আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

শিশু হত্যায় দায়ী তারাও

ইমতিয়াজ মাহমুদ  

কয়েকবছর আগে চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন বোমা মেরে যখন মানুষ হত্যা করা হলো, সেই হত্যাকাণ্ডের দায়ে বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হাঙামা ভাঙচুর ইত্যাদির জন্যে মামলা হলো বেশ কিছু। আপনাদের মনে থাকার কথা যে সেগুলি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ এমন বেশ কজন বিএনপি নেতাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তখন আপানদের মধ্যে বেশ কিছু ভদ্রলোক বেশ ইয়ে করে বলেছিলেন যে, এইটা কিধরণের কথা, মির্জা সাহেবের মতো ভদ্রলোক কি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন নাকি ইত্যাদি।

এই অধম তখন আপনাদের এইসব নাকি সুরের কথার প্রতিবাদ করেছিল। অধমের সবিনয় বক্তব্য ছিল খুবই সোজা। শারীরিকভাবে মির্জা সাহেব বা মওদুদ সাহেব বা বেগম সাহেবা এইসব ভাঙচুর বা বোমাবাজিতে অংশ নিয়েছেন কি নেননি সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরা নেতা। নেতার আহ্বানে তাদের কর্মীরা যেসব কর্মকাণ্ড করে সেগুলির দায়িত্ব নেতাকেই নিতে হবে। কর্মীরা যদি আপনার আহুত কর্মসূচির অংশ হিসাবে আমার গাড়ি ভাঙে তাইলে যে কর্মীটির হাতে লাঠি ছিল তার দায় আর নেতা হিসাবে আপনার দায় মোটামুটি সমানই।

এই কথাটার সমর্থনে আমি সেসময় একটি লেখায় সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা, একটি মামলার কথা আর মহাত্মা গান্ধীর দায় স্বীকারের কথাও উল্লেখ করেছিলাম। আপনাদের মনে থাকতে পারে, না থাকলে আমার ফেসবুকে খুঁজে দেখতে পারেন।

আজকে এই কথাগুলি আবার কেন বলছি? বলছি মৌলভীবাজার অঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘটের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাটি প্রসঙ্গে।


কী ঘটেছে সেখানে? সেটা আপনারা কাগজে দেখেছেন। একটি সাতদিনের শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিল উপজেলা সদর থেকে সিলেটের বড় হাসপাতালে। অ্যাম্বুলেন্সে করে যাচ্ছিল ওরা। অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়েছে ধর্মঘটী শ্রমিকেরা। শ্রমিকদের বাধায় দেড় দুই ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে থাকার পর শিশুটির সেখানে মৃত্যু হয়।

আপনি অনুমান করেন তো। আপনার নবজাতক শিশুটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, আপনি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছেন। আপনার সাথে অ্যাম্বুলেন্স আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ওরা বলে দিয়েছে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা হতে পারে। আপনি যেতে পারছেন না, আপনার শিশুকে হাসপাতালে নিতে পারছেন না। কেন? একদল লোক অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখেছে- আপনার শিশুকে ওরা হাসপাতালে নিতে দিবে না। আপনি দেখতে পাচ্ছেন আপনার শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, ধর্মঘটীরাও দেখতে পাচ্ছে।

এটা কী? এটা হয় একটি হত্যাকাণ্ড। একটি শিশুকে ঠাণ্ডা মাথায় ওরা হত্যা করেছে। আপনি হত্যার সংজ্ঞা খুলে দেখেন আইনের বইতে- একদল লোক যখন এমন কোন কাজ করে, যেটা থেকে ওরা জানে যে ওদের কাজের ফলে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে, সেটি হত্যাকাণ্ড, খুন- মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

এখন এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে কে দায়ী হবে? কার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করবে? যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকেছে কেবল ওরা? জি না। এই হত্যাকাণ্ডটির জন্যে এই ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের শীর্ষ নেতা বা নেতারা তারাও দায়ী। হত্যাকাণ্ডের জন্যে বা খুনের জন্যেই দায়ী। কেন? ওরা তো ঘটনাস্থলে ছিল না। তাইলে ওরা কেন দায়ী হবে? কারণ শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে রাস্তার পিকেটারটি পর্যন্ত সকলেই একই উদ্দেশ্য ও একই অভিপ্রায় নিয়ে এই কাজটিতে অংশ নিয়েছে।


ধর্মঘট করেন বা হরতাল করেন যাই করেন, এমনকি যুদ্ধও যখন করে কেউ, মাঠের কর্মীদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে হয় যে অ্যাম্বুলেন্স ওদের কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। যুদ্ধরত জেনারেলের দায়িত্ব হচ্ছে নিশ্চিত করা যে ওর সৈন্যরা কোন অ্যাম্বুলেন্সের উপর আক্রমণ করবে না। আমি নিজে পিকেটিং করেছি জিয়ার আমলে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে। প্রতিটি হরতালের আগে খবরের কাগজে পাঠানো বিবৃতিতে, লিফলেটে সর্বত্র স্পষ্ট করে বলে দেওয়া থাকতো যে অ্যাম্বুলেন্স, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, খবরের কাগজের গাড়ি এইসব হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। এই ধর্মঘটের সময় এই কথা

ইমতিয়াজ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ