আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মুজিব বর্ষ আপনার যে কাজের অপেক্ষায়

মাসকাওয়াথ আহসান  

বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবির 'ভূতের রাজা দিল বর' গানের আলোক সম্পাতের কাজ দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম। উনার চলচ্চিত্রের যে শক্তি তার সঙ্গে এই আলোর কাজ ছিলো বেমানান। কিন্তু আমাদের শিশুমনকে তা যথেষ্ট দোলা দিয়েছিলো। আমাদের জন্য ঐ আলোক সম্পাতই যথেষ্ট ছিলো।

ভারতীয় উপমহাদেশের সাহিত্য-চিত্রকলা-মঞ্চনাটকের তুলনায় চলচ্চিত্র টেকনিকের দিক থেকে কম বিকশিত হবার কারণ; এই উপমহাদেশের দেশগুলোতে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে চলচ্চিত্র আর এর টেকনিক্যাল দিকগুলো শেখার সুযোগ বেশ কম। তারপরেও অনন্য সব গল্প, অভিনয় দক্ষতা আর নির্দেশকের প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়; বাস্তবতাবাদি চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক উজ্জ্বল উদাহরণ রয়ে গেছে।

নব্বই দশকের পর থেকেই আকাশ সংস্কৃতির বিকাশে ইলেকট্রনিক ও ফিল্ম মিডিয়ার বিশ্বজানালা খুলে যাওয়ায়; দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় টিভি ও চলচ্চিত্র মিডিয়া এক অসম প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে যায়। হলিউডের চলচ্চিত্রের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্রের প্রতিযোগিতা অনেকটা এমেরিকা বনাম দক্ষিণ এশিয়ার সশস্ত্র যুদ্ধের মতো অসম ব্যাপার যেন।

আর ইন্টারনেট আসার পর তো কথাই নেই। আমাদের বন্ধুরা এমনকি আমি নিজেও ধীরে ধীরে ইংরেজি টেলি সিরিয়াল আর হলিউডের ফিল্মের মোহে বুঁদ হয়ে গিয়েছি। এটা খুবই স্বাভাবিক।

এরমানে কিন্তু এই নয় যে বাংলাদেশে ভালো টেলিভিশন নাটক কিংবা চলচ্চিত্র তৈরি হয় না। অভিনয়ের কথা ভাবলেও মোশাররফ করিমের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে। তার জনপ্রিয় সংলাপ 'ফইন্নির ঘরের ফইন্নি'-র মাঝে যে দিগন্তবিস্তারী রসবোধ; এর তো কোন তুলনা হয় না।

ব্ল্যাক লেভেল যেমন একটা ব্র্যান্ড নেম; কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় খুশি জলের যে স্বাদ তা-ও কিন্তু অতুলনীয়। শিল্প-সাহিত্য-চিত্রকলা-নাটক-চলচ্চিত্র এগুলোর স্বাদও কতকটা তেমনই। সে কারণে সব সময় একটা বৈশ্বিক মানদণ্ড ঠিক করে নিয়ে দেশের জিনিসপত্রের মূল্যায়ন বড্ড এক রৈখিক হয়ে যায়।

আপনি যেহেতু বিশ্বের নানা জায়গার মনোমুগ্ধকর লেজার শো'র জাদুকরি আলোকসম্পাত ও এর কাজ দেখে মুগ্ধ; কাজেই আমাদের দেশের কেউ একটা লেজার শো করলে তা নিয়ে ছ্যা ছ্যা করবেন; এ বড্ড উন্নাসিকতা হয়ে যায়।

হলিউড থেকে কোন আলোক বিশেষজ্ঞকে এনে এই লেজার শো করে কোন লাভ নেই। কিংবা বলিউড থেকে কোন নির্দেশক এনে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোরও মানে হয় না। কাজগুলো স্থানীয় শিল্পীকেই করতে হবে। তবে স্থানীয় কাজের সমালোচনা হওয়া ভালো; এটা স্থানীয় শিল্পীদের মাঝে একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। এতে তাদের কাজের উন্নতি হয়। কিন্তু সমালোচনাটা খুব তিক্ত না হওয়াটাই শ্রেয়। কারণ ধমকে-চাবকে ভালো শিল্প হয় না। ভালো কাজটা বুঝিয়ে করিয়ে নিতে হয়।

আর সরকারি সব অনুষ্ঠান সম্ভব স্বল্প বাজেটে করা হয়। উন্নয়নশীল দেশ তো; তাই কোন আয়োজনেই এতো বেশি বাজেট রাখা সম্ভব নয়; যা দৃষ্টিকটু লাগে। এটা ঠিক এদেশে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূল্যে 'বালিশ' কেনা হয়। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানের বাজেট পৃথিবীর প্রায় সর্বনিম্নই থাকে। পৃথিবীর সব দেশেই সরকারি অনুষ্ঠানের বাজেট কম থাকে। এটাও ঠিক আমাদের সরকারি কর্মচারীদের একটি অংশ দুর্নীতি করে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশই দুর্নীতি করে না।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পর্কে পাবলিক পারসেপশান ভালো নয় যৌক্তিক কারণেই। কিন্তু সেই পারসেপশানের কারণে পদে পদে তাদের অপমান করলে; প্রায় নব্বই শতাংশ কর্মচারী যারা আন্তরিকভাবে কাজগুলো করেন; তাদের প্রতি অবিচার করা হয়।

মুজিব বর্ষ আসলে জাতির জন্য 'সততা'-র ও 'সাদাসিধে জীবন'-এর অনুপ্রেরণা। এই বর্ষ উদযাপনে 'চোরের খনি' ও 'চাটার দল' মুক্ত জাতি গঠনই প্রধান অঙ্গীকার। কাজেই এ বর্ষ উদযাপনে জাঁকজমকের চেয়ে মুজিব দর্শন নিয়ে আলোচনা আর তা থেকে কিছু শেখাই আসল উদ্দেশ্য।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন সরকারের ভুল পদক্ষেপের সমালোচনা করা; সচেতন নাগরিক সমাজের কর্তব্য। কিন্তু জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের ভ্রান্তিই সেখানে অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি।

আর মুজিব বর্ষে সরকারি আয়োজন বা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজনই বা এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন! আপনি যদি লেখক-শিল্পী-কবি-চিত্রকর-নাট্য নির্মাতা-চলচ্চিত্রকার বা 'লেজার শো' বিশেষজ্ঞ হন; মুজিবকে নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আপনি কিছু করুন। যে মানুষটা আপনাকে মানচিত্র-পতাকা জিতে দিয়েছেন; তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে একটা সৃজনশীল কাজ করা; শিল্পী হিসেবে আপনার কর্তব্য। আমরা আপনার সে সৃজনশীল কাজের জন্য অপেক্ষা করছি।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ