প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মোনাজ হক | ০৬ নভেম্বর, ২০১৯
সমাজবিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের সমাজের ক্রমবিকাশ ও মানুষের সামাজিক উন্নতি নিয়ে কোনো গবেষণাধর্মী রচনা প্রকাশ করেন কি? করে থাকলে আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
বাংলাদেশ সরকার প্রচার করে দেশে মাথাপ্রতি আয় বেড়েছে গড়ে ২,০০০ ডলার বা তার চেয়েও বেশি, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মীরা মাসে ৭০০/৮০০ সৌদি রিয়াল = ১৮০- ২০০ ডলার আয় করার জন্যে পরিবার ছেড়ে একা মধ্যপ্রাচ্যে যায় কেনো? তাতে যে অর্থ তারা আয় করে তার প্রায় অর্ধেক সেখানে নিজের জন্যে ব্যয় করে ১০০ ডলার হয়তো দেশে পাঠায়। অর্থাৎ প্রতিটি কর্মক্ষম নারী দেশে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পাঠাচ্ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে দেশের গড় মাথাপ্রতি আয় ২০০০ ডলারের মধ্যেও তারা পড়ছেনা।
আসুন দেখি সামাজিকভাবে তারা কী হারাচ্ছে। প্রতিটি নারী তাদের সংসার ছেড়ে অনেকে আবার স্বামী সন্তান আত্মীয় স্বজন ছেড়ে বছরের পর বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে। বেশিরভাগ আরব দেশে আবার দাসী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখান থেকে কি লাভবান হচ্ছে? এছাড়াও তাদের সামাজিক মর্যাদাবোধ হারাতে হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সর্বোপরি মানুষ হিসেবে বাঙালি নারী এই পৃথিবীতে সভ্যতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সাধনায় কতটুকু সাফল্যমণ্ডিত হচ্ছে?
সরকার প্রচার করছে 'রেমিটেন্স' বাড়ছে, কার জন্যে বাড়ছে? সেই শ্রমিক নারী কি রেমিটেন্সের কোনো সুফল পাচ্ছে? বলা হয়, বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্জন হচ্ছে, কিন্তু কার জন্যে? সারা পৃথিবীতে ইদানীং বাংলাদেশকে 'রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রস্টিটিউট সাপ্লায়ার' হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এটা ১৬ কোটি জনগণেরই কি কোনো কল্যাণ বয়ে আনছে?
বঙ্গবন্ধুকে আমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে সম্মান দেওয়া শিখছি। একই সাথে আরবদেশের দাসী সাপ্লায়ার হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছি; সামাজিকভাবে তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমার এই প্রশ্ন সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে, কোনো রাজনীতিবিদদের কাছে নয়। রাজনীতিবিদরা সেই ১৫ বিলিয়ন ডলার ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। আবার বলছে দেশে নাকি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৮.২% কিন্তু কার জন্যে? সেই প্রবৃদ্ধির কি মানে হয়, যখন ৪০% জনগণ দারিদ্র্য সীমারেখা অতিক্রম করতে পারেনি, একই সাথে যখন খবর হয় বাংলাদেশে ধনীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি (১৭% হারে বাড়ছে)। এবার অর্থনীতিবিদদের কাছে প্রশ্ন- রাষ্ট্রের সকল সম্পদ উপরের ১০% মানুষের হাতে গিয়ে থাকলে পুরো রাষ্ট্র দেউলিয়া হতে আর কতটা সময় বাকি?
ব্যাংক থেকে লুটপাট হয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা। রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে (পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাংলাদেশের ফেডারেল রিজার্ভ চুরির ঘটনা সারাবিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে)। এছাড়াও দেশ থেকে এলসি খুলে পাচার হয়েছে ৭ লক্ষ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে। পুরোপুরি কলাপ্স হতে আর কতো সময় বাকি? সরকার হেফাজতি ধর্ষক আর জঙ্গিদের সাথে হাত মিলিয়েছে, সংসদে কোনো বিরোধী দল নেই, আছে কি কোনো সমাজ বিশ্লেষক দেশে অবশিষ্ট? রাজনীতিবিদদের কাছে কোনো উত্তর চাইনা।
যে ৫ লক্ষ শ্রমিক ও গৃহকর্মী মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে তাদেরকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাবে। তারা যে টাকা আয় করে দেশে ফিরছে তাতে নতুন করে আবার সমাজজীবন শুরু করতেও পারবেনা। কারণ জীবনের মূল্যবান সময়টা (১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স) তারা একাকীত্ব জীবনে আরবদের অসভ্যতা ও বর্বরতা মেনে নিয়ে মানবিক জীবনে পূর্ণ বিকশিত হতে পারবেনা। তারাই আবার আরবিদের মতন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। এই পর্যবেক্ষণগুলো শুধু আমার নিজের নয়, বেশ কিছু পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানীরাও ঠিক এভাবেই ব্যাখ্যা করেন।
মানুষ গড়ার জন্যে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা ও আদর্শ সবচেয়ে বেশি। যে যুবসমাজ জীবনের মূল্যবান সময় আরব দেশে কাটিয়ে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাবে তাদের কাছে একটা ভালো সমাজ গড়ার কথা স্বপ্নই থেকে যাবে। অন্যদিকে আবার যে বাঙালিরা ইমিগ্রেশন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রে বা ইউরোপে পরিবার সন্তানদেরকে নিয়ে বসবাস করছে তারা আর বাংলাদেশে ফিরে যাবেনা; যদিও তাদের সোসিয়ালাইজেশন আরবিদের চেয়ে অনেক উন্নত। কিন্তু তারা বাঙালি সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারছেনা। অর্থাৎ এই মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় পরিবেশ থেকে ফেরত মানুষগুলো আর দেশি লুটপাট বাহিনী ও হেফাজতিরা মিলেই আগামী 'ইসলামি বাংলাদেশ' গড়বে। তবে আশার কথা হলো, ইতিহাস তা স্বীকার করেনা, ফরাসি বিপ্লবের আগে এমনি একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো- শাসকশ্রেণি জনগণকে লুটেপুটে খাচ্ছিলো ধর্মীয় যাজক ও রাজা লুই-১৬ উপরের শ্রেণির বুর্জুয়াদেরকে নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে ব্যস্ত ছিলো ভার্সাই প্যালেসে, সেখানেই শুরু হয় পৃথিবীর সবচাইতে আলোচিত ফরাসি বিপ্লব, যেখানে রাজতন্ত্র বিলুপ্তি হয় এবং রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা করা হয় সেই ১৭৮৯ সালেই।
আমি আশাবাদী বাংলাদেশেও একদিন বিপ্লব আসবে যখন রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করা হবে। তা যদি না হয় তাহলে ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস মিথ্যা প্রমাণিত হবে বাংলাদেশে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য