প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এখলাসুর রহমান | ১৩ মে, ২০২০
২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। এর এক মাস পরে ৮ এপ্রিল সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮১ জনে। এবার দুই মাসের ব্যবধানে ৮ মে পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩ হাজার ১৩৪ জনে৷ এভাবে ৯, ১০, ১১ প্রতিদিনই বেড়ে চলছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা৷ এই যে ক্রমশ করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তার উপর আবার লকডাউন খুলে দেয়া৷ গণপরিবহন, শপিং মল চালু করে দেয়া৷ হাটবাজার চালু করে দেয়া এর পরিণতি কী? করোনা হয়ে একের পর এক মারা যাচ্ছে সাংবাদিক,চিকিৎসক,নার্স সহ সাধারণ মানুষ৷ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সাংবাদিক আসলাম রহমান, হুমায়ুন কবির খোকন, মাহমুদুল হাকিম অপু৷ তারা কেউই যথাযথ চিকিৎসা পায়নি বলেই অভিযোগ রয়েছে।এছাড়াও আরও বহুসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীর করোনা শনাক্ত হয়েছে।যাদের এসব মৃত্যুর সংবাদ জীবিত মানুষদের জানানোর কথা৷ মানুষকে সচেতন করার কথা তারা নিজেরাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে৷ যারা চিকিৎসা করে ও সেবা দিয়ে করোনা রোগীদের বাঁচাবে সেসব চিকিৎসক ও নার্সরাও ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে৷
বিজ্ঞাপন
মাস্ক পরিধান কর, নয়ত কারাগারে যাও। ১৯১৮ সালের শেষের দিকে স্প্যানিশ ফ্লু নামের ভয়ঙ্কর একটি ভাইরাস সারা পৃথিবীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। প্রাণঘাতী স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছিল পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ৷ অনেকের ধারণা মৃত্যুর সংখ্যা তার দ্বিগুণ ১০ কোটি ছিল। ভারতবর্ষেই মারা গিয়েছিল আনুমানিক ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। ১৯২০ অবধি ৫০ কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস। মহামারীটি করোনার মতই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখনও মাস্ক পরিধানের নিয়ম চালু হয়। মাস্ক না পরলে আমেরিকায় শাস্তি হিসাবে কারাবাসের শাস্তির বিধান পর্যন্ত করা হয়েছিল।করোনা হতে রেহাই পেতেও মাস্ক পরছে মানুষ৷ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব তথা লকডাউন৷লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব অমান্য করলে ১৯১৮ সালের আমেরিকার মত ২০২০ সালের বাংলাদেশ কেন কঠোর হতে পারলোনা? হতে পারলে কি এই মৃত্যুর মিছিল রোধ করা যেতোনা?
সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টিতে পুলিশ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হল৷ জনসেবক দাবী করা রাজনৈতিক দলগুলো কী ভূমিকা রাখলো কিছু মাস্ক ও ত্রাণ বিতরণের ফটো সেশন ছাড়া৷ কী ভূমিকা রাখলো এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান,সাংসদ ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ? পুলিশ সেনাবাহিনীর সাথে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে কি পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারতোনা? বাংলাদেশের লকডাউনে কি করোনা সংক্রমণ এতটুকু কমলো? লকডাউনে কোন দেশ সুফল পেলো কোন দেশ পেলোনা? ভারতের বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন৷ তারা বলছেন,ভারতে লকডাউন ও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং ঠিকঠাকমত পালন হয়নি । এইমস এর ডিরেক্টর রনদীপ গুলেরিয়া বলেন, 'চীন বা ইতালি সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংকে যেভাবে বজায় রেখে চলেছিল, ভারতে তা করা হয়নি। তাই একমাস লকডাউন করে যে সুফল পাচ্ছে ওই দেশগুলি, ভারত তা পাচ্ছে না।আরও ভয়ের কথা শোনালেন রণদীপ গুলেরিয়া।তাঁর আশঙ্কা, লকডাউন করে তেমন কোন সুফল ঘরে তুলতে পারেনি ভারত।এখন যা সংক্রমণ ঘটছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমণ হবে জুন ও জুলাই মাসে।লকডাউন দিয়েও করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷
বাংলাদেশেও কি ভারতের মত সংক্রমণ বাড়তে চললোনা? কী বলেন এদেশের বিশেষজ্ঞরা? আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে৷ ১০ মে মারা গেলো ১৪ জন৷ আক্রান্ত হল ৮৮৭ জন৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৫৭ জন, মোট মৃত্যু ২২৮ জন৷ বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লক্ষ ১৭ হাজার, মোট মৃত্যু ২ লক্ষ ৮০ হাজার৷ এই মৃত্যুর মিছিল রোধে কি ব্যবস্থা নিলো বাংলাদেশ? এদেশে কি সংক্রমণ রোধে করোনা ভেকসিন আসল? নাকি রোগী বাড়বে ওষুধ বিক্রি হবে ব্যবসা করবে ওষুধ কোম্পানি এই অবস্থা চলবে? মহামারি করোনাভাইরাস চিকিৎসায় বেশ কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ 'রেমডেসিভির'। ইতোমধ্যেই এই ওষুধটির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ধারাবাহিকতায় হাঁটছে বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে দেশের ছয় ওষুধ কোম্পানিকে রেমডেসিভির উৎপাদনের অনুমোদনও দিল৷ এবছরের ২০ মে’র মধ্যে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধ রেমডেসিভির ব্যবহার শুরু হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর৷ একটি ইনজেকশনের দাম পড়বে ৫০০০ টাকা৷ প্রতি করোনা রোগীর ১০/১১ টি ইনজেকশন দিতে হবে শোনা যাচ্ছে৷ ওষুধটি নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্য চলবে আর রোগী বাড়বে বাংলাদেশ কি এমন অবস্থার দিকে যাচ্ছেনা? যে রোগের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশ নামাতে হয় সে রোগের ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব কেন সরকার নিতে পারলোনা?
বিজ্ঞাপন
করোনা চিকিৎসার ওষুধ কোম্পানির দায়িত্বে না দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কি দেয়া যেতোনা? নাকি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এ দায়িত্ব নিলোনা? সরকারের উচিত করোনার ওষুধ হাসপাতালে সংরক্ষণ করা৷ যাতে করোনা রোগী তাৎক্ষণিকভাবে তা পেতে পারে৷স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের উচিত এজন্য বিশেষ ফান্ড করা৷ এটি করলে আর কত টাকা বরাদ্দ লাগবে? করোনা নিয়ে সরকারি বেসরকারি বরাদ্দতো আর কম হলোনা৷ এসব বরাদ্দ হতে কি রেমডেসিভি রাখা সম্ভব নয়? না হলে কি বরাদ্দ আরও বাড়ানো যেতে পারেনা? এমনটি না করলে অনেক করোনা রোগী বিনাচিকিৎসায় মারা যাবে৷ বিনা ওষুধে মারা যাবে৷হাটবাজারে ওষুধগুলো ছড়িয়ে পড়লে এর অপপ্রয়োগও হতে পারে৷ যেখানে চিকিৎসা সেখানেই ওষুধ এমনটিই হওয়া উচিত নয় কি? সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তা ভেবে দেখবে কি? প্রয়োজনে বিত্তবানদের সহযোগিতা ও গণতহবিল করে হলেও এই ওষুধটি সরকারের দায়িত্বে নেয়া উচিত৷ দেশের মানুষ এমনটিই প্রত্যাশা করছে৷
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য