আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

টাস্কফোর্স কমিটি কি পারবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে?

এখলাসুর রহমান  

সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস কি সত্যিই বন্ধ হচ্ছে? নতুন নির্দেশনায় কী রয়েছে? সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের বেসরকারি হাসপাতাল বা চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করাসহ ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটি। নির্দেশনাগুলো হলো:
১. অফিস সময়ে সরকারি হাসপাতালের কোন চিকিৎসক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে পারবে না। কোন কারণে কর্মরত অবস্থায় থাকলে টাস্কফোর্স ও সংশ্লিষ্টদের অবগত করতে হবে।
২. হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টার/ল্যাব/ক্লিনিকগুলিতে লাইসেন্স নিবন্ধন নম্বর স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
৩. টাস্কফোর্স কর্তৃক সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন/অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
৪. ১৬ নভেম্বরের মধ্যে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এই ৪ নির্দেশনায় এদেশের বিশৃঙ্খল ও গণহয়রানীময় স্বাস্থ্যখাত কি সেবামূলক শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে পারবে? কেন এত এত বেসরকারি হাসপাতাল? কেন এত এত প্রাইভেট ক্লিনিক ও চেম্বার? জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে চিকিৎসকরা কেন জনগণেরই হয়রানির কারণ হচ্ছে? কী ঘটছে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে? রাজধানীর আলোচিত মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড ডি-অ্যাডিকটেড হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে ১৬ মাসে ১০ লাখেরও বেশি টাকা কমিশন নিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন।সম্প্রতি তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। শুধু কি এই ডা.আব্দুল্লাহ মামুন? দেশের অধিকাংশ চিকিৎসকই এসব কমিশন বাণিজ্যে জড়িত। তারা নামকাওয়াস্তে সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। ডাক্তার মামুন গ্রেপ্তারের পর চিকিৎসক ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করে আরও বিপাকে ফেলল রোগীদের। আসলে যত ভোগান্তি সব সাধারণ রোগীদের। অসাধারণ ও টাকাওয়ালারা ছুটে যান অভিজাত বেসরকারি হাসপাতালে।

সরকারি চিকিৎসকরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কমিশন ভিত্তিতে রোগী পাঠান। টাস্কফোর্স কমিটি কি এসব বন্ধ করতে পারবে? টেস্টের জন্য কেন রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে হয়? কেন সরকারি হাসপাতালে এসব টেস্টের সক্ষমতা সৃষ্টি করা হয় না? বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২০১৯ সালে ফিস্টুলার লেজার পদ্ধতিতে অপারেশন শুরু হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা হাসপাতালের কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগে লেজার পদ্ধতিতে অপারেশন বন্ধ করে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে যেসব ফিস্টুলার রোগী লেজার পদ্ধতিতে অপারেশন করতে চায় তারা বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কলোরেক্টাল সার্জনকে দিয়েই প্রাইভেট ভাবে লেজার করাতে বাধ্য হয়। শুধু কি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল?

দেশের সকল সরকারি হাসপাতালেই এমন চিত্র। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নষ্ট করে রাখে। আর মানুষ বাধ্য হয়ে টেস্ট করাতে ছুটে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এগুলো অনেক দিন ধরে চলে আসছে। মাইন্ড এইড হাসপাতালে এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মৃত্যুতে সরকারের হয়তো কিছুটা টনক নড়েছে? কেবল কি এই আনিসুল করিম শিপন দেশের আনাচে কানাচে এসব হাসপাতালে আরও বহুবিধ অনিয়মের ঘটনা ঘটে চলেছে। এগুলোর প্রতিকারের দায় কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়?

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলসহ সকল হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করতে পারবে কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই টাস্কফোর্স? অবসান ঘটাতে পারবে কি রোগী হয়রানির? কেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে বৈকালিক স্পেশালিষ্ট চিকিৎসকদের রোগী দেখা বন্ধ করে দেয়া হলো? তারা কি পারবে সরকারি চিকিৎসকদের কঠোর ভাবে চলমান প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে? কী চলছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক তথা প্রাইভেট চেম্বারে? ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে রোগী দেখেন কলোরেক্টাল সার্জন ডা. ফজলুল হক। তিনি ফি নেন ১৬০০ টাকা। রোগী দেখেন ভিডিও কলে। রোগীর কাছে আসেন না। কেন করোনার ভয় থাকলে করোনা রোগীর করোনা টেস্ট করিয়ে করোনা নেগেটিভ রোগীদের কাছেতো আসতে পারেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে লেজার পদ্ধতি বন্ধ থাকায় মানুষ বাধ্য হচ্ছে বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেটভাবে লেজার করাতে। কেবল ইডেন মাল্টিকেয়ার নয় আরও বহু বেসরকারি হাসপাতালে লেজার পদ্ধতি চালু আছে কিন্তু সরকারি হাসপাতালে নেই। সরকারি চিকিৎসকরাও সরকারি হাসপাতালে লেজার করাচ্ছেন না করাচ্ছেন প্রাইভেট চেম্বারে।

বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেশব্যাপী বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান। কেউ কন্টাক্টে যান সপ্তাহে ১ দিন যাবে বিনিময় কত দিতে হবে এনিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে চলে দরকষাকষি। টাকা বেশি দিলে এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় চলে যায় তারা।এসব প্রতিষ্ঠানে ফি নির্ধারণেরও কোন নীতিমালা নেই। সেটা তাদের ইচ্ছেমত করে। নেত্রকোনার আইডিয়াল হাসপাতালে কোন চিকিৎসকের ফি ১০০০ টাকা কোন চিকিৎসকের ফি ৭০০ টাকা। চিকিৎসা করিয়ে টেস্ট লিখিয়ে রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি দিতে হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটি কি পারবে এসব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করতে?

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মানুষ বাধ্য হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে। সরকারি হাসপাতালে নেই পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি। চলছে সিট সংকট। দেশের সর্বোচ্চ হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে মাসের পর মাস পেরিয়ে যায় সিট পেতে। হয়রানির শিকার হয় সাধারণ রোগীরা। ভিভিআইপি মন্ত্রী, এমপিরা অসুস্থ হলে তারা ভর্তি হয়ে যান বেসরকারি হাসপাতালে। নয়তো তারা বিদেশে চলে যান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটি কি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন করে এই তথ্যটি দেবে যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কতজন ভিভিআইপি চিকিৎসা সেবা নিতে গেছেন?

টাস্কফোর্স কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে অনিবন্ধিত লাইসেন্স গ্রহণ না করার। তারা কি এ তথ্যটা দেবে যে এ পর্যন্ত কয়টি লাইসেন্স গ্রহণ করা হল ও কয়টি গ্রহণ করা হলো না? যেসব হাসপাতালের লাইসেন্স গ্রহণ করা হবে না তারা কি তা বন্ধ করতে পারবে? তারা বলছে অফিস সময়ে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত হতে পারবে না। কিন্তু এই অফিস সময় কয়টা হতে কয়টা পর্যন্ত? বাস্তবে কী ঘটছে? অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালেই দুপুর ১ টার পরেই আর ডাক্তার পাওয়া যায় না। তারা ছুটে যান প্রাইভেট চেম্বারে। টাস্কফোর্স কমিটি বলছে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে। মানুষও তাই চায়। এসব অভিযান দ্রুত কার্যকর হোক। মানুষের স্বাস্থ্যসেবার নামে নানা অনিয়মের অবসান হোক দেশ ও জাতি এমনটিই প্রত্যাশা করে।

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ