আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

যদি-যদি, ‘যদি ক্যান্ডি’

মাসকাওয়াথ আহসান  

লোকালয়ে তোলপাড় তোলে এই সমাধানসূত্র, ‘যদির’ কোনো বিকল্প নেই। একজন ক্রিকেট বোদ্ধা বলে, টেস্ট ক্রিকেটে এই ভরাডুবি ঠেকাতে আসলে ‘যদির’ বিকল্প নেই। সাকিবের ইনজুরিতে দল যখন দুর্বল হয়ে পড়লো; তখন ‘যদিকে’ আমন্ত্রণ জানানো উচিত ছিলো।

গোটা দেশ যখন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জর্জরিত; যখন এই ফাঁসের মড়ক থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই; তখন একজন শিক্ষাবোদ্ধা বলে, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ‘যদির’ বিকল্প নেই। যদি হেলিকপ্টারে চড়ে সারাদেশে ঘুরে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকিয়ে দিতে পারে; অথবা সে এমন কোন বুদ্ধি বের করবে; যা আমাদের মাথায় আসে না।

ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যাওয়ায় হতাশ এক সচেতন জনতা বলে, ‘যদিই’ হয়তো পারবে এই ব্যাংক লুট ঠেকাতে। হাতের কাছে বিকল্প রেখে আমরা অন্ধকারে পথ হারিয়েছি।

একুশে বই মেলায় মানসম্পন্ন বই আসছে না বলে আক্ষেপ করে একজন বোদ্ধা পাঠক মন্তব্য করেন, ‘যদি’ গ্রন্থ রচনা করলে আজ জ্ঞানের জগতে এই খরা সৃষ্টি হতো না। জ্ঞানের জগতে ‘যদির’ বিকল্প নেই।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গিয়ে একদল পর্যটক সমুদ্রের নীল জলে পা ভিজিয়ে একরকম অতৃপ্তি নিয়ে বলে, ‘যদির’ উপস্থিতি ছাড়া সমুদ্র সৈকতে ঘুরে আনন্দ নেই। সমুদ্র বিলাসে ‘যদির’ কোন বিকল্প নেই।

আরেকদল পর্যটক গাড়িতে বসে নিমকি আর রসগোল্লা খেতে খেতে বলে, ‘যদির’ অনুপস্থিতিতে রসগোল্লার মিষ্টতা হ্রাস পায়। মিষ্টতার ক্ষেত্রে ‘যদির’ কোন বিকল্প নেই।

‘যদির’ বিকল্প নেই; এই পাঞ্চ-লাইন খুব আকৃষ্ট করে এক ব্যর্থ ক্যান্ডি কোম্পানির উদ্যোক্তাকে। সে তাই দ্রুত বাজারে নিয়ে আসে ‘যদি ক্যান্ডি’।

টিভিতে ‘যদি ক্যান্ডি’র প্রমোশনাল চলে।
“আপনি কী বিষণ্ণ! চারপাশের উন্নয়ন আপনার চোখে পড়ে না!
আজই ‘যদি ক্যান্ডি’ খান; নিমেষেই উন্নয়ন বসন্তের মাতাল হাওয়ায় উন্মাতাল হয়ে পড়ুন। তারুণ্যকে খুঁজে পেতে ‘যদি ক্যান্ডি’র বিকল্প নেই।”

‘যদি ক্যান্ডি’ খেয়ে একটা বসন্ত বাতাসের ঝিমুনি আসে তরুণদের মাঝে।
লম্বা চুল গিটার হাতে যারা অযথা বিপ্লবী গান গেয়ে উন্নয়নের শত্রু হয়েছিলো; তারা সমস্বরে গাইতে থাকে, মন কী যে চায় বলো; যা দেখি লাগে ভালো।

টকশোর বুদ্ধিজীবীরা টকশোতে যাবার আগে ‘যদি ক্যান্ডি’ পকেটে নিয়ে যায়। এই ক্যান্ডি খেলে উন্নয়নের পরিসংখ্যানগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। মনে হয়, অল ইজ ওয়েল।

তরুণ-মাঝবয়েসী-বৃদ্ধ সবার মাঝে ‘যদি ক্যান্ডি’ তোলপাড় তোলে। মনটা এতোই ইতিবাচক হয়ে পড়ে যে, সমাজের কোন অনাসৃষ্টি আর মনে দাগ কাটে না। একটা "ফিল গুড" আবেশে মন মথিত হয়।

সাঁঝের পর থেকেই ‘যদি ক্যান্ডি’র আবেশ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। গাছে গাছে ফুল ফোটে; পাখিরা কিচির মিচির করে, ঝিমুনি আসে; অথচ সারারাত জেগে থাকতে ইচ্ছা করে। আকাশের চাঁদ এসে জানালায় ঝুলে থাকে। ব্যালকনিতে গেলে আকাশ থেকে শিউলি বৃষ্টি হয়।

এক গোবেচারা তরুণকে পুলিশ রাস্তায় ধরে; তরুণের পকেটে দুটি ‘যদি ক্যান্ডি’ টুক করে রেখে দিয়ে বলে, আপনাকে পকেটে এই ক্যান্ডি রাখার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হলো।

তরুণ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, এই ক্যান্ডি আমার পকেটে এলো কীভাবে জানি না। আমি নির্দোষ।

পুলিশ হেসে বলে, আইনের শাসন উপহার দিতে আপনাকে গ্রেপ্তার করা জরুরি। দেখলেন তো এই ক্ষেত্রেও “যদি ক্যান্ডির’’ কোন বিকল্প নাই।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ