প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
বদরুল আলম | ০৪ নভেম্বর, ২০১৮
প্রিয় কবি সমর সেনকে দিয়ে শুরু করি, তিনি তাঁর একটি কবিতায় লিখেছেন,
আর, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?
তুমি যেখানেই যাও
আকাশের মহাশূন্য হতে জুপিটারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
লেডার শুভ্র বুকে পড়বে।
আসলে কবির প্রতি ভালোবাসা থেকেই কবিতার জন্য ভালোবাসা। সমর সেন অনেকেরই প্রিয় কবি। একটা সময় রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। কবিতা লেখা ছেড়েছেন এমন একটা সময়ে যখন তিনি জনপ্রিয়তার একদম শীর্ষে। এমন উদাহরণ খুব একটা দেখা যায় না।
সমর সেনের কবিতার যে দিকটি ভালো লাগে, সেটি মূলত তাঁর সমাজ সচেতনতা। সমাজসচেতনতা কবি সুকান্ত বা অন্য কবিদের কবিতায়ও আছে। কিন্তু সমর সেনের কবিতায় মুগ্ধ করার মতো ব্যাপার হচ্ছে সমাজসচেতনতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মানুষের ব্যক্তিগত আবেগ, প্রেম-ভালোবাসা -এসব বিষয়ও মাথায় রেখেছেন।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে একটু হাজির করি। তাঁর রোমান্টিকতা বাংলা সাহিত্যর বেশ বড় জায়গা দখল করে আছে। প্রেম ও অপ্রেম, প্রবল বেদনা ও শিখর স্পর্শী আনন্দ, প্রলয়-প্লাবন মহামারী আর সৃষ্টি-"মলয়-অনিল" নিশাবসান- এর মতো প্রবল বিপরীতমুখী প্রসঙ্গে-অনুষঙ্গে নজরুলের বিদ্রোহী প্রতিমা অবয়ব পেয়েছে। গড়নের ওই বৈপরীত্যে যাকে বলা যায় তুমুল বিরোধাভাস, কদম ফুলের শতমুখ সুক্ষ্ণ পাপড়ির মতো উন্মুখ যে রোমান্টিকতা, তারই সবচেয়ে সাধারণ অথচ অনন্য সাধারণ লক্ষণ। কবি তাঁর একটি কবিতায় লিখেছেন-
এসো বন্ধু, মুখামুখি বসি!
অথবা টানিয়া লহ তরঙ্গের আলিঙ্গন দিয়া , দুঁহু পশি
ঢেউ নাই যেথা-শুধু নিতল সুনীল!
....................................
সেইখানে ক'ব কথা। যেন রবি-শশী
নাহি পশে সেথা।
বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক শঙ্খ ঘোষ (তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞও। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন) তাঁর জার্নালে লিখেছেন: দিল্লি থেকে এসেছিল এক গল্প লেখক, তার "ইন্ডিয়া সিম্ফনি এন্ড অ্যাদার স্টোরিজ" সঙ্গে নিয়ে। পথে ঘুরতে ঘুরতে, ফ্রেস্কো দেখতে দেখতে, গাছের নিচে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পাশ দিয়ে চলতে চলতে প্রশ্ন করেছিলেন হঠাৎ- Don't you think that love is a dead thing? A thing of the past? উত্তরে একটা জোরালো রকমের "না" শুনে অট্টহাস্যে পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, oh you are incorrigible romantic! এ রকম ধারণা তো অনেকেরই, একটা ফ্যাশনও বলা যায়। আজকাল আধুনিক হওয়ার জন্য এসব কথা অনেকের মুখে শুনি। কিন্তু আধুনিকতা কি অপ্রেম, অস্বস্তি আর অমঙ্গল? ভালোবাসা কি আধুনিকতা নয়? কেন নয়? ভালোবাসাই পূর্ণতা এনে দেয়। এখনো মাতৃস্নেহ, সন্তানের প্রতি পিতার অপার মমতা, বন্ধুর জন্য বন্ধুর সহমর্মিতা শেষ হয়ে যায়নি। যাওয়ারও নয় কখনো। পৃথিবী এভাবেই চির নতুন হয়ে ওঠে। আমরা চিরনতুনের পক্ষে।
কাছে থাকো, তবু পাশে আসতে ভয় কেন। ভয় নেই আমি আছি নির্ভীক আগামীর যুদ্ধে। চলে এসো, যদি মন কাঁদে। প্রিয় কবি শহীদ কাদরী 'তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা' কবিতায় এরকম প্রিয়তমাকে অভয় দিয়েছিলেন-
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।
তবু কাছে, দুরে নয়। আরও অনেক কাছে, দুরে নয়। সত্যি কাছে, দুরে নয়।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য