আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি!

বদরুল আলম  

‘আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’- শিরোনাম একটু চমকে যাওয়ার মতোই। এ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখে নাই। আমাদের আগের প্রজন্ম দেখেনি, আমরাও দেখিনি (যদিও কথাটা একটু ভারিক্কি) কিন্তু হিমালয়কে তো দেখিয়াছি। তিনি হিমালয় সমান ছিলেন। আলজেরিয়ায় ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত জোট-নিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি (ফিদেল কাস্ত্রো) এ মহান নেতাকে বর্ণনা করেছিলেন এভাবে -"I have not seen the Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessingi the Himalayas." অর্থাৎ, আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।

নিউজ উইক সাময়িকীর রিপোর্টার রবার্ট জেন্কিন্স বঙ্গবন্ধুকে (Poet of Politics) রাজনীতির কবি বলেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন দর্শনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই এই দিকটার পরিচয় পাওয়া সম্ভব। তিনি অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কাহিনী শুরু করেছেন শেখ বংশের পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে। শেখ বংশ কোথা থেকে কীভাবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আসল সেসব ইতিহাসের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। আবার এটাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে তাদের পরিবার নিয়ে যেসব ঘটনা তিনি লিখছেন তার কোনটি সত্য আবার কোনটি কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করে তুলে ধরেছেন। শেখ বোরহানউদ্দীন নামক এক পুরুষ শেখ বংশের গোড়াপত্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর ৮ম পূর্বপুরুষ শেখ আবদুল আউয়াল টুঙ্গিপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তাঁর পরিবার ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনীতি সচেতন ছিল। বিশেষ করে জমিদারি তদারকি করতে গিয়ে তাদেরকে প্রজাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হয়েছিল। সুতরাং তিনি ছোটবেলা থেকেই একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারে বড় হতে থাকেন।

প্রিয় শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন স্যার প্রায়ই ক্লাসে বলতেন, বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার কথা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের কথা। তিনি বলতেন, ৬ দফা না জানলে বাংলাদেশের ইতিহাস জানা হবে না, ৭ মার্চের ভাষণ না জানলে, জানা যাবেনা স্বাধীনতার ইতিহাস। সম্প্রতি UNESCO, ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে (সমগ্র জাতির অহংকারের বিষয়)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের জনসভায় ইয়াহইয়ার বেতার ভাষণের জবাবে ৪টি দাবির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি শেষে বলেছিলেন, "The struggle this time is a struggle for emancipation. The struggle this time is a struggle for independence". সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হলো।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন নেতা, যাকে নিয়ে পাকিস্তানের নেতাদের মাথাব্যথার কোন সীমা ছিলনা। তাই তারা বঙ্গবন্ধুকে একের পর এক কারাগারে পাঠিয়েছে। পাকিস্তানি শাসনামলের অর্ধেক সময়ই বঙ্গবন্ধুর কেটেছে কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ও ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের নেতা তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন, তা দেখে শিহরিত হতে হয়। তাঁর জীবনের ৪ হাজার ৬৮২ দিন কেটেছে কারাগারে। এর মধ্যে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে ৭ দিন কারাভোগ করেন। বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তিনি কারাভোগ করেন পাকিস্তান সরকারের আমলে। তিনি ১৯৩৮ সালে প্রথম কারাগারে যান। এরপর ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত তিনি ৫ দিন কারাগারে ছিলেন। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আটক হয়ে মুক্তি পান ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এ দফায় তিনি ১৩২ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৪৯ সালের ১৯ এপ্রিল আবার ও কারাগারে গিয়ে ৮০ দিন কারাভোগ করে মুক্তি পান ২৮ জুন। ওই দফায় তিনি ২৭ দিন কারাভোগ করেন। একই বছরের ১৯৪৯ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৩ দিন এবং ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টানা ৭৮৭ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু ২০৬ দিন কারাভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির পর বঙ্গবন্ধু ১১অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। এ সময়ে টানা ১ হাজার ১৫৩ দিন তাঁকে কারাগারে কাটাতে হয়। এরপর ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি আবারও গ্রেপ্তার হয়ে মুক্তি পান ওই বছরের ১৮ জুন। এ দফায় তিনি কারাভোগ করেন ১৫৮ দিন। এরপর ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি ৬৬৫ দিন কারাগারে ছিলেন। ছয় দফা দেওয়ার পর বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ দিন কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৬৬ সালের ৮ মে আবারও গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তি পান। এ সময় তিনি ১ হাজার ২১ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর পরই পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ দফায় তিনি কারাগারে ছিলেন ২৮৮ দিন। (জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা, প্রথম আলো, ৭ মার্চ ২০১৭)।

আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জবানিতেই একটু শোনা যাক। সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমার গুণ কী?" জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "আমি এ দেশের মানুষকে ভালোবাসি"। ফ্রস্ট আবার প্রশ্ন করলেন, "আর দোষ?", বঙ্গবন্ধু হেসে বলেছিলেন, "আমি তাদেরকে বড় বেশি ভালোবাসি।" দেশকে এত বেশি ভালোবাসাই শেষ পর্যন্ত কাল হলো। তাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় ১৫ আগস্ট। হত্যা করে তারা যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করতো না। প্রতিটি বাঙালির তার প্রতি রক্তের ঋণ। এই ঋণ শোধ হবে সেইদিন যেদিন আমরা দেখবো আমাদের প্রাণপ্রিয় এই স্বদেশভূমি মুক্তিযুদ্ধের সকল মূল্যবোধ এবং চেতনা নিয়ে সগৌরবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

যতদিন বাংলাদেশ নামে দেশটি পৃথিবীতে টিকে থাকবে, ততদিন এই মানুষটিও পৃথিবীর ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দ। যদি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো তাহলে এই বাংলাদেশেরও জন্ম হতো না। তাঁর জন্য এ প্রজন্মের পক্ষ থেকে ভালোবাসা এবং ভালোবাসা। প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ'দাকে একটু স্মরণ করে বলি -আমি আজ কারে রক্ত চাইতে আসিনি, আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।

বদরুল আলম, প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ, সিলেট; এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ