আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সাঈদীর মত এত সময় পাননি আযহারী

আরিফ জেবতিক  

আশির দশকের শুরুতে জামায়াত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বাজারে আনে একদম 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ হাক্কানি আলেম' হিসেবে। দেশব্যাপী সাঈদীর তাফসিরুল কোরআন মাহফিলগুলো আয়োজিত হতো 'ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ' বা এই ধরনের একাধিক জামায়াতি ছদ্ম সংগঠনের ব্যানারে।

সাঈদীকে আলোচনায় আনার জন্য জামায়াত ব্যাপক বিনিয়োগ করে। সবচাইতে বড় মাঠ, সবচাইতে রঙচঙে শামিয়ানা, দিনের পর দিন মাইকিং-পোস্টার, দলীয় লোকজনকে দিয়ে মাঠ ভরিয়ে ফেলা-এভাবে প্রথমে সাঈদীকে সমসাময়িক অন্য আলেমদের তুলনায় 'বড় আলেম' হিসেবে প্রচার করা শুরু করে জামায়াত। সাঈদীর সেই প্রতিভা ছিল যে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সারা বাংলাদেশে হইচই পড়ে যায়। সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট হাজার হাজারে, লাখে লাখে বিক্রি হতে থাকে। সাঈদী ওয়াজ করে একচেটিয়া জনপ্রিয়তা দখল করার পনের বছর পরে হঠাৎ একদিন আবিস্কৃত হয় যে সাঈদী শুরু থেকেই জামায়াতের সদস্য এবং সিনিয়র নেতা। সাঈদী সরাসরি নির্বাচনে আসে এবং এমপি নির্বাচিত হয়।

মিজানুর রহমান আযহারীর বিষয়টা সাঈদীর সেই ঘটনারই হুবহু কপি। বছর কয়েক আগে আযহারীকে প্লেস করা হয় সাঈদীর মতোই একদম দল নিরপেক্ষ ইসলামী বক্তা হিসেবে। সময়ের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে আযহারী যে ওয়াজ করেন, সেটি জনপ্রিয় হতে বাধ্য।

এই শতাব্দীর হাওয়া হচ্ছে 'মডারেট ইসলাম'। বাঙালি মুসলিম এখন ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে। হিন্দি সিনেমা বুঁদ হয়ে দেখে, কথার খেলাপ করে, আমানতের খেয়ানত করে, অন্যের মেয়েকে দেখলে পেছনে শিস দেয়-আবার নিজের বউকেও কিছুটা পর্দা-কিছুটা না পর্দার মধ্যে রেখে এই 'মডারেট ইসলাম' জিনিসটা চালু করেছে এরা।

আযহারী ফোকাস করেছেন এই মধ্যপন্থার ইসলামকে। একই ভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তার স্মার্ট বাচনভঙ্গি, সুন্দর চেহারা, রুচিশীল পোশাকআশাক, সন্দর শব্দচয়ন, সাথে শুদ্ধ ইংরেজির ব্যবহার তাকে একজন স্মার্ট ও আধুনিক হুজুর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরকম হুজুরই বাঙালি মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষা। সুতরাং সারাদেশে জামায়াতিদের নিজস্ব নেটওয়ার্কে আবার সেই একই ধরনের 'ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থা ' জাতীয় ছদ্মবেশী সংগঠন, নিজস্ব লোকবল সাপ্লাই, ঝাকানাকা আয়োজন, হুলস্থূল প্রচার এর সাপোর্টে আযহারী এখন বাকি ওয়াজিয়ানদেরকে অনেক পিছনে ফেলে একেবারে তুঙ্গে অবস্থান করছেন। তার মাহফিলে থানার বড় দারোগা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী পর্যন্ত গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। এখন ক্যাসেটের যুগ নেই, তবে আমার ধারনা তার ইউটিউব ওয়াজ এখন বাংলাদেশের সর্বাধিক দর্শককে আকর্ষণ করছে এবং তার ধারেকাছেও কেউ নেই।

মুশকিল হচ্ছে জামায়াত সাঈদীর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নিতে পারলেও আযহারীর ক্ষেত্রে সেই ধৈর্য রাখার উপায় তাদের নেই। গত এক দশকের প্রতিকূল পরিবেশে এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটিকে দ্রুতই কোনো না কোনো ভাবে ফিরে আসতে হবে। তাই আযহারীকে তারা সাঈদীর সমান সময় দিতে পারে নি। এজন্যই আযহারীকে ওয়াজে বলতে হয়েছে, 'সিংহের (মানে সাঈদীর) বাচ্চারা সব সিংহই হবে এবং সময়মতো সিংহের গর্জনে সবকিছু কেঁপে কেঁপে উঠবে।' আবার বলতে হয়েছে, 'ঘরে ঘরে সাঈদী দাও।' বলতে হয়েছে কোরানের আলোচনা করার জন্যই সাঈদীকে জেলে পুরা হয়েছে।

আযহারী সময়ের আগে পেকে যাওয়ায় সেটা ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর রাডারে ধরা পড়েছে। তিনি বলেছেন, 'আযহারী-মাযহারীরা জামায়াতি।'

ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর এই উক্তি গুরুত্বপূর্ণ। এই উক্তির কারণে এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে স্টেজে বসে মাথা দুলানোর আগে খানিকটা চিন্তা করবেন। থানার বড় দারোগা এখন আযহারীর হাতে চুম্মা দেয়ার আগে চিন্তায় পড়বেন। একই ভাবে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক হুজুররা তাদের ওয়াজ ব্যবসায় ধ্বস পড়ার কারণে বেশ কিছু জায়গায় আযহারীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছেন এবং কোথাও কোথাও প্রশাসনের সহায়তায় মাহফিল বন্ধও করে দিতে পেরেছেন। এই দলটা এখন আরেকটু জোর পাবে।

সব মিলিয়ে আযহারী এখন একটু সমস্যায়ই পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে। ওয়াজ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার একটি ইন্ডাস্ট্রি, সাধারণ হুজুররা লাখ লাখ টাকা ইনকাম করেন। স্টার হুজুররা সিজনে মাসে কোটি টাকার উপরে আয় করে থাকেন। এই আয় ট্যাক্স ফ্রি। সুতরাং এখানে ঝুঁকি তৈরি হলে আযহারীকে আবারও একটু ধীরে চলো নীতিতে এগুতে হবে। তাই এখন তাকে বলতে হচ্ছে যে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। আমার ধারনা এই ওয়াজ সিজনে (মানে মার্চ মাস পর্যন্ত) তিনি আর সাঈদীকে সিংহ কিংবা বিলাই কিছুই আর বলবেন না। একদম 'মধ্যপন্থার ইসলাম' নিয়ে ওয়াজ করে যাবেন। অন্যদিকে তার দলের লোকজন হয়তো তাকে দিয়ে আবার 'সিংহ মামার ওয়াজ' করানোর চাপ দিতে পারে।

এই দ্বৈরথে আযহারীর ওয়াজের গতিপথ টাকার দিকে যায় নাকি রাজনীতির দিকে যায়, সেটাই দেখার বিষয়।

 

আরিফ জেবতিক, ব্লগার ও সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ