প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
গোঁসাই পাহ্লভী | ১৬ নভেম্বর, ২০১৮
ভাবিতেছি অর্ধরাত্রি বিনিদ্র নয়ান-
কে দিয়েছে হেন শাপ, হেন ব্যবধান?
কেন ঊর্ধ্বে চেয়ে কাঁদে রুদ্ধ মনোরথ?
কেন প্রেম আপনার নাহি পায় পথ?
সশরীরে কোন নর গেছে সেইখানে,
মানসসরসীতীরে বিরহশয়ানে
রবিহীন মণিদীপ্ত প্রদোষের দেশে
জগতের নদীগিরি সকলের শেষে!
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নারীদের নির্যাতিত হবার কথা শুনলে বিস্ময় জাগে। আবার এই নির্যাতনের শিকার নারীরা, তারা শিক্ষিত, তারা শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা করেন। শিল্পসংস্কৃতি চর্চার বিষয়ে হাজার বছরের প্রসঙ্গ তোলেন, এই স্ববিরোধিতা যে কোনো মানুষকে বিস্মিত করবে। আমাকেও করেছে।
কেন এই বিস্ময় সে প্রসঙ্গে আসি। আমরা যখন হাজার বছরের শিল্পসংস্কৃতির কথা বলি, তখন সেই সংস্কৃতিকে আমরা নৈতিকতা মুক্ত, ধর্মমুক্ত, পুরাণমুক্ত ভাবি। এই যে অংশের ভাবনা, একই সাথে হাজার বছরের যে টাইমলাইন দেখানো হয়, এই দেখানোটা সংক্ষিপ্ত, এবং বিষয়ীর প্রবহমানতার দু’পাশে বাঁধ দিয়ে দেখার মতোই। অর্থাৎ হাজার বছরের ভেতর নারীদের উপস্থিতি যদি আমরা দেখি, তবে বর্তমান নারীদের নারীভাবনার এই ইতিহাস বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে সনাক্ত করা সহজ হয়। কারণ, বঙ্গে বীরদের, শক্তিমত্তা এবং যে সমস্ত পৌরাণিক চরিত্র রয়েছে, অধিকাংশরাই হচ্ছেন নারী। এখানকার দেবী মনসা হচ্ছেন নারী, দেবী কালী যাকে বলা হয়েছে কালিকা বঙ্গ দেশ চ:, কালী আর বঙ্গ যেখানে সমার্থক, সেই কালী শিবের বুকের ওপর দণ্ডায়মান। হাতে ১টি, গলায় ৫০টি নরমুণ্ড ধারণ করেছেন। রাধার কথা আর কী বলবো। কালীর প্রভাবকে হটিয়ে রাধাভাবে কেবল বঙ্গ নয়, এখন জগৎ মাতাচ্ছে। সেই রাধার জন্মও কবি জয়দেবের হাতে, গীতগোবিন্দে, এই বঙ্গে...
বঙ্গে চিরকালই নারীর আধিপত্য, আর এখন কিনা সেই নারীর থেকেই অভিযোগ ওঠে, বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে।
রাধা, কিংবা কালী এই দুই শক্তিশালী বাঙালি নারী চরিত্র একা নন। তাঁদের সাথে আছেন শিব এবং কৃষ্ণ। কালীশিব কিংবা রাধাকৃষ্ণের বিষয় হচ্ছে রাধাকৃষ্ণের সম্পর্ক। যে সমস্ত বইপত্র পাওয়া যায়, সবগুলোই হচ্ছে সম্পর্ক চর্চার ইতিহাস।
মানুষের সাথে মানুষের, প্রেমিকার সাথে প্রেমিকের, নারীর সাথে পুরুষের সম্পর্ক চর্চা কেমন হয়, এ বিষয়ে দলিলের তো অভাব নেই, তাহলে কোনো একটা পক্ষ থেকে নিপীড়ন শব্দটা কেন হাজির হয়। তাও আবার যৌন নিপীড়ন।
ঘাটতিটা কোথায়? ঘাটতি হচ্ছে দর্শনে, এই ভূমিতে কোন ফসল ভালো ধরে সেটা যেমন কৃষক জানে, এই জানাটা এখনকার নারীপুরুষ উভয়েরই অজ্ঞাত। কারণ, তারা কৃষক নয়। কৃষক কারা, কৃষক কোন কোন উপাদানে সৃষ্টি, এসব প্রশ্ন করারও সময় হয় নি বর্তমানে। এই ভূমির সম্পর্কের অর্গানিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্কের ধারণার বিষয়ে অজ্ঞতা, ব্যাপক সংখ্যক নারীপুরুষের ভাবনাকে কেবল শরীর নির্ভরই করে ফেলেছে। খুব কম নারীই এই অভিযোগ করেছে যে, উমুক পুরুষ আমাকে দার্শনিক কিংবা তাত্ত্বিকভাবে নিপীড়ন করেছেন। আমার তত্ত্ব তিনি অত্যাচারিত করেছেন। অভিযোগ প্রজ্ঞার বিষয়ে প্রজ্ঞার নয়, অভিযোগ দেহের বিরুদ্ধে দেহের দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ, শরীর কেবল শরীরের দ্বারাই নিপীড়িত হচ্ছে না, শরীর শব্দ, স্পর্শ, রূপ রস গন্ধ দ্বারাও যে নিপীড়িত হতে পারে, হয়, এ বিষয়ে কোনো অনুযোগ আসছে না! অথচ, শরীরের দ্বারা শরীরের নির্যাতনের থেকে শব্দ দৃশ্যের নির্যাতন ঘটে বেশি, সে বিষয়ে আলোচনাও খুব কম।
উপরে নারী নারী বলে যে কথাবার্তা বললাম, এই নারী শব্দটি বাংলা বা সংস্কৃত শব্দ নয়, তবে, দ্রাবিড় শব্দ, নারা, যার অর্থ জলরাশি, এই নারা শব্দ থেকে নারায়ণ, এবং নারী শব্দের আগমন ঘটতেও পারে।
এখানে নারী বলতে যে বায়োলজিক্যাল সত্তাকে বুঝানো হয়েছে, তাকে ভারতীয় দর্শনে প্রকৃতি বলা হয়। প্রকৃতি-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে সাংখ্য নামে একটি দর্শন রয়েছে।
আপনারা যেমন প্রকৃতি থেকে নারীতে, একটা লোগোজে রূপান্তরিত হয়ে ভাবছেন,বায়োলজিক্যাল পুরুষও আর সাংখ্যের পুরুষ নেই, নারীর বিপরীত লিঙ্গ হিসাবে নিজেকে হাজির করতে তৎপর!
বায়োলজিক্যাল বা বলি কোন অর্থে, পুরুষ কখন, কিংবা নারী কখন ঠিকঠাক লজিক্যাল হয়েছে? বায়ো কিন্তু লজিয়া সম্বলিত নারীপুরুষ এ দেশে নয়, পৃথিবীতেই বিরল।
বাঙালি নারী এবং পুরুষ নিজেদের ব্যতিত অন্যত্র কোনো দিশা পাবে না। হয় বিলুপ্ত হবে, না হয় দো আইচলা হবে, পোলার ইউনিটি ভুলে, পোলার অপজিট ভাবনা আত্মঘাতী!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য