আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

জর্ডানের নিরাপত্তাবিধি ও নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা

মাসকাওয়াথ আহসান  

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি প্রান্তিক শহরে একটি কর্মশালায় উপস্থাপিত 'নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা' বিষয়ক কিছু আচরণ বিধি নিয়ে একটি আলোচনা মূলধারার টিভি টকশো'তে পৌঁছেছে।

একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আচরণ বিধিগুলো বিশ্বজনীন সাংবাদিকতা নিরাপত্তা বিধি থেকে কপি-পেস্ট করেছেন; এটা বোঝা গেলো। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে নারীদের কীরকম নিরাপত্তা সচেতনতা রাখতে হবে; সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা বিবেচনা করে একটি লম্বা ফর্দ এই বিশ্বজনীন সাংবাদিকতা নিরাপত্তা বিধি। যেমন, জর্ডানে নারীদের ভেজা চুলে বাইরে যাওয়াকে সমালোচনার চোখে দেখা হয়। আবার সহিংস এলাকায় সাংবাদিকতা করতে গেলে 'আংটি' বা 'ব্রেসলেটে'র মতো পুড়ে যায় না এমন কিছু পরতে বলা হয়; যাতে সাংবাদিক অগ্নিদগ্ধ হলেও তাকে আইডেন্টিফাই করা যায়। বলিউডের পিপলি লাইভ ছবির একজন পুরুষ সাংবাদিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলে; দর্শক তার হাতের ব্রেসলেট দেখে চিনতে পারে।

বাংলাদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মফস্বলের নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ছোট ফর্দ উপস্থাপন করেছেন। উনি তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক চিন্তার আলোকে প্রান্তিক সাংস্কৃতিক বাস্তবতার অভিযোজন করেছেন; তা বাংলাদেশের নগর-সংস্কৃতির চিন্তার আলোকে নগর বাস্তবতায় বসবাসকারী সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা শিক্ষকদের কাছে উদ্ভট মনে হয়েছে।

কিন্তু গোড়ায় একটি মিল ঐ মফস্বলের সাংবাদিকতা শিক্ষকের সঙ্গে টিভি টকশো-র সাংবাদিক-সাংবাদিকতা শিক্ষকের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়; সেটা হচ্ছে অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভুল করা।

মফস্বলের পুরুষ শিক্ষক ভদ্রলোকের উচিত ছিলো; তার বিভাগের নারী শিক্ষক ও এলাকার নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রান্তিক নারী সাংবাদিকের নিরাপত্তা পরিস্থিতিটি জেনে নেয়া। তাহলে তার ভ্রান্তির জায়গাগুলো কর্মশালায় নিরাপত্তা আচরণবিধি প্রণয়নের আগেই ঠিক করা যেতো। এতে তাকে এতো তিক্ত সমালোচনার মাঝে পড়তে হতো না।

আর টকশোর সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা শিক্ষক যদি সাংবাদিকতা আচরণবিধি থেকে আর প্রাত্যহিক অনুশীলন থেকে কীভাবে প্রশ্ন করতে হয় তা শিখতেন; তাহলে আলোচনাটা একটি ইতিবাচক গন্তব্যে পৌঁছাতো। একজন 'অভিযুক্ত' ব্যক্তিকে টিভি স্ক্রিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা আর পুলিশ স্টেশনে বা মাতবরের বাড়িতে গাছে বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে বিরাট পার্থক্য আছে।

মফস্বলের শিক্ষকের পশ্চাৎপদ চিন্তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে টকশোতে তাকে ধমকে ধমকে প্রশ্ন করে নিজেদের পশ্চাৎপদ সাংস্কৃতিক মনন- মানচিত্র উন্মোচনের তো মানে হয় না। ফলাফল একই দাঁড়ায়।

মফস্বলের শিক্ষক নিরাপত্তা আচরণবিধি লেখার সময় নিজেকে সবজান্তা ভেবেছেন; তাকে টকশোতে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনজন নারী ও একজন পুরুষ নিজেদের সবজান্তা ভাবছিলেন। অথচ আমরা সবাই জীবনের স্কুলে ছাত্র।

যে শিক্ষক একটি অগ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা বিধি প্রণয়ন করেছে; তার নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যে কোন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে তা জীবন বাস্তবতা থেকে। টকশোর নারী ও পুরুষের 'ঐ শিক্ষক'-এর ব্যাপারে যে দৃষ্টিভঙ্গি; তা-ও গড়ে উঠেছে তাদের জীবন বাস্তবতা থেকে। এই দুটি দৃষ্টিভঙ্গিই সমকালীন বিশ্বে অচল। সভ্য সমাজে কেউ সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ না করে, কপি-পেস্ট করে জর্ডানের নিরাপত্তাবিধি বাংলাদেশে জারি করে না। আবার সভ্য সমাজের মিডিয়ার আলোচকরা, আমরা বিরাট বিরাট সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক, তুমি বাপু কিচ্ছুটি জানো না বলে ধমকে আর জিভের চাবুকে চাবকে পিঠের ছাল চামড়া তুলে নেয় না।

আলোচনা বা সংলাপ ব্যাপারটা শেখার বিষয়। জীবনের প্রাত্যহিক অনুশীলনে শিষ্টাচার ও যৌক্তিক শব্দচয়নকে রাখতে হয়। একটু টেকাটুকা আর দুটো সার্টিফিকেট হলেই অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে লুজটক করা দক্ষিণ এশীয় গ্রামীণ সংস্কৃতির উপজাত। না রইলো স্নিগ্ধ গ্রাম; না হলো সভ্য নগরী। লোকজ নাগরিক দম্ভ আর গ্রামীণ মাতবরি দম্ভের আদিম শোরগোলকে টিভি টকশো বলা যায় না কিছুতেই।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ