আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

দক্ষিণ এশীয় সমাজের ভ্রান্তি

মাসকাওয়াথ আহসান  

আমাদের দক্ষিণ এশীয় সমাজ পশ্চিমা বিশ্ব সম্পর্কে বড় রকমের একটি ভুল মনের মধ্যে পুষে রেখেছেন। দক্ষিণ এশীয় সমাজের রক্ষণশীল অংশ মনে করেন পশ্চিমা সমাজ উচ্ছন্নে গ্যাছে। যে কারণে পশ্চিমে গিয়েও দক্ষিণ এশীয় কট্টরপন্থী নারীরা পশ্চিমা নারীদের বিরুদ্ধে আকাশ-কুসুম ভাবনা ভেবে তাদের সঙ্গে না মিশে নিজেদের একটি গিল্ডের মাঝে আটকে রাখেন। পশ্চিমা একটি মেয়ে স্কার্ট পরে ঘুরছে; এর মানে এই নয় যে সে একজন এভেইলএবল মেয়ে। এই ভুল ধারণা পোষণ করে অনেক দক্ষিণ এশীয় পুরুষ তাদের হুট-হাট করে 'ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল' দিয়ে ঝাড়ি খান।

এইসব চিন্তার পাতকূয়া থেকে বেরিয়ে আসা খুবই জরুরী। পশ্চিমা নারী যখন পুরুষের সঙ্গে মেশে, একজন পারসন হিসেবে মেশে, বন্ধুর মত মেশে, সে গল্পের সাঁঝটিকে উপভোগ করতে চায় নির্মল আনন্দে। সে হিসাব করে না; এই লোকটি হাজব্যান্ড হিসেবে কেমন হবে, এর পকেটের জোর কেমন; বা সে ধরেই নেয় না যে সে যেহেতু নারী; রেষ্টুরেন্টের বিল পুরুষটিই চুকিয়ে দেবে। পশ্চিমেও খুব মেধাবী ছাত্রী রয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ে যাদের অনেক পড়াশোনা; অনেক চিন্তার গভীরতা থাকে, আবার সূক্ষ্মতম রোমান্টিসিজমও থাকে। যে মেয়েটি কফি টেবিলে পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করে, সেই ডিসকোতে ব্ল্যাক আই-শ্যাডো দিয়ে মনের আনন্দে নাচে। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল বলে সারাক্ষণ সিরিয়াস আর গম্ভীর থাকে না।

পশ্চিমের বাবা-মায়েরা মাঝে মধ্যে বসে তাদের ছেলে-মেয়েদের কাউন্সেলিং করেন। পশ্চিমা ছেলেরা ছোটবেলা থেকে মায়ের সমান অধিকার এবং মর্যাদা দেখে বড় হয়; ফলে নারী তার চোখে নেহাত শাসন করার ও যৌনতার লক্ষ্যবস্তু নয়। সে খুব সহজভাবে মিশতে শেখে নারীর সঙ্গে। আমরা সিটকম বা ফিল্ম দেখে পশ্চিমা সমাজ সম্পর্কে ধারণা করে নেই, ওটা একেবারেই যাচ্ছে-তাই বখে যাওয়া সমাজ। ব্যাপারটা তা নয়; ভারতের সমাজ তো আর 'শিলা কী জওয়ানী'-র বখে যাওয়া সমাজ নয়। বাংলাদেশ সমাজ মানেই ঢাকার পোলা-আগুণের গোলা অনন্ত জলিল নয়। কমার্শিয়াল মুভি বা টিভি সোপ থেকে কোন সমাজকে বুঝতে চেষ্টা করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে জাজমেন্টাল হওয়া অনুচিত।

আমাদেরকে ভুলচিন্তার ল্যাবিরিন্থ থেকে বের হতে হবে দ্রুত। মুসলমান নারীদের হিজাব পরে ব্যাটম্যান সেজেও নিজেকে লোলুপ ইমাম সাহেবের হাত থেকে বাঁচানোর উপায় নেই; আইএস যেভাবে মুসলমান নারীদের যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করছে, নারীর প্রতি এমন মানবাধিকার বর্জিত আচরণ পশ্চিমের পুরুষেরা সেখানকার নারীর সঙ্গে করার প্রশ্নই ওঠে না। এমন কী টেবিল ডান্স করা পশ্চিমা নারীরও ফ্রিডম অফ চয়েস আছে; বা 'যৌন কর্মী'-র কাজেও কেউ তাকে বাধ্য করেনা। অন্যান্য সম্মানজনক কাজের মতো এই পেশাগুলোও পরিচালিত হয় সম্মানজনক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের ভিত্তিতে।

ঐ যে স্কার্ট পরা পশ্চিমা মেয়ের কথা বলেছিলাম তার মানসিক বিকাশটি মুক্তভাবে হওয়ায় সে আর যাই হোক কোথাও গিয়ে যৌন জিহাদে অংশ নেবেনা। অথচ পশ্চিমা সমাজে কোকুন ও গিল্ডের মধ্যে বড় করা ব্যাটম্যান রক্ষণশীল মেয়েরা ভুল জিহাদের নেশায় চলে যাচ্ছে আই এস-এর যৌন জিহাদে। এই যে মনোবিকৃতি এটি বাড়ীতে মায়ের অমর্যাদা দেখে বড় হবার ফলাফল। সে ছোট বেলা থেকেই নিজেকে পুরুষের অধীন বলে মেনে নিয়েছে। অবচেতনের ঐ দাসত্বের বোধ; সেই সঙ্গে সমসাময়িক শিক্ষা-সংস্কৃতির আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে এই যৌন জিহাদের এডভেঞ্চারটি তাদেরকে পেয়ে বসছে। কারণ জীবন কত সুন্দর হতে পারে; লিবিডোর বাইরেও খোলা আকাশ, গোলাপী রোদ্দুর, ঘাসফুলে শিশির ছুয়ে যাওয়া জীবনের সৌন্দর্য্যটি উপলব্ধির সুযোগই সে পেলোনা।

আর পশ্চিমের যে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি এর ভোক্তা কিন্তু পশ্চিমা সমাজ নয়। ওসামা বিন লাদেন থেকে দক্ষিণ এশীয় সাধু সন্ন্যাসীরা এগুলো বেশী দেখে। এই ঘটনাটি পশ্চিমে গিল্ডের মধ্যে ও দক্ষিণ এশীয় কট্টরপন্থার মাঝে বেড়ে ওঠা তরুণীদের ক্ষেত্রে ঘটে। এবং সেগুলোই এই কথিত যৌন জিহাদের এডভেঞ্চারের দিকে ঠেলে দিয়ে সর্বনাশ সাধন করছে।

আর দক্ষিণ এশীয় পুরুষেরা ছোট বেলা থেকে মায়ের উপায়হীন অধীনস্থ জীবন দেখে ধরেই নিয়েছে, নারী অতি তুচ্ছ বিষয়। সে একটু বড় হবার পর থেকেই মা-বোনের ওপর পুরুষ মনোভাবের কর্তৃত্ব ফলায়; অন্য নারীর উপর একই লিঙ্গগর্ব দেখায় উপপুরুষের মতো ধর্ষণ করে। সৌদী আরব থেকে আমদানী করা স্থূল রুচিবোধ, বর্বরতা আর ভারতীয় উপমহাদেশের লিবিডো তাড়িত মেল শভিনিস্ট মানস ভয়ংকর সব সামাজিক সংকট তৈরী করছে চারপাশে। এ অন্ধকার কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান দিয়ে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব।

অথচ আমি নিশ্চিত দক্ষিণ এশীয় শিশুদের মুক্তির স্বাদ ও যথাযথ দিক নির্দেশনা দিয়ে বড় করলে তাদের মাঝে অমিত সম্ভাবনার আলো দৃশ্যমান হবে।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ