আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মাশরাফিও ত মানুষ!

ইমতিয়াজ মাহমুদ  

মাশরাফি বিন মুর্তজা পঁয়ত্রিশ কি ছত্রিশ বছর বয়সী ছয় ফুটের চেয়ে সামান্য বেশী উচ্চতার এদেশের একজন বিবাহিত পুরুষ নাগরিক। মিরপুরের দিকে কোথাও থাকে, ওর বাচ্চারা স্কুলে যায়।

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ওর পিতা এখনো জীবিত আছেন, পিতাপুত্রের সম্পর্কও ভালো। মাশরাফি সম্পর্কে শুনেছি, ওর এলাকায় লোকজন ওকে বেশ পছন্দ করে। সহজ জীবনযাপন, লোকজনের সাথে অনায়াস অনাড়ম্বর মেলামেশা, এলাকার মুরুব্বীদের সাথে বিনীত আচরণ করা, বন্ধুদের সাথে আন্তরিক, ছোটদের সাথেও অনায়াস স্নেহপ্রবণ বড়ভাইয়ের মতো আচরণ- এইসব মিলে মাশরাফিকে সকলে বেশ আপন আপন মনে করে।

আর সারা দেশের মানুষের কাছে মাশরাফি যে কি জিনিস সে তো আর বলে বুঝানোর কিছু নাই। আমরা সকলেই আমাদের এই ছেলেটিকে ভালোবাসি। আজ থেকে বহু বছর পরেও, যখন আমি থাকবো না, আপনি থাকবেন না, মাশরাফি বা ওর ছেলেমেয়েরাও থাকবে না, তখনো সম্ভবত বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা উঠলেই সারা দুনিয়ের মানুষ মাশরাফিকে উল্লেখ করবে।

এইসব কিছুর কারণে কি মাশরাফি তাঁর নিজের জীবনটা নিজের মতো করে যাপন করতে পারবে না? সে যখন বিবাহ করেছে তখন কি সে দেশের সকলের অনুমতি নিয়ে করেছে? নাকি ফেসবুকে পাত্রীর ফটো দিয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছে পাত্রী পছন্দ কিনা। সে ধর্ম পালন করে, ঘটা করে পুত্রকে সাথে নিয়ে ঈদের জামাতে যায়, আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যায়? সারা হাত মাখিয়ে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খায়, হয়তো সুড়ুত সুড়ুত করে প্লেট থেকে ডালও খায়। এগুলি ওর নিজের জীবনের ব্যাপার।

এখন মাশরাফি আওয়ামী লীগ করবে নাকি বিএনপি করবে সেটা কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করে করতে হবে? সে যদি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে চায়, সেটা ওর ইচ্ছা আপনার কি? আপনার যদি ইচ্ছা হয় ওর পক্ষে দুইটা কথা বলবেন বা ওর এলাকার ভোটার হলে ওকে একটা ভোট দিবেন। পছন্দ না হলে ভোট দিবেন না। ব্যাস। এর বেশী আর কি করার অধিকার আছে আপনার? বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলোয়াড় বলে কি সে নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে গেছে?

হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে ওর তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা আছে। সেই জনপ্রিয়তা সে নিজের লাভের জন্যেও ব্যাবহার করে। সেটাও তো অবৈধ কিছু না। কাল যদি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখেন যে মাশরাফি একটা মশা মারার স্প্রে হাতে নিয়ে বলছে যে , আসুক মশা ধরে দিবানি, আপনারা কি ওর নিন্দা করবেন? কেন করবেন? মানুষের পার্সোনাল এট্রিবিউট তো মানুষ নানারকমভাবে ব্যাবহার করে। পরশু যদি মাশরাফি একটা পাঞ্জাবীর দোকান খুলে বসে, কিছু মানুষ তো যাবে, যাই মাশরাফি ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবী কিনে নিয়ে আসি। এগুলি সবই বৈধ।

আর জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা তো এর আগেও ইলেকশন করেছে, নমিনেশন চেয়েছে, দলের পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছে। বাদল রায়ের কথা মনে নাই? আমাদের এই সংসদেও তো ফুটবলাররা এমপি আছেন। ক্রিকেটারও ইলেকশন করেছিল, আমাদের সাবেক ক্যাপ্টেন একজন, পাশ করেছিল কিনা ভুলে গেছি। মাশরাফির বেলায় এতো কুরকুরানি উঠে গেল?

না, আপনি ব্যাপারটা পছন্দ নাও করতে পারেন। আপনার মনে হতে পারে যে আওয়ামী লীগ একটি মন্দ দল, মাশরাফি কেন এই মন্দ দলে যোগ দিবে। মনে করতে পারেন যে আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে, মাশরাফি কেন স্বৈরাচারীদের দলে যোগ দিবে ইত্যাদি। এইগুলি তো হচ্ছে রাজনৈতিক মতামতের ব্যাপার। মাশরাফির সাথে এইসব ইস্যুতে আমার মতের মিল নাও হতে পারে, মাশরাফির মতামত আপনার কাছে ভ্রান্তও মনে হতে পারে। তার জন্যে আপনি তাকে রাজনৈতিকভাবে সমালোচনা করতে পারে।

কিন্তু আপনি যদি বলেন যে, আওয়ামী লীগের নমিনেশন চেয়েছে বলেই মাশরাফি মন্দ হয়ে গেছে বা যদি বলেন যে সে দুই নম্বরি হয়ে গেছে বা যদি বলেন যে তার দিকে ছুড়ে দিলাম এক রাশ ঘৃণা- এইটা তো ভাই মন্দ কথা। একজন লোক আওয়ামী লীগ করলেই আপনি ঘৃণা করবেন এটা কিরকম কথা? আমার মা সারা জীবন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে- তাঁকেও আপনি ঘৃণা করবেন? বাংলাদেশে একশজন মানুষের মধ্যে অন্তত তিরিশজন যে কোন অবস্থায় যে কোন পরিস্থিতিতে নৌকায় ভোট দেয়। এদেরকে আপনি ঘৃণা করবেন? এটা কিরকম কথা হলো?

ইমতিয়াজ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ