প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নামগুলি কিভাবে উচ্চারণ করতে হয় বুঝতে পারছি না। Wa Lone ও Kyaw Soe Oo, বাংলায় কিভাবে লিখব? ওয়া লন আর খাও শো উ? ঠিক আছে এইভাবেই লিখলাম।
এরা কারা সে তো ইতিমধ্যেই সারা দুনিয়া জেনে গেছে। মায়ানমারের দুইজন সাংবাদিক এরা। রয়টার্সের মিয়ানমার প্রতিনিধি। এদের দুইজনেরই সাজা হয়েছে মিয়ানমারের আদালতে- সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। কেন? সরকারি নথি থেকে ওরা তথ্য প্রকাশ করেছে। রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নির্যাতন সংক্রান্ত তথ্য। এইটার জন্যে সাত বছরের জেল? জি। এইটাই আইন। সাত বছর তো কমই, এই আইনে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারতো ওদের। মিয়ানমারের আইন সদয় হয়ে সাজা কম করে দিয়েছে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে কী জানেন? পুরো ঘটনাটা যদি বাংলাদেশে ঘটতো, অর্থাৎ বাংলাদেশে রয়টার্সের দুইজন প্রতিনিধি যদি বাংলাদেশের সেনা নৌ বা বিমান বাহিনী জড়িত আছে সেরকম কোন নিরযাতনমূলক ঘটনার তথ্য বাংলাদেশ সরকারের কোন নথি থেকে গোপনে বের করে রয়টার্সে পাঠিয়ে দিত বিশ্বজুড়ে প্রকাশ করার জন্যে, তাইলে ওদেরও ঠিক একইরকম অপরাধ হতো এবং, সরকারের ভিন্নরূপ ইচ্ছা না থাকলে, ওদেরও এইরকম সশ্রম কারাদণ্ড হতো। এইখানে আমাদের দেশের যে আইন আছে সেটা যে ভিন্নরকম কিছু সেরকম প্রত্যাশা করবেন না যেন।
আমাদের দেশের আইনটা হচ্ছে দি অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩। কলোনিয়াল সময়ের আইন। যেসময় এই আইনটা তৈরি হয় সেসময় বার্মাও আমাদের সাথে ব্রিটিশ কলোনির অংশ ছিল। অনুমান করি বার্মা, অর্থাৎ এখনকার মিয়ানমার, ওরাও আমাদের মতো সেই ১৯২৩ সনের আইনটাই বলবৎ রেখেছে। এই অনুমানটা করছি কারণ খবরে যে আইনটায় ওদের শাস্তি হয়েছে সেটার নামও এইটাই- অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট। সুতরাং ধরে নেওয়া যায় যে ঐ একই আইন যেটা আমরা রেখে দিয়েছি সেটা মিয়ানমারও রেখে দিয়েছে।
২
অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ছাড়াও আমাদের এখানে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাও আছে। এইগুলি মিলিয়ে আমাদের দেশের সাংবাদিক বা আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যারা ফেসবুকে এটা সেটা পোস্ট করি কারো পক্ষেই সব কথা জানা থাকলেও বলা যায় না। কি কি কথা বলা যায়না সে তো আপনারা অনুমানই করতে পারেন। আমি উদাহরণ দিতে গিয়ে প্যাঁচে পড়তে চাই না।
এমনিতেই ভয়ে অর্ধেক কণ্ঠ রুদ্ধ করে বসে আছি। আমার আপনজন যারা আছেন ওরা স্পষ্ট কণ্ঠে বলে দিয়েছেন, পাহাড় নিয়ে কিছু লিখবে না, আদিবাসীদের নিয়ে কিছু লিখবে না। চুপ করে থাকো। টেলিভিশনওয়ালারা লোকজন জোগাড় করতে না পারলে মাঝে সাঁঝে কয়েকবার ডাকতো কথা বলার জন্যে। আমার নাকি মুখ পাতলা, জিভ আলগা, কী বলতে গিয়ে কী বলে ফেলি আর নিজের বিপদ ডেকে নিয়ে আসি এই ভয়ে টেলিভিশনে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।
আমিও মেনে নিয়েছি। কী করবো! বয়স হয়েছে। বিদেশে তো পালাবো না। বিদেশ গিয়ে থাকতে পারিনা। জেলে যেতে অসুবিধা নাই, কিন্তু মারধর খাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা আর নাই। এমনিতেই কয়েকটা দাঁত পড়ে গেছে। তবুও মুখ চেপে হাসি দিলে এখনো ফটোতে আপনারা দুই চারটা লাইক-ফাইক মারেন। এখন পুলিশের বা ফান্ডামেন্টালিস্টদের ঘুষি টুসি খেয়ে যদি বাকি দাঁতগুলিও যদি যায়, তাইলে ঐ লাইকগুলিও যাবে। থাক। ঐসব উদাহরণ আর দিতে গেলাম না। তাছাড়া এই লেখাটা তো আসলে আমাদের বার্মিজ ঐ দুই সাংবাদিক ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি সংহতি এইসব জানানোর জন্যে লিখছি। সুতরাং ঐসব বাদ।
৩
ঐ বার্মিজ সাংবাদিক ভাইদের প্রতি সালাম, উনারা সাহসিকতার কাজ করেছেন। উনাদের মুক্তি দাবি করি। কিন্তু সহসা যে উনারা ছাড়া পাবেন সেটা মনে হচ্ছে না। মিশরে আলজাজিরার দুইজন এখনো জেলে আটকা আছে। প্রতিবাদ চলছে সারা দুনিয়ায়। বার্মিজ এই দুই ভাইয়ের জন্যেও নিশ্চয়ই প্রতিবাদ হবে। প্রতিবাদও চলবে, ওরাও জেলে থাকবে। তবুও প্রতিবাদ করাটা জরুরি। কেন? কারণ প্রতিবাদ না হলে এই রকমের অসভ্য আইন বা এইসবের প্রয়োগ ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না। সুতরাং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও প্রতিবাদ চালু রাখতে হবে।
তাইলে আপনারা, আমাদের দেশের সচেতন রাজনৈতিক কর্মী, এক্টিভিস্ট সাংবাদিক, আপনারা তো নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবেন। করবেন না? অবশ্যই করবেন। আমিও করি। আমার একটা অনুরোধ শুধু শোনেন, আপনারা যখন প্রতিবাদ করবেন, তখন মেহেরবানি করে আমাদের দেশে যে এইরকম অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আর ঐ যে ৫৭ ধারা আছে সেগুলি নিয়েও একটু প্রতিবাদ করবেন। বিশেষ করে সরকারের সমর্থক রাজনৈতিক কর্মী আর সাংবাদিক যারা আছেন, আপনারাও প্রতিবাদটা করেন প্লিজ। কারণ ইতিহাস সাক্ষি, এইরকম কালো আইন বা অসভ্য আইনের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত কেউই রক্ষা পায়না। আপনারা জানেন কিনা জানিনা, স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্টের যেসব মন্দ বিধান ছিল, সেগুলির প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই।
আর কী বলবো! আপনারা বুদ্ধিমান, আপনারা বুঝেন তো সবই। আর অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ আইনটা দেখে নিতে পারেন। ফ্রিতে পাওয়া যায় অনলাইনে। আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখলেই পাবেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য