প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ১০ নভেম্বর, ২০১৮
শহীদ নূর হোসেন দিবস আজ। আজকের তরুণরা যারা নূর হোসেন হত্যার পরে জন্মেছেন আপনারাও তো সকলেই নূর হোসেনের সেই ছবিটা দেখেছেন। ওর বুকে পিঠে লেখা স্লোগানগুলি পড়েছেন। আমরা যারা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছি আমাদের অনেকের মধ্যেই আজকের দিনে দেখবেন একটা হতাশা হতাশা সুর। নূর হোসেনের ত্যাগ, আমাদের সকলের সেদিনের সংগ্রামটা কি তবে ব্যর্থ হয়ে গেল? গণতন্ত্র কি তবে আর মুক্তি পাবে না? স্বৈরাচার কি তবে নিপাত যাবে না?
এটা নিয়ে আমার মনে কোন হতাশা নেই। একটু রাগ আছে, হতাশা নেই। আমার কোন হতাশা নাই তার প্রথম কারণ হচ্ছে জেনারেল এরশাদের পতনের সাথে সাথে 'দেশে গণতন্ত্র চলে এসেছে, আর কোন সমস্যা নেই, তাথৈ তাথৈ' বলে আমি নৃত্য করার কিছু দেখিনি। কেননা আমাদের কাছে এরশাদের পতনটা জরুরি ছিল বটে, সেসময়ের জন্যে সবচেয়ে জরুরি, কিন্তু এরশাদের পতনের সাথে সাথে দেশে গণতন্ত্র চলে আসবে আর আমরা সবাই হ্যাপিলি এভার আফটার আরামে থাকবো সেইরকম কোন ইলিউশন আমাদের ছিল না।
মনে করেন আপনি একটা অভিযানে বেরিয়েছেন। পথে দেখলেন একটা অপ্রত্যাশিত উটকো ঝামেলা এসে জগদ্দল পাথরের মতো রাস্তা আটকে বসেছে। আপনি কী করবেন? আগে তো ঝামেলাটা সরাতে হবে। নাকি? পাথরটা সরাবেন তারপর আপনার অভিযান শুরু হবে আবার অভিযানের নিয়মে। এরশাদকে সরানোটা ছিল আমাদের সেই প্রতিবন্ধকতা সরানো। তিন জোট করে আন্দোলন হয়েছে, সকলেরই লক্ষ্য ছিল প্রতিবন্ধকতা সরানো। কিন্তু সকলেই কিন্তু আমার অভিযানের অভিযাত্রী ছিল না।
তিন জোটে একেকটি দলের যার যার নিজস্ব গন্তব্য ছিল। সকলেই চাইছিল যে ঐ পাথরটা সরানো যাতে করে সকলেই যার যার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। সেই সাথে আরেকটা লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যতে যেন এইরকম উটকো জগদ্দল আরেকটা এসে আমার পথ আটকে দিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা যায় কিনা সেটা দেখা। সংক্ষেপে বললে, এরশাদকে সরানো আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর অভিযানে একটা জরুরি পদক্ষেপ ছিল বটে, কিন্তু সেটা গন্তব্য ছিল না।
মুশকিল হয়েছে যে আমার যারা সহযাত্রী ছিলেন ওদের অনেকেই ঐ উটকোটাকে সরিয়েই নৃত্য শুরু করেছেন তাথৈ তাথৈ। ভেবেছেন কাজ হয়ে গেছে, এখন ঘুমাতে যাই। এদের একটা বড় অংশ জোটের বড় দলগুলির কাতারে যোগ দিয়েছেন, ভেবেছেন ব্যাস এইটাই গন্তব্য। আরেকদল আছেন যারা অভিযানটা ত্যাগ করেছেন। কেন? কারণ সেসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলো, আর আমার গাধা প্রকৃতির বন্ধুরা সহযাত্রীরা ভাবলেন যে, শেষ, আমার গন্তব্যটাতে পৌঁছানোর প্রত্যাশা শেষ। ব্যাস, এরাও অভিযান থেকে রিটায়ার করে আওয়ামী লীগের সরব নীরব বা নানারকম অভিনব ধরনের সমর্থকে পরিণত হলেন।
আমার অভিযানের সেই সহযাত্রীরা একটা বড় ক্ষতি করেছেন। আমাদের অভিযাত্রীদের কাফেলাটা দেখতে ছোট হয়ে গেল। আপনারাও বাইরে থেকে আমাদের এই ছোট অভিযাত্রীদের নিয়ে নানারকম খোঁচা-খোঁটা এইসব ছুড়ে দিতে থাকলেন। আমাদের কাফেলাটা শারীরিক শক্তিও হারালো, মানুষের আস্থাও হারালো, মনোবলও হারালো। কাফেলাটা যেন খানিকটা দিশেহারা হয়ে গেল।
এই যে আজকে আমরা বলছি নূর হোসেনের কথা, গণতন্ত্র মুক্তি পাক স্বৈরাচার নিপাত যাক, সেই সংগ্রামটা তো পরিণতি লাভ করেনি। এরশাদের পতন মানেই গণতন্ত্র মুক্তি পেয়ে গেল না। সে ছিল কেবল গণতন্ত্রের মুক্তির অভিযানের শুরু মাত্র। আপনারা সেটাকে মুক্তি ভেবে বসে পড়লেন। আপনারা তো হতাশ হবেনই। আপনারা নিজেরা হতাশ হয়েছে সেই সাথে আরেকটা ক্ষতি আমাদের দেশের, আপনারা আরেকটা জগদ্দল পাথর গজানোর সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের অভিযানের পথের মাঝখানে।
এই যে আজকে আমরা আটকে আছি, ঘুরপাক খাচ্ছি- ন্যুনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশটা পাচ্ছি না, এই পরিস্থিতি তৈরিতে আপনারা ভূমিকা রেখেছেন। একটু ভেবে দেখেন, কথাটা মাই ভুল বলছি না। এখন তাইলে কী করবেন? এখন অন্তত নিজের দিকে একবার তাকান। দেখেন কী করেছেন? ভাবুন এখান থেকে বের হবেন কী করে।
আমি তো আপানদেরকে একটা পথ দেখাতে পারি। আমি যে পথটা দেখি। যে লাল পতাকায় আমরা সেসময় বায়তুল মোকাররমে বা লালদিঘী ময়দানে পনের দলের স্বভাব লালে লাল করে দিতাম, সেই লাল পতাকাটা বের করেন। চলেন আবার লাল পতাকার রঙে শহর বন্দর গ্রামগুলি আবার রঙিন করে দিই। লাল ঝাণ্ডা নিয়ে পথে নামেন, পথে নামলেই পথ চিনতে পারবেন, চিনতে পারবেন পথের সাথীকে।
নুর হোসেনের প্রাণদান ব্যর্থ হয়নি- ফলাফল এখনো আসেনি, কিন্তু আসবে, জয় আমাদেরই হবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য