Advertise
আব্দুল করিম কিম | ২২ এপ্রিল, ২০২০
সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করেন। আমার নিজের দুই সন্তান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর গত ২৪ মার্চ থেকে দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থা আগামী আরও কতদিন থাকবে, কেউ বলতে পারছে না।
দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পর থেকে জরুরি সেবার সাথে যুক্ত ব্যক্তি ব্যতিত অন্য সকলের কাজকর্ম বন্ধ। উন্নত দেশে এই পরিস্থিতিতে আয়-রোজগারহীন ক্ষতিগ্রস্ত সকল মানুষকে ভাতা প্রদান সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো আমরা দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষকেই সরকারিভাবে সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সহায়তার আওতায় আনতে পারিনি। বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী সুষমভাবে বণ্টন করা যাচ্ছে না। ত্রাণচোরদের অপতৎপরতার কাছে সরকারকে অসহায় হতে দেখা যাচ্ছে। করোনাযুদ্ধের মূল সৈনিক চিকিৎসক ও সেবা সহায়তাকারীদের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে হয়েছে দুর্নীতি।
এ পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার করোনাকালে দেশের আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় ৭২,৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজের আওতায় রয়েছে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ, বয়স্ক/বিধবা ভাতা কর্মসূচি বাড়ানো ইত্যাদি। কিন্তু শিক্ষাখাতে কী হবে, তা এখনো পরিষ্কারভাবে জানানো হয়নি। এমতাবস্থায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য করণীয় ঠিক করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের পরিবারকে শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অভিভাবকদের কাছে তাগাদা আসা শুরু হয়েছে। করোনাকালের মানসিক ও আর্থিক চাপের মধ্যে এই নোটিশ পেয়ে অভিভাবকেরা দু'চোখে অন্ধকার দেখছেন। আবার শিক্ষার্থীদের বেতন-ভাতা জমা না হলে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে অনেক লাভ পকেটে ঢুকিয়েছে। এখন সেই লাভ থেকে প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরতদের বেতন-ভাতা প্রদান করুক। হয়তো কিছু প্রতিষ্ঠান তা করবে কিন্তু কেউ যদি না করে?
অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতনের টাকা দিয়ে টেনেটুনে চলে; এই সব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন না পেলে কী করবে? সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন সরকারের এক সিদ্ধান্তে মওকুফ করে দেয়া যাবে কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের কী হবে? এরাতো ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারবে না।
এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনাকাল অতীতের মত কেবল ত্রাণ বিতরণের দুর্যোগ নয়। অতীতে বাংলাদেশ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত জয় করেছে, সাইক্লোন ও টর্নেডোর ক্ষতি মোকাবেলা করেছে কারণ তা একসাথে সমগ্র দেশকে অচল করেনি। সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে অসহায় করেনি। এবারের বিপদ কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ।
একদিকে মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আয়-রোজগার বন্ধ। একদিকে দেশে-বিদেশে থাকা প্রিয়জনদের মৃত্যু সংবাদ, অন্যদিকে এমন দুঃসময়ে অতীতের মত প্রবাসী স্বজনদের পক্ষ থেকে সহায়তা পাওয়ার অনিশ্চয়তা। অপ্রয়োজনীয় অনেক খরচ কমেছে কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা ব্যতিত অন্যান্য অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা পাওয়া শুধু কঠিন নয়, ব্যয়বহুল হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সবকিছু মিলিয়ে দুষ্কাল আসছে। বাংলা নববর্ষের দিনে আইএমএফ বলেছে দুর্ভিক্ষের কথা। দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে খুব বেশি দেশের অভিজ্ঞতা নেই। আফ্রিকার কিছু দেশ আর বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবারের অবস্থা আরও করুণ হতে পারে। সেই দুষ্কাল উত্তরণে সুদূর প্রসারী পদক্ষেপ মিতে হবে। যা কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের মাধ্যমে নেয়া সম্ভব। দুর্নীতিবাজ, অথর্ব ও অদূরদর্শী ব্যক্তিদের সরকারের নীতিনির্ধারণী কাজ থেকে দূরে রাখা হোক। নির্লোভ দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের নিয়ে সংকটকালীন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হোক। প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অভিজ্ঞ আমলাদের সরকারে যুক্ত করা হোক। অনেক হয়েছে; এবার আশার পথ দেখতে চাই।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য