প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ৩০ অক্টোবর, ২০১৮
কয়েকবছর আগে চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন বোমা মেরে যখন মানুষ হত্যা করা হলো, সেই হত্যাকাণ্ডের দায়ে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হাঙামা ভাঙচুর ইত্যাদির জন্যে মামলা হলো বেশ কিছু। আপনাদের মনে থাকার কথা যে সেগুলি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ এমন বেশ কজন বিএনপি নেতাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তখন আপানদের মধ্যে বেশ কিছু ভদ্রলোক বেশ ইয়ে করে বলেছিলেন যে, এইটা কিধরণের কথা, মির্জা সাহেবের মতো ভদ্রলোক কি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন নাকি ইত্যাদি।
এই অধম তখন আপনাদের এইসব নাকি সুরের কথার প্রতিবাদ করেছিল। অধমের সবিনয় বক্তব্য ছিল খুবই সোজা। শারীরিকভাবে মির্জা সাহেব বা মওদুদ সাহেব বা বেগম সাহেবা এইসব ভাঙচুর বা বোমাবাজিতে অংশ নিয়েছেন কি নেননি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরা নেতা। নেতার আহ্বানে তাদের কর্মীরা যেসব কর্মকাণ্ড করে সেগুলির দায়িত্ব নেতাকেই নিতে হবে। কর্মীরা যদি আপনার আহুত কর্মসূচির অংশ হিসাবে আমার গাড়ি ভাঙে তাইলে যে কর্মীটির হাতে লাঠি ছিল তার দায় আর নেতা হিসাবে আপনার দায় মোটামুটি সমানই।
এই কথাটার সমর্থনে আমি সেসময় একটি লেখায় সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা, একটি মামলার কথা আর মহাত্মা গান্ধীর দায় স্বীকারের কথাও উল্লেখ করেছিলাম। আপনাদের মনে থাকতে পারে, না থাকলে আমার ফেসবুকে খুঁজে দেখতে পারেন।
আজকে এই কথাগুলি আবার কেন বলছি? বলছি মৌলভীবাজার অঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘটের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাটি প্রসঙ্গে।
২
কী ঘটেছে সেখানে? সেটা আপনারা কাগজে দেখেছেন। একটি সাতদিনের শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিল উপজেলা সদর থেকে সিলেটের বড় হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সে করে যাচ্ছিল ওরা। অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়েছে ধর্মঘটী শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের বাধায় দেড় দুই ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে থাকার পর শিশুটির সেখানে মৃত্যু হয়।
আপনি অনুমান করেন তো। আপনার নবজাতক শিশুটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, আপনি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছেন। আপনার সাথে অ্যাম্বুলেন্স আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ওরা বলে দিয়েছে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা হতে পারে। আপনি যেতে পারছেন না, আপনার শিশুকে হাসপাতালে নিতে পারছেন না। কেন? একদল লোক অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখেছে- আপনার শিশুকে ওরা হাসপাতালে নিতে দিবে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, ধর্মঘটীরাও দেখতে পাচ্ছে।
এটা কী? এটা হয় একটি হত্যাকাণ্ড। একটি শিশুকে ঠাণ্ডা মাথায় ওরা হত্যা করেছে। আপনি হত্যার সংজ্ঞা খুলে দেখেন আইনের বইতে- একদল লোক যখন এমন কোন কাজ করে, যেটা থেকে ওরা জানে যে ওদের কাজের ফলে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে, সেটি হত্যাকাণ্ড, খুন- মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
এখন এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে কে দায়ী হবে? কার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করবে? যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকেছে কেবল ওরা? জি না। এই হত্যাকাণ্ডটির জন্যে এই ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতা বা নেতারা তারাও দায়ী। হত্যাকাণ্ডের জন্যে বা খুনের জন্যেই দায়ী। কেন? ওরা তো ঘটনাস্থলে ছিল না। তাইলে ওরা কেন দায়ী হবে? কারণ শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে রাস্তার পিকেটারটি পর্যন্ত সকলেই একই উদ্দেশ্য ও একই অভিপ্রায় নিয়ে এই কাজটিতে অংশ নিয়েছে।
৩
ধর্মঘট করেন বা হরতাল করেন যাই করেন, এমনকি যুদ্ধও যখন করে কেউ, মাঠের কর্মীদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে হয় যে অ্যাম্বুলেন্স ওদের কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। যুদ্ধরত জেনারেলের দায়িত্ব হচ্ছে নিশ্চিত করা যে ওর সৈন্যরা কোন অ্যাম্বুলেন্সের উপর আক্রমণ করবে না। আমি নিজে পিকেটিং করেছি জিয়ার আমলে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। প্রতিটি হরতালের আগে খবরের কাগজে পাঠানো বিবৃতিতে, লিফলেটে সর্বত্র স্পষ্ট করে বলে দেওয়া থাকতো যে অ্যাম্বুলেন্স, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, খবরের কাগজের গাড়ি এইসব হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। এই ধর্মঘটের সময় এই কথা
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য