আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কোটা আন্দোলনের উদ্দেশ্য সৎ নয়

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল  

কোটা বিরোধিতার নামে মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী যে আন্দোলন শুরু করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কোনভাবেই সৎ নয়। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলন ও একাত্তর টিভিতে নুরুল হক নুরুর বক্তব্যের পর সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে, এ আন্দোলন সম্পূর্ণভাবে জামাত-শিবিরের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের অভিযোগ তাদেরকে শিবির ট্যাগ দেয়া হচ্ছে। অতীত ইতিহাস উহ্য রাখলেও কেন তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে তা উল্লেখ করছি।

গত কয়েক মাস ধরে কোটা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতে টিভিসি, গান ও টেলিফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড চলেছে ভিত্তিহীন কিছু বিষয় ও তথ্যের উপর।

১.
অপপ্রচারের অন্যতম ইস্যু ছিল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। ইস্যুটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন, যেকেউ টাকা দিলেই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নিতে পারে। এ অপপ্রচারের উদ্দেশ্য ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা যেন তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে ইতস্তত বোধ করেন এবং রাজাকাররা যেন মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া বলে তাচ্ছিল্য করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় তালিকায় যাদের নাম ছিল তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা সরকারেরও নেই। এছাড়া যারা মুজিবনগর সরকার সংশ্লিষ্ট ছিলেন কিংবা কাদেরিয়া, হেমায়েত বাহিনী বা পুলিশ-আনসার ইত্যাদি বাহিনীতে থেকে কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, শুধুমাত্র তারাই সার্টিফিকেট পাওয়ার যোগ্য। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমান্ডারের অনুমোদনসহ কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। অনেকে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও সহযোগিতা করেছিলেন। মূলত এ কারণেই বঙ্গবন্ধু আমলের ৬৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৮৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে। কোনো ধরণের ভূমিকা না রেখে সার্টিফিকেট পাওয়া ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা খুব বেশি হবে বলে মনে হয় না।

তাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ইস্যু তুলে উপহাস করা অনাকাঙ্ক্ষিত।

বুধবার নুরুল হক নুর স্বীকার করেছে যে, এ আন্দোলন ৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান কোটার বিরুদ্ধে শিবিরের শুরু করা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ইস্যুটি কিভাবে ভাইরাল করতে আহবান করা হয়েছে তার প্রমাণ ফেসবুকে রয়েছে।

২.
আসিফ নজরুল নারী কোটার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছে। অথচ সরকারি দপ্তরে নারী কর্মকর্তা খুবই নগণ্য। আমরা টেকসই উন্নয়নের যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি তার অন্যতম শর্ত নারীর ক্ষমতায়ন। নারীরা নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে এমন মনে করি না কারণ প্রকৃত চাকুরী প্রার্থীদের ৫%ও এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নি। শিবির পাঁচ দফার ভিত্তিতে চলে বলে পাঁচ দফা দাবি দিয়েছে কিনা জানি না, তবে দফাগুলো সম্পর্কে তারা ভালোভাবে অবগত নয়। যেমন: বিশেষ নিয়োগ বাতিল করার দাবি করেছে, এদিকে ৩৯তম বিসিএসে বিশেষ নিয়োগ হচ্ছে।

৩.
কোটা নিয়ে সময় টিভির আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাশেদ খান তথ্য দিয়েছিলেন ৩% লোকের জন্য ৫৬% কোটা। এ তথ্যই প্রচার হয়েছে ব্যাপকভাবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইবার পর কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ হয়। কিন্তু প্রচার করা হয়েছে যেন কোনো প্রকারে গ্র্যাজুয়েশন করলেই কোটায় চাকরি হয়। কোটার কারণে বিসিএসে না টিকে রিকশা চালাচ্ছে এমন হাস্যকর বিষয় নিয়ে টেলিফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া কোটার সুবিধাভোগীরা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তৎপর এমন দাবি করা হয়েছে অহরহ।

৪.
যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তদন্তে জড়িতদের পরিচয় পাওয়া গেলে মামলা কার্যকর হয়। অজ্ঞাতনামাদের নামে দাখিল করা মামলা প্রত্যাহারের অর্থ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে হামলার ঘটনায় কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

নুরুল হক নুরু নিজেই বলেছে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে অবগত থাকা সম্ভব না। আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা যদি হামলায় জড়িত না হয় তাহলে মামলায় কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। মামলা প্রত্যাহারের দাবি শুধু অযৌক্তিকই নয়, এমন দাবি এ যাবত কেউ করে নি। দুরভিসন্ধি না থাকলে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমন দাবি করতে পারে না।

৫.
আন্দোলনকারীদের একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে যা মূলত আওয়ামী লীগ বিরোধিতার প্লাটফরমের ভূমিকা পালন করছে। সেখানে বিএনপি-জামাত ছাড়া অন্যদের ব্যান করা হয় বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। চরম উস্কানিমূলক পোস্ট এপ্রুভ হয়। নুরু মিয়া, দ্বীন মোহাম্মদ, মশিউর, মৌ সহ গ্রুপ এডমিন-মডারেটরদের অনেকের রাজনৈতিক মনোভাব তাদের পোস্ট ও বক্তব্যে ফুটে ওঠে। তাদের অনেকের প্রোফাইলে ২০১৩ সালের কোনো পোস্ট নেই, কারণ বলার অপেক্ষা রাখে না।

৬.
মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য বিকৃতি, মৃত্যুর গুজবসহ নিজেদের অতীত ঢাকতে এডিট থিওরি ইত্যাদি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে নি। সবচেয়ে বড় কথা যারা মুক্তিযুদ্ধ বা বঙ্গবন্ধু নিয়ে কখনো একটি শব্দ লেখেনি তারা ২০১৮ সালে জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে এটি যৌক্তিক মনে হয় না।

সহজ ভাষায় বললে এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি এবং/অথবা আন্দোলনে যে অর্থের যোগান তারা পেয়েছে সেই পরিমাণ টাকা তারা এর আগে দেখেনি। কর্মসূচি মানেই টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা - তাই ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। ৭ দিনের যে আল্টিমেটাম তারা দিয়েছে তাতে তাদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে হচ্ছে।

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ