ধ একটা শব্দের সংজ্ঞার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলাম লেখাটা। এটা কেবল আমাদের দেশে নয়, সারা দুনিয়ায় সর্বত্রই প্রযোজ্য। বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন হয়, পালন করতে চাইলে করেন, না চাইলে না করেন। মেহেরবানী করে লোক হাসাবেন না।

ইমতিয়াজ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ