প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ০৭ এপ্রিল, ২০১৮
চারিদিকে তখন ‘ট্যাকা দেন দুবাই যামু’র যুগ। ডাবলুর ভালো লাগে না প্রতিদিন পাড়া-প্রতিবেশীর খোঁটা; কীরে ডাবলু, বইসা বইসা আর কত খাবু!
ডাবলু রেগে যায়, বাপেরটা খাই; আপনে কী একবেলাও খাইতে দেন আমারে।
পাড়ার মোড়ের ফজলু ভাই একদিন ভুঁড়িতে টোকা দিয়ে বলে, বাপের হোটেলে খাইয়া বেশ নাদুস-নুদুস হইছতরে।
মোড়ের চায়ের দোকানের আদিল ভাই বেশ খোঁজ খবর রাখে চারপাশের। তার পরিচিত মানুষের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই বেশী। ডাবলু আদিল ভাইয়ের কাছে কেরিয়ার কাউন্সেলিং-এর জন্য যায়।
আদিল ভাই বলে, অপশন দুইটা; হয় পলিটিক্যাল পার্টির ক্যাডার হইয়া চাঁদা তুইলা খা; নাইলে দুবাই চইলা যা। প্রথম কাজটায় দুর্নাম হবে। দ্বিতীয় কাজটা ভালো।
ডাবলু বাড়িতে এসে মায়ের পায়ে পড়ে যায়, ট্যাকা দেন; দুবাই যামু।
আদিল ভাইয়ের জোগাড় করে দেয়া এক আদম-ব্যবসায়ী ডাবলুর দুবাই যাবার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু ডাবলুর আব্বা বলে দেয়, হবে না; ডাবলুরে দিয়া কিছু হবে না। এর পিছনে টেকাটুকা নষ্ট কইরা লাভ কী!
"ডাবলুরে দিয়া কিছু হবে না" এই বাক্যটি ডাবলুর বুকে এসে লাগে। আদিল ভাইয়ের দোকানে আদম-ব্যাপারী লোকটা বলে, দুঃখ কইরো না ডাবলু। তোমার নাম ডব্লিউ। তোমার জন্যে বেস্ট বিজনেস হইতেছে হুইস্কি বিক্রয়।
আদম-ব্যাপারী হাতে-কলমে ডাবলুকে শিখিয়ে দেয় হুইস্কি কীভাবে বানাতে হয়। বাড়িতেই একটা ঘরে বাবলু শুরু করে খুশীজল তৈরি ও গোপনে বিক্রয়।
আদিল ভাইয়ের জনসংযোগের গুণে খুশীজলের গুণমুগ্ধরা সবাই ডাবলু ডিস্টিলারিজের ঠিকানা জেনে যায়। তবে বিক্রির কাজটা চলতে থাকে গোপন অভিসারে।
ডাবলু সিল্কের পাঞ্জাবি পরে বাইকে চড়ে এলাকার নতুন নবাব হিসেবে পরিচিতি পায়। পাড়া প্রতিবেশীরা গোয়েন্দা সংস্থার মতো চোখ রাখে ডাবলুর বাড়ির দিকে। তারা জেনে যায় ব্যাপারটা। ডাবলুকে ডেকে কড়া ধমক দিয়ে প্রতিবেশীরা জানিয়ে দেয়, এখানে এসব করা যাবে না।
বিপদে পড়ে আদিল ভাইয়ের শরণাপন্ন হয়। আদিল ভাই বলে, অসুবিধা কী! আল্লাহরে ডাকো! রাখে আল্লাহ মারে কে!
ডাবলু তার লেবাস পালটে হুজুর হয়ে যায়। ধর্মীয় অনুভূতির স্থানীয় ঠিকাদারদের সঙ্গে ওঠা-বসা শুরু করে। তাদের সঙ্গে বিরিয়ানি খেতে খেতে একধরণের ক্ষমতায়ন অনুভব করে। ফলে খুশীজলের ব্যবসাটা চলতে থাকে জোরেশোরে।
ডাবলু তার বন্ধু "অনুভূতির ঠিকাদার"-দের দিয়ে নিজের বাড়ির সামনের রাস্তা বন্ধ করে ওয়াজ-মেহেফিলের আয়োজন করে। সারারাত অনুভূতির ঠিকাদারদের চোটপাটে এলাকার লোকজন ভয় পেয়ে যায়। ফতোয়া আসে, কোন বাসা থিকা যেন গানের শব্দ না আসে। এইগুলি হারাম। আর মা-বইনেরা পর্দা-পুসিদাসহ ঘোরাফেরা করুন। তবে গৃহ হইতে বাহির না হওয়াই উত্তম। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে বেহেশতের মেওয়া। গুনাহ করিও না।
ডাবলুর নাম ওয়াজিব আবে হায়াত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লম্বা দাড়ি; গোঁফ চেঁচে ফেলা, চোখে সুরমা দেয়া, মাথায় পাগড়ি, আরব শেখদের মতো আজানুলম্বিত আবায়ায় নতুন এক ডাবলুকে দেখতে পায় এলাকাবাসী।
হুজুরেরা পরামর্শ দেয়, আবে হায়াতের ব্যবসা কমাইয়া বালুর ব্যবসা ধরেন হুজুর, মরুভূমির তপ্ত বালুর অনুভূতি পাইবেন। সর্বক্ষণ মনে পড়বে সোনার মদিনার কথা।
আদিল ভাই উপদেশ দেয়, সরকারে এখন ধর্মের খুব কদর।অগো লগে ভিইড়া যা। দেশপ্রেমের ঠিকাদারিডা ল; আর ধর্মের ঠিকাদারি তো আগেই কবজা করছস।
ডাবলু এবার বাড়ির সামনের রাস্তা বন্ধ করে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও মিলাদ মেহেফিলের আয়োজন করে। সভার বক্তারা সবাই দেশপ্রেমের ঠিকাদার। পাড়া-প্রতিবেশী তাদের ধমকে অস্থির হয়ে যায়। বক্তারা বলে, উন্নয়নের শত্রুদের রেহাই নাই; পাকিপ্রেমিরা পাকিস্তান চইলা যাও। সবাইকে নূহের নৌকায় উঠতে হবে; নাইলে নিস্তার নাই।
মিলাদ মেহেফিল পর্বে ধর্মের ঠিকাদার বক্তারা আবার ধমক দেয়, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেইখা বেলেল্লাপনা শিখতেছো যারা; তারা ভারত চইলা যাও। মহিলারা পর্দা-পুসিদা না করলে সানি লিওনের ড্যান্স দেইখা উত্তেজিত যুব-সমাজের জন্য বেপরোয়া হওয়া ওয়াজিব।
অনুষ্ঠান শেষে ডাবলু বাড়ি ফিরে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে। একটা জাদুর কার্পেটে চড়ে মরুভূমি সদৃশ বালুমহালের ওপর দিয়ে আকাশে উড়তে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়। ধর্ম ও দেশপ্রেমের ঠিকাদার ওয়াজিব আবে হায়াত ওরফে ডাবলুর জন্য এমন পবিত্র স্বপ্ন ওয়াজিব।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য