প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শওগাত আলী সাগর | ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল রাজাকারদের তালিকা করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা- রাজাকার সবার মুখেই কথা তুলে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষগুলো কথা বলছে- সীমাহীন বেদনায়, অপমানে। যে রাজনৈতিক দলটি স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের হাতে এভাবে কোনো মুক্তিযোদ্ধা অপমানিত হবে- এটি তারা মানতে পারছেন না। স্বাধীনতা বিরোধীরাও এ নিয়ে সরব- মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করার এমন একটি মোক্ষম সুযোগ তারা হাতছাড়া করবে কেন?
অস্বীকার করার উপায় নেই সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করার সুযোগ করে দিয়েছে- তাও আবার বিজয় দিবসে।
২.
রাজাকারদের তালিকা প্রণয়ন এবং প্রকাশ অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। সেই তালিকাটি যখন সরকার তথা রাষ্ট্র করে তখন আরও বেশি নিবিড় মনোযোগ দরকার হয়ে পড়ে। এটি তো আর কোনো সংগঠনের বিষয় নয়- যে পাত্তা না দিলেই হলো। এটি একটি রাষ্ট্রীয় দলিল এবং আইনি দলিল। এই রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রণয়ন এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে যতোটা গুরুত্ব দেয়ার দরকার, তার কোনোটাই যে হয় নি, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার সুযোগ নাই। সম্ভবত মন্ত্রণালয় এই তালিকার গুরুত্বটাই বুঝে উঠতে পারেনি।
৩.
রাজাকারদের তালিকা হবে- এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্থির হয়েছিলো। কী প্রক্রিয়ায় তালিকা হবে, কারা তথ্য সংগ্রহ করবেন, কারা তথ্যের সত্যতা যাচাই বাছাই করবেন- সেগুলো কি নীতিনির্ধারণী বৈঠকে আলোচিত হয়নি? মন্ত্রণালয় কি এগুলো নিয়ে ভাবেনি?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেছেন- এই তালিকা পাকিস্তানিদের করা। ৪৮ বছর আগের পাকিস্তানিদের করা একটি তালিকা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া সরকার যাচাই বাছাই না করেই নিজেদের বলে চালিয়ে দিতে পারে? না কি দেয়া উচিৎ? পাকিস্তানিরা তো বঙ্গবন্ধুকেও ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলতো। তাদের নথিপত্রে এখনো হয় তো বা তাঁকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হিসেবেই উল্লেখ করা আছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কি তা হলে বঙ্গবন্ধুকেও ’রাষ্ট্রদ্রোহী’ মনে করেন?
৪.
অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ‘রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ’ তো সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কী তৈরি করলো মন্ত্রী কি সেটি দেখার প্রয়োজন বোধ করবেন না?
তাছাড়া খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধ, সরকারের ভাবাদর্শের বিরোধী ব্যক্তিরা দায়িত্বে থাকে কীভাবে? মন্ত্রণালয়ের আমলাদের দিকে আঙুল তুলে একজন অযোগ্য মন্ত্রীকে দায়মুক্তি দেয়ার চেষ্টাটা মোটেও ভালো কিছু নয়।
৫.
রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের জন্য সরকারের নিশ্চয়ই একটি বাজেট ছিলো। সেই বাজেটটা কতো টাকার ছিলো? কীভাবে, কোন কোন খাতে সেই টাকা ব্যয় হয়েছে- তার একটা হিসাব তো আমরা চাইতেই পারি। না কি?
৬.
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীকে ‘শহীদ’ বললে আমাদের অনুভূতি যেমন আহত হয়, বিজয় দিবসে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘রাজাকার’ বানিয়ে দিলে আমাদের অনুভূতি একইরকম আহত হওয়ার কথা। আমি বলবো বরং বেশি আহত হওয়ার কথা। যুদ্ধাপরাধীকে ‘শহীদ’ বানাতে চেয়েছে তাদের পক্ষের অপ্রচলিত একটি পত্রিকা। আর বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানিয়ে দিচ্ছে স্বয়ং রাষ্ট্র- তার আইনি দলিলে।
৭.
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ ঘটনা, এটি দেশের জন্ম-উপাখ্যান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কোনো অযোগ্য লোকের হাতে থাকতে পারে না। এই মন্ত্রণালয়েও অযোগ্য লোকদের চারণভূমি হয়ে ওঠতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে একটি গবেষণাধর্মী মন্ত্রণালয় হিসেবে গড়ে তোলা হউক। অযোগ্য লোকগুলোকে সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে দেয়া হউক।
সবার আগে বিতর্ক তৈরি করা এই তালিকাটি সংশোধনের জন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হউক।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য