আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বাংলাদেশে জবাবদিহির মন্ত্রিপরিষদ হবে কি?

এখলাসুর রহমান  

শত ব্যর্থতাতেও বাংলাদেশে মন্ত্রীদের পদত্যাগের ঘটনা কখনও ঘটেনি। শিক্ষা আইনশৃঙ্খলা, সড়ক, রেল সর্বত্রই তাদের পদাসীনতার জয়জয়কার৷। দেশ ও দেশের মানুষ কী ভাবছে ও কী বলছে এসব ভাবার যেনো সময় নেই। দেশের মানুষের ভালো হচ্ছে না মন্দ হচ্ছে এনিয়ে চিন্তা করারও মনমানসিকতা নেই বুঝি কারো। শত ব্যর্থতাতেও মন্ত্রীগণ পদত্যাগের চিন্তা করেন না ও মন্ত্রিপরিষদও পদত্যাগের পরামর্শ দেয়না। অথচ ভিনদেশের চিত্র কী? পত্রিকায় লিখেছে: বুলগেরিয়ার তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভ। দেশটির পরিবহনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক উন্নয়নবিষয়ক এই তিন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার বয়কো বরিসভ বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের জন্য রাজনীতিবিদদের দায় নিতে হবে। এ দায় নিয়ে পরিবহনমন্ত্রী ইভালো মস্কোস্কি, আঞ্চলিক উন্নয়নমন্ত্রী নিকোলায় নানকভ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যালেন্টিন রাডভের পদত্যাগের দাবি জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর এই এই আহবানে সাড়া দিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিন মন্ত্রী তাদের পদত্যাগের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যালেন্টিন রাডভের বলেন, এ ধরনের একটি দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নিতে পারিনি।

গত শনিবার দেশটির উত্তরপশ্চিমে একটি শহরে বাস দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হন। এতে আহত হন আরও ২০ জন। দেশটির রাজধানী সোফিয়া থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার উত্তরে সভজে শহরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই নিহতের ঘটনার পর থেকে শহরটিতে শতশত মানুষ আন্দোলন করে আসছিলেন। তারা দাবি করেন, দেশের সড়ক বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর আমাদের বাংলাদেশের কী চিত্র?

সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানি ঘটলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কোন দায় নেই। মন্ত্রীর ব্যর্থতাকে পুঁজি করে একশ্রেণির মহল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ক্ষোভকে নিয়ে যায় সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে। মন্ত্রিপরিষদ ও প্রধানমন্ত্রী যদি বুলগেরিয়ার মতো ব্যবস্থা নিতো সরকার পতনের আন্দোলন কি দানা বাঁধতে পারতো তখন?

রাজধানীতে নিরাপদ সড়ক চাই দাবির আন্দোলন হলো আর ঈদের ছুটিতে স্বজনদের পাশে গিয়ে আনন্দ দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে স্বজনদের উপহার দিয়েছে শোক আর বেদনা। ঈদ পরবর্তী বাংলাদেশের পত্রিকায় আরও লিখলো: রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত। রাজধানীর মিরপুরে ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় রূপনগর থানা পুলিশের উত্তম কুমার সরকার নামের এক পুলিশ উপ-পরিদর্শক নিহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসটি ও ড্রাইভারকে আটক করেছে পুলিশ। পত্রিকায় লিখেছে: রোববার বিকেলে রাইনখোলা মোড়ে বাস চাপায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত এসআই উত্তম রূপনগর থানায় কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি এলাকায়।

মিরপুরের শাহ আলী থানা পুলিশ জানায় বিকেলে মোটরসাইকেল চালানোর এক পর্যায়ে ঈগল পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। যারা মানুষকে জানমালের নিরাপত্তা দেবে তাদের জীবনের নিরাপত্তাও কেড়ে নিচ্ছে আজকের সড়ক যোগাযোগ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এ নিয়ে যেন কোন দায় নেই। বরং চলছে নিজের দোষ চাপাতে পরস্পর বিরোধী দায় উত্থাপন।

সড়ক মন্ত্রণালয় বলছে সড়ক বানাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দোষ হচ্ছে সড়ক মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু এই মৃত্যুর দায় সড়ক মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কেউই নিচ্ছেনা। সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে কী বলবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুলগেরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে তিন মন্ত্রী বরখাস্ত হলো আর বাংলাদেশে শত মৃত্যু ও শত ব্যর্থতাতেও মন্ত্রীরা থাকেন দায়ের ঊর্ধ্বে।

মন্ত্রীরা শত ব্যর্থতাতেও থাকেন বহাল তবিয়তে। তাদের ব্যর্থতা ইস্যু করে দেয় সরকার বিরোধী ভূমিকার। মন্ত্রিপরিষদ ব্যর্থ ও বিতর্ক সৃষ্টিকারী মন্ত্রীদের ব্যাপারে যথাসময়ে যথার্থ ভূমিকা গ্রহণ করলে সরকার পতনের ইস্যু কি দমে যেতো না?

মন্ত্রীরাও অত্যন্ত সুকৌশলে প্রধানমন্ত্রীকে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে প্রচার করে নিজেদের জনরোষ হতে দূরে সরিয়ে রাখছে। মন্ত্রীগণ কথা বলার সময় এমন ভাবে কথা বলেন যে তারা সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করে চলেছেন। নির্দেশে হলে তাদের ব্যর্থতার দায়ও কি প্রধানমন্ত্রীর দিকে যায়না? মন্ত্রীদের ব্যর্থতা ও বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে কোন আলোচনা হয়না। মন্ত্রিপরিষদে নিয়মিত জবাবদিহি থাকলে সরকার পতনের ইস্যুও সৃষ্টি হতো না মন্ত্রীদের গণমুখিতাও বাড়তো, তাই নয় কি?

বুলগেরিয়ার কাছ থেকে বাংলাদেশ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সব দায় না নিয়ে যে মন্ত্রীর দায় তার ব্যাপারে কি পারেন না ব্যবস্থা নিতে? যদি তাই হতো তা কি দলের জন্য, সরকারের জন্য, দেশের জন্য ও মানুষের জন্য শুভকর হতো না?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ