আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

নিষ্ক্রিয় তথ্য কমিশন; বাড়ছে ভোগান্তি

বিপ্লব কর্মকার  

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক অসহায় নারী তার কন্যাশিশুকে নিয়ে একাকী বসবাস করছিল। স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহু আগে। গ্রামে পরিবারে পুরুষ অভিভাবক না থাকলে যা হয় এই পরিবারটির ক্ষেত্রেও তাই হল। রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এক যুবক একদিন একা পেয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করল। থানায় মামলা হল। কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটা উঠল। ধর্ষক ছেলেটিও গ্রেপ্তার হল।

এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিল। এরপরই রাজনৈতিক প্রভাব এবং টাকা পয়সার জোর দৃশ্যমান হল। বিচারে বিচারকের রায় হল – ধর্ষক ছেলেটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেয়েটিকে বিয়ে করবে। ধর্ষকের সাথে বিয়ের শর্তে রায়ের পর ধর্ষক ছাড়া পেয়ে গেল। মেয়ের মা গরীব বলে তাদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না।

ঠিক যেন পাকিস্তানের আদালত-যেখানে ধর্ষণের রায়গুলো এমনই হয়। বিচারক রায় দিল কিন্তু রায়ের কপি প্রকাশ করল না।  রায়ের কপি না পেলে হাইকোর্টে আপিল করা যাবে না, আবার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে আদালত অবমাননা হয়ে যাবে। শিশুটি এবং তার অসহায় মা পড়ে গেল উভয় সংকটে ।       

আর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন তথ্য কমিশনে। কুমিল্লা জেলা জজ আদালত এই আইন পাশ হওয়ার ৬০ দিন পরও তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়নি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন না করায় তথ্য কমিশন  আবেদন খারিজ দেয়। অথচ ভারতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন না করে সরাসরি প্রধান তথ্য কমিশনারের কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চেয়েছিলেন। প্রধান তথ্য কমিশনার কেজরিওয়াল তথা দেশবাসীর কাছে নরেন্দ্র মোদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়।

বাংলাদেশের তথ্য কমিশনের  নিষ্ক্রিয়তা এবং নিজেদের আইন নিজেরাই লঙ্ঘনের কারণে শুরু হয় এক অসহায় মা-মেয়ের ফেরারি পলাতক জীবন।

এই ঘটনা শুনে আমি দৃশ্যপটে আসি। তথ্য কমিশনের কাছেই জানতে চাই কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা কে?   


এ ত গেল একটি ইতিবাচক উদাহরণ।

এবার আসি আসল সমস্যায়।
তথ্য কমিশন তথ্য না দেয়ার, মিথ্যা তথ্য ও অসম্পূর্ণ তথ্য দেয়ার জন্য যে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জরিমানা করতে পারে।
২৭৷ (১) কোন অভিযোগ নিষ্পত্তির সূত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশনের যদি এই মর্মে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা –
(ক) কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন;
(খ) এই আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদান করিতে কিংবা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
(গ) অসদুদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন;
(ঘ) যে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ করা হইয়াছিল তাহা প্রদান না করিয়া ভুল, অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত তথ্য প্রদান করিয়াছেন;
(ঙ) কোন তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন-

তাহা হইলে তথ্য কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্তরূপ কার্যের তারিখ হইতে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে, এবং এইরূপ জরিমানা কোনক্রমেই ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার অধিক হইবে না৷

কিন্তু তারা সবাইকে করে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি ক্ষমতাহীন কোন প্রতিষ্ঠানের নিরীহ কর্মচারী হয় তাহলে নির্দয়ভাবে জরিমানা করে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ছবিতে দেখুন একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ছাপোষা কর্মচারীকে জরিমানা করে কমিশন তার ওয়েবসাইটে গর্বের সাথে বার বার স্ক্রল করে প্রচার করে।
  
ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে জরিমানা
অপরদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যদি বড় কোন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়, আর প্রাপ্ত তথ্যে যদি শ’ কোটি বা হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি থাকে তাহলে কমিশন নিজেকে বড়ই অসহায়বোধ করে। দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো এবং অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা কল বাইপাস করে টাকা চুরি করে। এর সাথে অনেকেই জড়িত।

পানামা পেপারসে চারজন ব্যবসায়ী আছে যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করেছিল এবং দেশে তাদের আয়ের উৎস ভিওআইপি ব্যবসা। এদের অফিস ঠিকানা দেয়া কারওয়ানবাজার। লক্ষ্য করুন অবৈধভাবে আয় করে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছে। দেশের দুই দিকে ক্ষতি করছে।
 

রায়ে বিটিআরসি একধরনের যন্ত্রের কথা কমিশনে বলে কমিশনকে বোকা বানিয়ে দেয়। তথ্য অধিকার আইনে কমিশনের কাছে এই যন্ত্রের নাম ও তার বিস্তারিত বিবরণ। কিন্তু কমিশন জানাতে পারেনি।

টেলিযোগাযোগ খাতে বিদেশে কল আনা নেয়ার পর যোগবিয়োগ করে যে আয় হয় তা সরকারে রাজস্ব হিসেবে জমা হয়। সেই রাজস্ব আয়ের হিসাব অর্থমন্ত্রী জুন মাসে জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় প্রকাশ করেন। সেই হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে দেশ-বিদেশে কত মিনিট আসা-যাওয়া করেছে তা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে থাকার কথা। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমিশনকে ভালোভাবেই বোকা বানিয়েছে অথবা কমিশনাররা কোন অগ্রহণযোগ্য কারণে বোকা সেজেছিল!  

বিটিআরসির জবাব
 
মিথ্যা তথ্য দিলে কমিশন জরিমানা করতে পারে, কিন্তু করে না। লক্ষ্মীপুর বিআরটিসি আমাদেরকে তথ্য দিয়েছিল লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৫৬ টাকা এবং এই টাকাই বাস কোম্পানিগুলো আদায় করে। আমার ৩০০, ৩৫০, ৪০০ ও  ৪৫০ টাকার বিভিন্ন বাস কোম্পানির টিকেট কমিশনে দেখিয়েছিলাম। কমিশন কিছুই করেনি।  

 

ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির তালাশ অনুষ্ঠানে দিনের বেলায় ট্রেন থামিয়ে তেল চুরির দৃশ্য প্রচার করা হয়। আমরা জানতে চেয়েছিলাম এই চুরির সাথে কারা জড়িত। রেলওয়ে কোন তথ্য জানায়নি। তথ্য কমিশনে অভিযোগ করার পর থাকা রেলওয়েকেই তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। যথারীতি রেলের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা কোন দুর্নীতি খুঁজে পায়নি। এমনকি সংসদীয় কমিটি কর্তৃক ধরা পড়া তেল চুরির বিষয়টাকেও তারা সঠিক দাবী করে হাবিজাবি তথ্য দেয়। কিন্তু কমিশন নির্বিকার।

তালাশের ভিডিও

রেল কর্তৃপক্ষের জবাব পাবেন এখানে

সিলেটে রাজন হত্যাকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন , ঘুষ , দুর্নীতি সকল ধরনের ফৌজদারি অপরাধ হয়। পুলিশ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।  সেই কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়ার পরই তা পাবলিক ডকুমেন্ট।  কিন্তু কমিশন যে অজুহাতে সেই রিপোর্ট প্রকাশে বাধা দেয় একই অজুহাতে আসলে কোন তথ্যই প্রকাশ করা ঠিক নয়।  কমিশনের ভেতর লোকজন চায় না এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ হোক। অথচ রাজন হত্যার পরে হবিগঞ্জেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু মুল কারণ অনুদঘাটিত থেকে গেলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ