প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ১৫ নভেম্বর, ২০১৮
ফেইলড রাইটার্স সোসাইটি (এফ আর এস) সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলতে বেশ কিছু শিল্প-সাহিত্যের চেষ্টা করে। এক একজন গল্প-কবিতা-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধের জগতে ফাটিয়ে দিতে চেষ্টা করে। শহরের বইমেলা-সাহিত্যসভা-লিট ফেস্ট-টেস্টে গিয়ে প্রগলভ হয়ে সেলফি তোলেন এফ আর এস সদস্যরা। কেউ কেউ টিভির সাহিত্য অনুষ্ঠানে গিয়ে সাক্ষাত রবীন্দ্রনাথ কিংবা মহাশ্বেতা দেবী হয়ে পড়েন।
কিন্তু আপার চেম্বার বা মস্তিষ্কের ভাঁড়ার শূন্য হওয়ায় লেখার মধ্যে মালমসলা তেমন থাকেনা। রাইটার্স ক্যাটওয়াকে বেশ রাইটার রাইটার ভাব এলেও; ভাব আছে কিন্তু ভাষা নাই এই সঙ্কটে পাঠক দ্রুতই তাদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু এফ আর এস সদস্যরা রয়ে যায় একটা ইউফোরিয়া আর ইলিউশানের মধ্যে। যেখানেই যায় ঘুরে ফিরে নিজের লেখার গল্পটা তোলে। কেউ হয়তো বলছে তার বাচ্চাটা অসুস্থ। অমনি এফ আর এস সদস্য বলে, আমার অমুক গল্পটাতে তমুকের বাচ্চাটা অসুস্থ ছিলো; পরে সে ঠিকই সুস্থ হয়ে ওঠে।
কেউ হয়তো বলছে, সামনে ইলেকশান; কাকে ভোট দেবো এখনো ঠিক করিনি। অমনি কথাটা লুফে নিয়ে এফ আর এস বলে, অনেকগুলো পোর্টাল ইলেকশান নিয়ে ধারাবাহিক লেখা চাইছে। কীভাবে যে ম্যানেজ করবো। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে যে শূন্যতা লেখালেখির জগতে; যেন সেটাকে ভরাট করার দায় এই এফ আর এস-এর; তাই লেখার ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা।
কল্পনার জগতে কথাসাহিত্যিক জেইন অস্টিন হয়ে ওঠা এক এফ আর এস চেষ্টা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আধা খ্যাচড়া আলোচনা করে তাক লাগিয়ে দিতে। যাদের ইংরেজি অক্ষর দেখলে রীতিমত ভয় লাগে, তারা ভাবে; বাপরে এই রাইটার এতো মোটা মোটা ইংরেজি বই পড়ছে! এইভাবে পাঠক সমাজে সাহিত্যসাগর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে এফ আর এস সদস্যরা অনেকেই।
রাইটারদের নেম ড্রপিং বা নাম বলে তাক লাগিয়ে দেয়া রূপকল্পে পাঠক ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। অনেকে চিন্তা করে, ইটের থানের মতোন মোটা মোটা একেকখান বই, এইটা পুরাটা পড়েছে; কী প্রতিভাবান লেখকরে বাবা।
কিন্তু এই যে একটা সাহিত্যের বিশাল আবহ সৃষ্টি; আজ উপহার পেলাম বলে ইটের থানের মতো বই প্রদর্শনী; এতে যে রাইটার ইমেজ তৈরি হয়; তার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পায়না পাঠক এফ আর এস সদস্যদের লেখালেখিতে।
পাঠকেরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, রাইটারের কুচকাওয়াজ যতো দেখলাম; সেই তুলনায় লেখায় মালমসলা কিছুই পেলাম না। অথচ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কতো সহজ সরল ভাষায় কতো কঠিন কথা বলেছেন, সমাজ নামের প্রতিষ্ঠানের ইট খুলে নিয়েছেন একে একে। কী শহর-কী গ্রামের মানুষ তার লেখা বই পড়ে আনন্দ পেয়েছেন। এতো লিট ফেস্ট টেস্ট করতে হয়নি; রেলগাড়িতে তার বই বিক্রি হয়। মানুষ তার বই মুখে করে ট্রেনে বসে থাকে।
পাঠকের কাছে মৃত লেখকদের প্রশংসা শুনে শুনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে এফ আর এস সদস্যরা। ফেইলড রাইটার্স সোসাইটি (এফ আর এস)-এর চেয়ারপারসন সদস্যদের বলে, ডেড রাইটার্সদের যন্ত্রণায় আমাদের বিকাশের পথ রুদ্ধ। ইচ্ছা করে ওদের মড়া হাড় গোড় চিবিয়ে খাই। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত লেখকদের মধ্যে সে কঙ্কাল তৃষ্ণা জারিত হয়।
সদলবলে তারা ঢুকে পড়ে ডেড রাইটার্স গ্রেভ ইয়ার্ডে। সেখানে পাখিরা গান গায়; গাছের পাতারা দুলে দুলে সে গানের আবহ সংগীত তৈরি করে। সমাধিগুলোর ওপর বেড়ে ওঠা ফুলেরা দুলে দুলে নাচে। স্বর্গীয় এই পরিবেশ দেখে আরও বিক্ষুব্ধ হয় এফ আর এস সদস্যরা। একজন চিৎকার করে, ঐ দেখ এক শক্তিশালী কবির সমাধি। কয়েকজন ফুলগাছ উপড়ে খনন করতে থাকে কবর। হাড়-গোড় তুলে বিতরণ করে সবার মাঝে। আরেকজন চিৎকার করে, ঐ দেখ এক নন্দিত কথাশিল্পীর কবর। সেইখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরও কয়েকজন। আরেকজন আঙুল তুলে দেখায়, ঐ দেখো স্বর্ণযুগের এক নাট্যকারের কবর। সেখানে গিয়ে ফুল গাছ উপড়ে খনন করে হাড় গোড় তুলে চেবাতে থাকে পরমানন্দে। কেউ কেউ আনন্দে সেলফি দেয়। কেউ কেউ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখে, ডেড রাইটার্স সোসাইটিরে দেইখা নিছি এক হাত। অহন আপনাগো হাতে অপশন একটাই, খালি আমগো লেখা পড়বেন; সেইডা হউক বা না হউক।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য