আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ফল অব ইডেন

গোঁসাই পাহ্‌লভী  

Killing the faith in the name of faith- ZAHID HUSSAIN , The Dawn

আদম হাওয়া গন্ধম খেলেন। শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে দুনিয়ায় পাঠানো হলো। অর্থাৎ এই দুনিয়া একটা শাস্তির সময় অতিক্রম করার জায়গা। মানুষের আদি স্থান সেই স্বর্গ যেখান থেকে তার পতন হয়েছে, সেখানেই সে ফিরে যাবে’ এই হচ্ছে ধর্মগ্রন্থগুলোর আদম হাওয়া তত্ত্বের একটা দিক। এই কথা বিশ্বাস আকারে, বোধ আকারে মানুষের ভেতর স্থায়ী আসন নিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, গৌতম বুদ্ধের মতো লোকজ ধর্মে, গৌতম নিজেও বলেছেন জগত দুঃক্ষময়। ফলে দুঃক্ষকে অতিক্রম করার আকাঙ্ক্ষা মানুষের ভেতর প্রবল। যে কোনও আকাঙ্ক্ষাই চরম আকার ধারণ করলে এর একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ফলে সন্ত্রাসবাদ সর্বকালের দুর্গতির লক্ষণ, হাবিল-কাবিলের ঘটনায়ও সন্ত্রাসবাদ আছে। বর্তমানের যে সন্ত্রাসবাদ বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে পড়ছে, এটা সন্ত্রাসবাদের নতুন ডাইমেনশন। অনেক কিছু বিশ্লেষণ না করেও এই সিদ্ধান্ত বাক্য আমরা টানতে পারি যে, সন্ত্রাসবাদ মানুষের তৈরি করা একটা প্রবণতা। এর ভেতর ঈশ্বরের হাত নেই বললেই চলে।

ধর্ম, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, এক সময়ে সমাজতন্ত্র নিয়েও কথা বলায় ঝুঁকি ছিলো, আশংকাও আছে এবং বর্তমানেও। মূল বিষয় হচ্ছে মানুষ, তত্ত্বে এবং বাস্তবে; অন্যদিকে মানুষ এবং মানুষ সম্পর্কিত হত্যা। কোথাও ধর্ম যদি মানুষ হত্যার কারণ হয়, কোথাও আবার অধর্মও মানুষ হত্যার কারণ। দুই ধরণের হত্যার নজির রয়েছে মহাভারতে। শুধু মহাভারত কেন? প্রায় সকল ধর্ম এবং ধর্মীয় মিথের ভেতর এই দুই ধরণের হত্যার উদাহরণ আছে। এভাবেই, ধর্ম যেভাবে মানুষ হত্যার কারণ, অর্থও একইভাবে মানুষ হত্যার কারণ। কাম এবং মোক্ষ কোথাও প্রত্যক্ষ কোথাও অপ্রত্যক্ষ, কোথাও অধি এবং কোথাও বাস্তব প্রেরণা দান করেছে মানুষ হত্যায়। সুতরাং ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ যেভাবে একদিকে মানব জন্মকে সুসংগঠিত করেছে অন্যদিকে মানুষ হত্যাকে প্রেরণাও দিয়েছে। ফলে, মানুষকে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয়, সেই সাবধানতা জ্ঞানের থেকে, জ্ঞানের শক্তি এবং তার দিকনির্দেশনা থেকেও।

ফল অব ইডেন ঘটনার নানান ব্যাখ্যা আছে। প্রতিটি অধিবিদ্যার একাধিক বিদ্যা আছে। বিদ্যা অর্থাৎ যা আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর, আমরা যা কন্ট্রোল করতে পারি, এর অনেকগুলো অধি পর্যায় আছে, সেই পর্যায়গুলো বিদ্যার মধ্যে ধরা দিতে গিয়ে, বা বক্তার বক্তব্য হাজির হতে গিয়ে নানান বিদ্যার জন্ম হয়। এমন কোনও জ্ঞানকে আমরা এখনো কনফার্ম করতে পারিনি যার দ্বারা বিদ্যা এবং অধিবিদ্যার ভেতর একটা সাঁকো তৈরি হয়। এমন কোনও বিদ্যাকেও আমরা কনফার্ম করতে পারিনি যার দ্বারা একে অপরের বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়, সবগুলো ফ্যাকাল্টির সমন্বয়ে মানুষ তার সিদ্ধান্তকে তৈরি করতে পারে!

এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি?
পূর্বের অনেকগুলো লেখায় বলেছি যে, জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের জগতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। ধর্ম, ইতিহাস বিজ্ঞান দেখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন। ধর্ম (অর্থাৎ ধর্মের পেছনের সত্ত্বা)কে দেখার ক্ষেত্রে তার যে সাবজেক্ট, কর্তা, সেই কর্তা এবং ক্রিয়ার প্রতি দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসছে। যেমন ধরুন, ধর্মকে দেখার ক্ষেত্রে আমাদের এখানে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তন কোথাও প্রগতিশীল, কোথাও প্রতিক্রিয়াশীল। কিন্তু এই যে বিবিধ রকমের শীলতা, এই শীলতায় পরিবর্তন আসার সাথে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের তো কোনও নিদর্শন দেখা যাচ্ছে না।

মূলত: আমাদের এখানকার যে দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থাৎ জ্ঞানকাণ্ডের মাধ্যমে তৈরি হওয়া দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তার কলোনিয়াল পর্যায়কে অতিক্রম করেনি। ফলে কলোনির ডেফিনিশনগুলো দিয়েই আমাদের নেশন তৈরি হয়েছে। এই কলোনি কেবল বৃটিশ পর্বের নয়, মুঘল, সুলতান পাল এভাবে আর্যযুগে গিয়ে ঠেকবে বাঙালীর কলোনির জীবন। সেই কলোনি এখনো আছে, বাস্তবে এবং তত্ত্বে জীবনে এবং যাপনেও। ফলে, আপনাকে যে ডেফিনেশন নিতে হয়, সেই নেশন আপনার না। আপনি কোথাও যুক্ত হচ্ছেন কোথাও বিযুক্ত হয়ে। অর্থাৎ আপনি যে দিকেই জান, আপনি ডেফিনেশন থেকে মুক্ত নন, এই ক্ষেত্রে আপনার ডেফিনেশন নির্ধারণ করার আবশ্যকতা আছে কিনা!

ফ্রিতজপ কাপরার বরাত দিয়ে কয়েক জায়গায় বলেছি, এখানেও বলি, পাশ্চাত্য কলোনি বিস্তারের জন্যে মিশরীয়দের বিষয়ে যে পাঠ তৈরি করেছে সেটি আরবি ভাষায়, অর্থাৎ মিশরীয়দেরকে আধুনিক ইউরোপ চিনেছে আরবি ভাষার মধ্যে দিয়ে, গ্রীককে চিনেছে গ্রীক ভাষার মধ্যে দিয়ে, চীনদেশ চিনেছে চায়না ভাষা এবং ভারতকে চিনেছে সংস্কৃতের মধ্যে দিয়ে। অথচ আজ ক্রমশ: খোলাসা হচ্ছে যে, প্রাচীন মিশর যেখানে তাদের মূল ভাষা আদৌ আরবি নয়, হায়ারোগ্লিফিক্যাল, প্রাচীন গ্রীক যাদের প্রকাশের ভাষা জিওম্যাট্রিক্যাল এবং ভারত মিথলজিক্যাল ভাষার দ্বারা নিজেদের ব্যক্ত করতো। প্রাচীন এই ভাষাগুলোর ভেতর ক্রিয়াপদের সংখ্যা বেশি, রূপকের ব্যবহার তুঙ্গে, এবং নামপদও গুণবাচকতায় ঠাসা। এখন এই ভাষাকে, ফিনিট ইনফিনিট সাজেশনগুলোকে বুঝে উঠতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে লোগোসেন্ট্রিক নামপদ নির্ভর ভাষার। লোগো সেন্ট্রিক ভাষা তার পূর্ববর্তী ভাষাকে মোল্ড করেছে, ব্লেন্ড করেছে,ক্রিয়াকে হাইজ্যাক করেছে। এত কিছুর পরেও লোগোসেন্ট্রিক ভাষা তার পূর্ববর্তী ভাষাগুলো থেকে সব থেকে শক্তিশালী যে বিষয়টা নিয়েছে, সেটা হচ্ছে, এক্সট্রিম পোলার অপজিশনাল ওয়ার্ড। মন্দ এবং ভালোর অন্তহীন এই লীলার চলমানতা।

আপনি ভালোকে বাছাই করছেন মন্দ থেকে, আপনি কি সত্যিকার অর্থেই মন্দের বিলুপ্তি চান? সন্ত্রাসবাদ একপ্রকার ভাষা কাঠামো। এর এক্সপ্রেশন আছে, বোমা ফাটানোও একটা ভাষা, গুলি করে মানুষ হত্যাও একটা ভাষা। এই ভাষা ব্যক্ত করছে মানুষ, এই ভাষা মানবতার জন্যে হুমকি স্বরূপ, এটা যেমন সত্য একইভাবে সত্য হচ্ছে যে, মানুষের ভেতর থেকে কেবল সুন্দর সুন্দর জিনিস বের হবে, কদর্যতা বের হতে পারবে না এমন তো কোনো কথা নয়! প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে, দাদাবাদিরা যুদ্ধের বিভীষিকা দেখে প্রশ্ন করেছিলেন যে, নন্দনতত্ত্ব যে সৌন্দর্যের কথা বলে, সৌন্দর্য মূলত: মানুষকে তেমনিভাবে গড়েপিঠে তুলতে পারেনি। সৌন্দর্যের কথা ভাবলে এইসব যুদ্ধের মুখোমুখি আমরা হতাম না।

তারমানে আধুনিক যে ভাষা কাঠামো সেই ভাষা কাঠামো ঠিক রেখে আপনি কেবল ভালোকেই মেনে নিলেন এমন তো নয়, অর্থাৎ বর্তমান ভাষা কাঠামো আপনাকে বিপরীতার্থক শব্দের বাইরে যেতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে এই ভাষা ব্যবস্থা অর্থাৎ লোগোসেন্ট্রিক ভাষা ব্যবস্থা, এই ভাষা বিপরীতার্থর্কতা বুঝলেও বিপরীতার্থকটাকে সমভাবে প্রাপ্ত হতে পারে না। দুনিয়াটা এই ভাষায় ঠিকঠাক বুঝলেও আখেরাত নিয়ে রয়েছে নানান কল্পনা, পজেটিভ কিছু বুঝলেও নেগেটিভ নিয়ে রয়েছে নানান মতপার্থক্য।

সুতরাং মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসা মানে ভাষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসা।

সেই পরিবর্তন কীভাবে আসবে?
ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ এই যে আশ্রম, এই শব্দগুলোকে নিজস্ব গঠন শৈলীর আলোকে বুঝতে হবে, কলোনিয়াল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হতে গেলে বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে মাধ্যমকে বাদ দিতে হবে। সঠিকভাবে বুঝতে হলে বিষয়বস্তুর কাছে হাজির হতে হবে, বিষয়বস্তুকে ফিজিক্সের মধ্যে কনফার্ম করতে হবে। এভাবেই কোরান পুরাণ, ধর্ম অধর্ম, ন্যায় অন্যায়কে ঠিক ঠিক অই অই শব্দগুলোর বস্তুগুলোর মধ্যে দিয়েই বুঝতে হবে, গোঁসাই পাহলভীকে বুঝতে হলে গোঁসাই পাহলভীর কাছে হাজির হওয়া ছাড়া আপনার ভিন্ন কি উপায় আছে?

এভাবেই আমরা পোলার অজিটের জায়গা থেকে সরে এসে এমন একটি ভাষা কাঠামো সৃষ্টি করতে পারবো যেখানে ভালোমন্দ দ্বারা কোনও আচরণ নির্দিষ্ট করার কথা মানুষ আর ভাববে না।

আসেন ওশোর থেকে কিছুটা পাঠ করি-

So take love as a breathing of the soul. When you are in love your soul becomes vital, alive, just like it is breathing. But think in this way. If I say to you, ‘Only breathe when you are near me and do not breathe anywhere else’, then you will die. And the next time you will be near me you will be just dead and you will not even be able to breathe near me.

That has happened with love. We possess- the love object is possessed and the lover says, ‘don’t love anybody else. Only love me’ then the love is atrophied and then the lover cannot love, it becomes impossible. It does not mean that you have to love everyone, but you have to be in a loving state of mind.it is just like breathing: even if your enemy is there you will breathe.

That is the meaning of Jesus saying, ‘love your enemy’. It has been a problem for Christianity, how to understand this saying, ‘love your enemy’. It seems contradictory. But if loving is not an act, if it is just a state of mind, then there is no question of enemy or friend. You are in love. The Book of Secrets, page 269-70.

গোঁসাই পাহ্‌লভী, ভাস্কর, লেখক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ