প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
দেবজ্যোতি দেবু | ২০ জানুয়ারী, ২০১৮
ছাত্রসমাজ, ছাত্রআন্দোলন এবং ছাত্ররাজনীতি, এই তিনটি ক্ষেত্র নিয়ে গর্ব করার মত অনেক ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই তিনের অবদান সব সময়ই অগ্রগণ্য। কিন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নির্ভর এই ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বর্তমানে মানুষের মনে নেতিবাচক প্রভাব কাজ করে। ছাত্ররাজনীতির কথা শুনলেই আজকাল লোকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তরুণ প্রজন্ম আজকাল হয়ে উঠছে 'হেইট পলিটিক্স' প্রজন্ম! অথচ এই তরুণদের হাত ধরেই ইতিহাসের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূর্য উদিত হয়েছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত হয়েছিল এই তরুণ ছাত্র সমাজের হাত ধরেই। যাদের অধিকাংশরাই ছিলেন ছাত্ররাজনীতির অংশ। তারা রাজনীতি করতেন দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে। তাদের অস্ত্র ছিল কলম এবং স্লোগান। এমনকি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনও শুরু হয়েছিল এই ছাত্ররাজনীতি দিয়েই। আর সেই ছাত্ররাজনীতির নাম শুনলেই লোকে আজ ভয় পায়!
এগুলো নিয়ে অতীতেও মানুষের মনে শঙ্কা কিংবা নেতিবাচক মনোভাব ছিল না বললে হয়তো ভুল হবে। ছিল, তবে কারণগুলো অনেকটাই ভিন্ন ছিল। আগে ভয় ছিল সরকারবিরোধী আন্দোলনে জেল জুলুমের কারণে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ার। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই রাজনীতি করা ছাত্র-ছাত্রীদের দেখলে বাঁকা চোখে তাকাতেন। পড়ালেখা ফেলে রাজনীতি করাকে নেতিবাচক ভাবেই দেখতেন অনেকে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেক কারণেই ভিন্ন। বর্তমানের নেতিবাচকতাও ভিন্ন। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন জাগতে পারে ছাত্রসমাজ, ছাত্রআন্দোলন এবং তার বলিষ্ঠ ভূমিকাকে যেখানে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হতো, মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে তা আজ মানুষের ভয়ের কারণ হয়ে উঠলো কীভাবে? যার সরল উত্তর হচ্ছে, ইতিবাচক দিকগুলোর চেয়ে নেতিবাচক বিভিন্ন উপাদানের আধিক্যই ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মন থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, কলুষিত করছে।
ছাত্ররাজনীতিতে পচন ধরার সূত্রপাতটা বোধ করি হয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির হাত ধরেই। ৭৫ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং রাজনীতির কু-স্বার্থে স্বাধীনতা বিরোধীদের বাংলাদেশে আশ্রয় এবং ক্ষমতা দানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধীরে ধীরে পেশিশক্তির প্রদর্শন শুরু হয়। জামায়াত শিবিরের রগ কাটা রাজনীতির বলি হতে হয় বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের অনেক ছাত্রনেতাকে। সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো জামায়াতকে মোকাবেলা করে ছাত্র সংগঠনগুলোকে রক্ষা করা এবং পূর্বেকার প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের ধারায় ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু সেটা না হয়ে বরং ধীরে ধীরে এই বিষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। আর তাতে জড়ানো হয় ছাত্র সংগঠনগুলোকে। ভোটের রাজনীতিতে ছাত্রদের ব্যবহার এবং পেশিশক্তির প্রদর্শনের মাধ্যমে ছাত্রনেতাদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের এক অদ্ভুত লোভ জাগ্রত হতে থাকে। আর তাতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ছাত্র সংগঠনের নেতারা ছাত্রদের অধিকার আদায়ের লড়াই ছেড়ে জড়াতে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ'র বয়স আজ ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। যে ছাত্র সংগঠনটির অতীত ইতিহাস এতো সমৃদ্ধ, সেই সংগঠনটিও আজ কলুষিত, অবক্ষয়ের শিকার! পেশিশক্তির অপব্যবহার এবং ক্ষমতার দম্ভ তাদের এতোটাই জেঁকে ধরেছে যে, শিক্ষা খাতে নানান অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেখানে এই সংগঠনটিকে প্রতিবাদে সরব থাকার কথা, সেখানে তাদের নামে আজ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে, মামলা হয়। ধর্ষণে সেঞ্চুরি করে এই সংগঠনের নেতাই। প্রকাশ্যে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মানুষ মারে এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে এই ছাত্র সংগঠনের নেতার উপরেই। দলীয় কোন্দলের কারণে ঘটা সহিংসতার অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অচল করে রাখে এই ছাত্র সংগঠনের নেতারাই। শিক্ষা খাতে অনিয়মের জন্য যেখানে প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল সেখানে অনিয়মের কথা অকপটে অস্বীকার করে যান এই সংগঠনেরই সাবেক ছাত্রনেতারা। অথচ এই ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাত ধরেই একদিন ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই সংগঠনেরই অনেক নেতা।
আজ এ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের লোভ এতো তীব্র হয়েছে যে প্রতিটি শহরে একাধিক গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন ছেড়ে তারা রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। যার পরিণতিতে প্রতিনিয়তই নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং সন্ত্রাসের বলি হয়ে নিহত হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই। রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্বার্থেই এসব হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে এবং কোন ধরনের আইনি বিচারের তোয়াক্কা না করেই প্রতিশোধ হিসেবে আরও একাধিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা হচ্ছে। যার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে সিলেট ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হওয়া ৩ জন ছাত্রলীগ নেতা। মাত্র ৪ মাসের ব্যবধানেই গ্রুপিং হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন এই তিনজন।
সর্বশেষ সিলেটে ছাত্রলীগকর্মী তানিম খান খুনের ঘটনায় ‘ফাইটার' খ্যাত আরেক ছাত্রলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ড সহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ‘ফাইটার’ ডায়মন্ড জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। একটি ছাত্রসংগঠনের নেতার নামের সাথে কি মহান বিশেষণ লাগানো! সে ফাইটার। একজন ছাত্রনেতা কিসের ফাইটার? কি নিয়ে ফাইট করে সে? শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে ফাইট করে নাকি অস্ত্র হাতে রাজনৈতিক সহিংসতা করে ফাইটার উপাধি পেয়েছে? যেহেতু খুনের দায়ে আটক হয়েছে সেহেতু এটা ধরেই নিতে পারি যে, সে সহিংসতার জন্যই এই উপাধিতে ভূষিত হয়েছে। একজন ছাত্রনেতা খুনি হতে যাবে কেন? তারতো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা। তাহলে সে নিজেই কেন সন্ত্রাসী হয়ে উঠেছে? কেন অস্ত্র হাতে হামলা করছে নিজেরই সংগঠনের আরেক কর্মীর উপর?
অত্যন্ত যৌক্তিক ভাবেই বলা যায়, ধর্ষণে সেঞ্চুরি করা সেঞ্চুরি মানিক হোক আর ফাইটার ডায়মন্ডই হোক, তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ব্যক্তি পরিচয় বহন করে। ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় পাওয়ার আগে তাদের নিজস্ব একটা পরিচয় আছে, চরিত্র আছে। সেই ব্যক্তি পরিচয় ততোক্ষণ সংগঠনকে দায়ি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সংগঠন সেই ব্যক্তির পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, কিংবা সেই ব্যক্তি সংগঠনের আদর্শ পরিপন্থি কোন কাজে জড়িত থাকার পরেও সংগঠন চুপ থাকে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, সাংগঠনিক ভাবে কি তাদের এসব অপকর্মের জন্য কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা হচ্ছে? উত্তর হচ্ছে, না। শাস্তি দেয়ার এমন নজির খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। যাও দুয়েকটা পাওয়া যায় তাও আবার বহিষ্কার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কিছুদিন পরে দেখা যায় অভিযুক্ত সেই কর্মীকে আবার সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে জড়ানো হচ্ছে। তাহলে কি বলতে পারিনা, এসব অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগকেও দায়ী করা যায়?
ছাত্রলীগ কর্তৃক সংগঠিত হত্যা, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ সহ নানা অপকর্মের বিচার চাইতে গেলে তাদের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় ছাত্রলীগ একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন। তাই এর ভাল-খারাপ কোনকিছুর দায়ই আওয়ামী লীগের না। আওয়ামী লীগ নেতারা দুই হাত উপরে দিয়ে বলেন আমরা কিছুই জানি না। 'সন্ত্রাসীদের' সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই। ভাবটা এমন যে, 'ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না'! 'ছাত্রলীগ স্বতন্ত্র সংগঠন' কথাটা কাগজে কলমে সত্য হলেও বাস্তবে এর প্রমাণ পাওয়া কঠিন। প্রতিটি ছাত্রলীগ কর্মীই কোন না কোন 'দাদা', 'ভাই'-এর অনুসারী কিংবা কর্মী। এই দাদা/ভাই কারা? উনারা আওয়ামী লীগের নেতা। উনাদের ইশারাতেই পরিচালিত হয় এই 'ছাত্রলীগ' কর্মীরা। উনাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ছাত্রলীগ কর্মীরা নানান অপকর্ম করেও বিনা বিচারে রেহাই পেয়ে যায় উনাদের কল্যাণেই। বিভিন্ন সভা সমাবেশে এই নেতাদের হয়েই স্লোগান দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগ কর্মীদের। রাজনৈতিক মাঠ গরমের লড়াইয়ে এই ছাত্রনেতাদের দিয়েই শক্তি প্রদর্শন করেন দলীয় নেতারা।
প্রশ্ন জাগে, এই ছাত্রদের হাতে অস্ত্র এবং পিছন থেকে রাজনৈতিক সেল্টার দিয়ে কারা সন্ত্রাসী বানায়? ছাত্রলীগ যদি স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন হয়ে থাকে তাহলে এই সংগঠনের কর্মীদের আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের গ্রুপে জায়গা দেন কিসের ভিত্তিতে? জেনেশুনে জায়গা দিলে দায় এড়িয়ে যান কোন কারণে? জায়গা দিয়ে আবার এদের ভাল কিংবা খারাপ কর্মের দায় আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে কোন যুক্তিতে?
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন 'ছাত্ররাজনীতির কি প্রয়োজন? ছাত্রদের কাজ পড়ালেখা করা। রাজনীতি করলে পড়বে কখন?' আমি বলি আছে, ছাত্ররাজনীতির অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তরুণ প্রজন্মই দেশের ভবিষ্যৎ। আর এই তরুণরাই ছাত্র। এই ছাত্রদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। একটি সভ্য, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। একজন শিক্ষিত তরুণের চিন্তা হবে উন্নয়নমূলক, আচরণ হবে সভ্য, গতি হবে দুর্বার। কুসংস্কার দূর করে সমাজকে আলোর পথে নিয়ে যাবে এই শিক্ষিত তরুণরাই। তাই এই তরুণ ছাত্রদের নিয়েই আগামীর সোনার বাংলার ভীত রচিত হওয়া উচিত। ভবিষ্যৎ প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী, সৎ রাজনীতিবিদ বেরিয়ে আসবে এই ছাত্র সমাজ থেকেই। ছাত্রাবস্থায় যদি প্রকৃত রাজনৈতিক শিক্ষা দিয়ে তাদের গড়ে তোলা যায় তাহলেই শুধু রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শিক্ষাঙ্গন এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো সহ আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ছাত্র সমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রমাণ করে এই দেশে ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু।
ছাত্ররাজনীতিতে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। খুবই পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির বর্তমান কলুষিত অবস্থার পিছনে রাজনৈতিক দলীয়করণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ দায়ী। তাই ছাত্র সমাজকে এর জন্য একক ভাবে দায়ী করা অন্যায় হবে। ছাত্রনেতাদের নৈতিক এবং আদর্শিক অবক্ষয়ের পিছনে রাজনৈতিক নেতাদের দলীয় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের অপব্যবহার অনেকাংশেই দায়ী। ছাত্রনেতাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার কারণে তারা শক্তি এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের দিকে বেশি ঝুঁকছে। যার ফলে তারা সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠছে। হচ্ছে নেশাগ্রস্থ। যেখানে তাদের সৎ রাজনৈতিক চর্চায় অভ্যস্ত হওয়ার কথা সেখানে তারা দুর্নীতির চর্চা করছে, করছে মানুষ হত্যার চর্চা। যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটা অশনি সংকেত।
ছাত্ররাজনীতিকে পুনরায় তার অতীত ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিতে হলে তাকে তার নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ছাত্রদের কাজ হচ্ছে লেখাপড়া করা, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নানান অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা, শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস মুক্ত রাখা, সর্বোপরি ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সচেষ্ট থাকা। সমাজকে কুশিক্ষা এবং কুসংস্কার মুক্ত করাও ছাত্র সমাজের দায়িত্ব। রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিভিন্ন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, সরকারের নানান অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দায় আছে ছাত্র সমাজের। তাদের সেই পরিসরেই থাকা উচিৎ।
ছাত্ররাজনীতির অতীত ইতিহাসকে কলঙ্কিত না করে বরং আরও সমৃদ্ধ করা উচিৎ। ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে রাজনৈতিক দল এবং তার নেতৃবৃন্দের উচিৎ ছাত্ররাজনীতিকে নিজেদের অংশ বানিয়ে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। ভোটের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করা। ওরা ছাত্র। ওদের ছাত্রই থাকতে দেয়া উচিৎ। আদর্শ বিচ্যুতি থেকে ফিরিয়ে এনে ছাত্র সমাজকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার পথ প্রদর্শন করা উচিৎ।
যারা নিজেদের রাজনীতির বাইরে রেখে 'ছাত্ররাজনীতি খারাপ' বলে মন্তব্য করেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে নিজেকে যদি সৎ বলে দাবি করার সাহস থাকে তাহলে ছাত্ররাজনীতির অংশ হয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকে নোংরা রাজনীতি থেকে বের করে এনে সঠিক রাস্তা দেখান। সৎ রাজনীতিবিদ চাইলেই পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিনের সৎ রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমেই একজন যোগ্য নেতা তৈরি হোন। তাই দেশের স্বার্থে, দেশের রাজনীতির স্বার্থে সেই ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করুন। নিজে কিছু করে দেখান। দেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে আপনাদের ভূমিকাও যে অনস্বীকার্য।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য