প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ০৫ নভেম্বর, ২০১৮
মাদ্রাসার মাঠে ফুটবল খেলছিলো রাশেদ। হুজুর এসে ধমক দেন, সারাক্ষণ শয়তানের ডিম নিয়া খেলস ক্যান! চল ঢাকা থিকা একজন বুদ্ধিজীবী আসছেন। গিয়া উনার কথা শোন।
রাশেদ বড় হুজুরের দপ্তরে গিয়ে দেখে একজন আপাদমস্তক সাদা পোশাক পরা মানুষ। খুব আমোদ করে কথা বলেন। কথা বলার সময় সুমিষ্ট টকাস টকাস শব্দ হয়। উনি বক্তৃতা শুরু করেন।
--এই সমাজে ইনসাফ নাই। ধনবানেরা দরিদ্রদের মানুষ বলে জ্ঞান করে না। এ অবস্থা মার্কিন মুল্লুকেও ছিলো। সাদারা কালোদের নীচ বলে মনে করতো। কালোদের বাসে ওঠার অনুমতি ছিলো না। কিন্তু কালোরা ঠিকই তাদের ইনসাফ আদায় করে নিয়েছে। এটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি; এটা তারা শ্রেণি সংগ্রাম করে আদায় করেছে। ইনসাফ পাকা ফল নয় যে তা এমনিতে গাছ থেকে টুপ করে পড়বে। লড়াই করতে হয়। কি পারবে তোমরা ইনসাফ আদায় করে নিতে?
রাশেদের বন্ধুরা আর্তনাদ করে, নিশ্চয়ই পারবো হুজুর।
বড় হুজুর সংশোধন করে দেন, উনাকে স্যার বলো।
রাশেদকে অন্যমনষ্ক দেখে ঢাকা থেকে আসা স্যার জিজ্ঞেস করেন, কী এতো ভাবছো খোকা! তুমি তো কিছুই বললে না।
রাশেদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তারপর ভদ্রলোক অনর্গল এমনভাবে কথা বলতে থাকেন যেন কোন ঐশ্বরিক শক্তি ভর করেছে তার ওপর।
পরে ঘরে ফিরে রাশেদের বন্ধুরা শ্রেণিসংগ্রামের গল্প করে। বাসেত উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, ভদ্রলোক অনেক জানেন। কথায় কথায় নানান বইপুস্তক থিকা লাইন তুইলা কথা বলেন।
কী রে রাশেদ! তুইতো ভাবুক; পারবি উনার মতোন বুদ্ধিজীবী হইতে!
রাশেদ আবারো অন্যমনষ্ক হয়ে মোবাইল ফোনে একটা লেখা পড়ছিলো।
বাতেন বিরক্ত হয়ে বলে, হয় শয়তানের ডিম নিয়া মাঠে দৌড়াদৌড়ি; নাইলে শয়তানের যন্ত্র নিয়া খোঁচাখুঁচি; কীরে দোস্ত কী হইছে তোর!
এরপর একদিন হুজুর এলান করেন, ঢাকা দখল হইবো; সবাই রেডি হও।
রাশেদ জিজ্ঞেস করে, ঢাকা দখল ক্যান করতে হবে হুজুর!
হুজুর ধমক দিয়ে বলেন, বেদ্দপ পোলা; মুখের ওপর সওয়াল জওয়াব করো!
প্রবল অনিচ্ছা নিয়ে ট্রেনের ছাদে বসে আকাশের তারা দেখতে দেখতে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকা দখলে যায়। ক্ষিদা-ঘুম-ক্লান্তি মিলিয়ে ধস্ত হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম ঢাকা যাওয়ার রোমাঞ্চটা অবশ্য বেশ জাগিয়ে রাখে। সমাবেশ স্থলে বড় হুজুরের আসতে দেরি হবে; এ কথা জানার পর রাশেদ বেরিয়ে পড়ে ঢাকা দেখতে। পুলিশ জায়গায় জায়গায় তাকে সার্চ করে; সন্দেহের চোখে তাকায়।
রাশেদ মোবাইল ফোনে পড়েছে; অত্যন্ত উদারমনা মানবিক মানুষদের একটি মুক্তাঞ্চল আছে। সেইখানে যাওয়ার আগ্রহ অনেকদিন ধরে মনের মধ্যে উঁকি দেয় তার। আজ সেখানে পৌঁছে আনন্দ হুঁই দেয় মনে। এক জায়গায় দেশের গান হচ্ছে। খুব আনন্দ পায় সে এই জীবন মেলায়।
এক বেশ পাকা সংস্কৃতি মামা ওর মাদ্রাসার হুজুরের মতো ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, এইখানে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করতেছোস ক্যান! ছাগু কুনহানকার। পুলিশে দিয়া দিমু কইলাম তরে শয়তান।
এক তরুণ বলে, দেখছে দেখুক না পথিকৃৎ বাতেন ভাইয়া।
সংস্কৃতি বুবু অনন্যা কুলসুম বলে, হি ইজ সো ফানি; ওর চেহারার দিকে তাকালেই হাসি পায়। প্লিজ ওকে বিদায় করো; নইলে আমি কবিতা পড়তে পারবো না; হেসে ফেলবো।
এক তরুণী বলে, একজন মানুষকে নিয়ে হাসার কী আছে। তুমি দেখো ভাই আমাদের অনুষ্ঠান।
রাশেদের ভালো লাগে। গান-কবিতার জগতে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাত মনে পড়ে বড় হুজুরের সমাবেশের কথা। অনেক অনিচ্ছা নিয়ে সমাবেশ স্থলে পৌঁছায়। শোনে হুজুর চলে গেছেন। কিন্তু অবস্থান ধর্মঘট জারি থাকবে। রাস্তার ওপর বসে সে আজ শোনা গান গুনগুন করতে থাকে। আচম্বিতে কী যেন হয়! সবাই উঠে হুড়মুড় করে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। মুখ বরাবর একটা পাথর এসে লাগে। রক্ত পড়তে থাকে। পরে একজন পুলিশ এসে তাকে পিঠে করে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে যেতে বলে, কী ভাবতাছিলা দাঁড়াইয়া! ঐ ভাবে কেউ দাঁড়াইয়া থাকে নাকি।
মাদ্রাসায় ফিরে আসার পর রাশেদ ফেসবুকে খুঁজে খুঁজে পথিকৃৎ বাতেন ভাইয়া আর অনন্যা কুলসুমের লেখা পড়ে। তাদের আপলোড করা ছবিতে সেই তরুণ-তরুণীকে পেয়ে ভালো লাগে; যারা রাশেদকে মানুষ হিসেবে সম্মানিত করেছিলো।
এরপর বড় হুজুরের কাছে বড় বড় গাড়ি আর হেলিকপ্টারে বিরাট বিরাট লোকেরা দোয়া নিতে আসে। হুজুর বলেন, উনারা মোটা অংকের ভালোবাসা দিচ্ছেন।
রাশেদ ঠিক বোঝে না মোটা অংকের ভালোবাসা কী জিনিস! ভালোবাসা শব্দটাই অপরিচিত তার কাছে। একজন অনাথের আকাশে ভালোবাসা যেন অজানা দূরতম তারার চিহ্ন।
এরপর আবার বড় হুজুর এলান করেন, এবার ঢাকায় যেতে হবে ভালোবাসার শোকর আদায় করতে।
বাতেন জিজ্ঞেস করে, ইনসাফ কী পাইয়া গেছেন হুজুর!
হুজুর ধমক দিয়ে বলেন, বেদ্দপ পোলা; মুখের ওপর সওয়াল জওয়াব করো!
রাশেদের মনে আনন্দ হুঁই দিয়ে যায়। সে যেহেতু আগেই মুক্তাঞ্চলে গেছে; এবার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যায় সেখানে। ছবি তোলে তাদের নিয়ে; ফেসবুকে আপলোড করে।
কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে দেখে, পথিকৃৎ বাতেন ভাইয়া রাশেদের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, বড্ড আশাবাদি হচ্ছি এই তরুণদের সামনে জানালা খুলে যেতে দেখে। ঐ তো ওখানে আলো।
কালী মন্দিরের সামনে রাশেদ ও তার বন্ধুদের তোলা ছবি শেয়ার করে, অনন্যা কুলসুম বুবু লিখেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বসন্ত এসেছে; হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলো ঠিকরে পড়ছে চারপাশে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য