আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আইনেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

মোনাজ হক  

মারকুস সিসেরো, একজন রোমান দার্শনিক, খ্রিস্ট-জন্মের ও ১০০ বছর আগে জন্ম, যিনি রাষ্ট্র গঠনের রূপকার হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক আইন, প্রাকৃতিক সমতা এবং রাষ্ট্রকে মানুষের স্বাভাবিক রূপে বিশ্বাসের বিষয়ে সংজ্ঞায়িত করেছেন তিনি। প্রাকৃতিক আইন পরিবর্তনযোগ্য নয় এবং এটি সব মানুষ এবং সমস্ত জাতির মধ্যে পাওয়া যাবে প্রাকৃতিক আইন এই সর্বজনীনতা দেশের এবং শহরগুলির ভিত্তি গঠন করে। যেহেতু প্রকৃতির আইন সর্বোচ্চ, কেউ তা লঙ্ঘন করতে পারে না।

রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্ৰয়োজনীয়তা ও তার সৃষ্টি পাঁচ হাজার বছর আগে হলেও মারকুস সিসেরো দুহাজার বছর আগে আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন। রাষ্ট্রের পূর্ববর্তী ফর্মগুলি থেকে তিনটি মহান সুবিধা আমরা দেখতে পাই, তা হলো, কেন্দ্রীভূত একনায়কত্বের অভাব তাদের সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে, তারা একমাত্র পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে গণতন্ত্র আবির্ভূত হতে পারে এবং তাদের রাষ্ট্র বা অঞ্চলকে বাড়ানোর প্রবণতা তাদের নেই। তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির একটি রূপ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে যা জমির মালিকানা, বাণিজ্য, শিল্প এবং মূলধন বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে না। এই সমৃদ্ধির বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগানের মান প্রতিটি দেশে একটি সুশীল সমাজ (সুশীল সমাজের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ না করে বলা যায়, দেশের সামরিক পরিমণ্ডলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত একটি সামাজিক সত্তা) সৃষ্টি করেছে যা একটি সাংস্কৃতিক স্ব-পরিচয় গ্রহণ করেছে যা আমরা নিজ নিজ দেশের জাতীয়তাবাদকে স্মরণ করতে পারি।

একটি রাষ্ট্র, তার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বৈধতা উৎস হলো জাতি। আর জনগণ হলো রাষ্ট্রের প্রধান উপাদান, যার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থানের সুষম ব্যবস্থা করার দায়িত্বে রাষ্ট্রের সরকার নির্বাচিত হয় আর একটি রাষ্ট্রে একটিই সরকার থাকে, তার কেন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বা থাকে না। কাজেই রাষ্ট্রের উন্নতি ও জনগণের সেবা নিশ্চয়তা দেবার একমাত্র দায়িত্ব সরকারের। আগে যে সরকার পরিচালিত হতো সামন্তবাদী বা রাজতন্ত্র দিয়ে এখন সেটি জনগণের নির্বাচিত সরকার, এখন যদি কোনো গণতান্ত্রিক সরকার অভিযোগ করে বলে যে একটি বিশেষ দল, রাষ্ট্র ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজে লিপ্ত তাহলে সে সরকার দুর্বল। সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে সমস্ত রাষ্ট্রীয় ইন্সটিটিউশনের (প্রশাসন, আইন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা, কোষাগার ও রাজস্ব) দায়িত্ব দিয়েছে দেশ পরিচালনার জন্যে। তাই যদি না হবে তাহলে মার্কুস সিসেরোর দু হাজার বছরের রাষ্ট্র গঠনের সংজ্ঞায় কি কিছু গলদ আছে?

সংখ্যালঘুদেরকে হত্যা, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়, তবুও গত ১০ বছরে তা এখন চরমে উঠেছে, মসজিদের মাইক ব্যবহার করে উস্কানিমূলক ডাক দেয় সেটা বার করতে সরকার এখনো ব্যর্থ কেন? ফেসবুক এ ধর্ম অবমাননার কথা বলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই যদি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে, তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলিতে যেখানে ফেসবুকের ব্যাপক ব্যবহার সেখানে এই ধরণের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে না কেন?

রংপুরের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার আগেও বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে, রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও উপাসনালয় ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা আমরা দেখেছি, সরকার কি কোনো প্রতিকারের ব্যবস্থা করেছে?

এবার দেখি সরকারের কি কি করণীয়, এক সাধারণ উদাহরণ দেই: আপনি গাড়ি ভুলভাবে পার্ক করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাকে ২০ টাকার একটি টিকেট দিলো আপনাকে ব্যক্তিগত লাঞ্ছনা না করেই। এটাই নিয়ম, এটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব, এতে আপনি পরবর্তীতে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন, অপরাধকে মেনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২০ টাকা জমা দেবেন। রাষ্ট্রের রাজস্ব আয় বাড়বে যা দিয়ে জনসেবার মান বাড়বে, এখন যদি রাষ্ট্র কিছুই না করে, পুলিশ লাঠির ভয় দেখিয়ে ১০ টাকা নিজের পকেটে ভরিয়ে সমাধান করবে, আপনি ২০ টাকার জায়গায় ১০ টাকা দিয়ে মহা আনন্দে বাড়ি ফিরে যাবেন। পরে আবার একই অপরাধ করবেন, কারণ আপনি যেনে গেছেন ১০ টাকা দিয়েই পার পাওয়া যায়, রাষ্ট্র হারাবে তার রাজস্ব আয়, পুলিশের অপরাধ প্রবণতা বাড়বে, আপনাকে অসম্মান করবে।

সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে আনা যায় রাষ্ট্রর আইন দিয়ে। তেমনি সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও এড়ানো যায় রাষ্ট্রের আইন দিয়েই।

মোনাজ হক, সম্পাদক, আজকের বাংলা, জার্মানি।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ