আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কাদের সিদ্দিকী কি বিশ্বজিতকে ১৩ বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন?

এখলাসুর রহমান  

সময়ের বাস্তবতায় ইতিহাসে একসময় উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেও নিজেকে কেউ কেউ ঢেকে দেয় অনুজ্জ্বল অমানিশায়। নায়ককে দেখা যায় হয়ে যেতে খলনায়ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে ফুঁসে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। দেশে তো মুক্তিযোদ্ধা আরও বহু ছিল কিন্তু সেদিন আর কতজন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিল? কাদের সিদ্দিকীর সেদিনের ভূমিকা একটি জাতির জাতীয় লজ্জাকে মুছে দিতে প্রয়াসী হয়েছিল। জাতির পিতার সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পরে সারা জাতি চুপসে যাবে কেউ টুঁ শব্দটি করবেনা এটা কি জাতির জন্য একটি চরম লজ্জার দৃষ্টান্ত ছিলনা?

কাদের সিদ্দিকী ও তার সাথীরা মোশতাক, জিয়ার শাসনামলে পরিচিত ছিল দুষ্কৃতিকারী হিসেবে। জিয়ার শাসনামলে প্রতিরোধ যোদ্ধারা চরম ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। নির্যাতিতদেরই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বজিৎ নন্দী।

সম্প্রতি মুঠোফোনে কথা হয় তার সাথে। তার সাথে কথোপকথনে সাম্প্রতিক কালের খোলা চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কয়েকদিন পর পরিস্কার ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানান। তিনি বলেন পিতা হত্যার বিরুদ্ধে সন্তানের প্রতিবাদের মত করে আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম। তখনকার আমার মত প্রতিবাদী যুবকদের অধিকাংশই ছিল সাধারণ ঘরের সন্তান। যারা বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিষ্ঠার ভিতকে মজবুত করেছেন সেসব অসাধারণদের কেউ প্রতিবাদ করেনি। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব থাকেনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা পরিকল্পনার মূলে ছিল বাঙালি জাতির অস্তিত্ব বিলীনের ষড়যন্ত্র। আমরা যারা প্রতিবাদ করেছিলাম তাদেরকে অত্যন্ত নিকৃষ্টভাবে অস্বীকৃতির চর্চা চলছে। কিন্তু ভাল কাজের জন্য প্রশংসা ও মন্দকাজের জন্য নিন্দা প্রভৃতির মধ্য দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

১৯৭৫ সালের কাদের সিদ্দিকী ও আজকের কাদের সিদ্দিকী সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির ইতিহাস রচনা করলে কাদের সিদ্দিকীর নাম আসবেই। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রতিরোধ যুদ্ধে তার ছিল উজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু পরবর্তীতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগে থাকতে পারলেন না। তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটি নতুন দল গঠন করলেন। আজকে তার ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিরোধযোদ্ধাজনিত কোন সম্পর্ক নেই। এটা একটি রাজনৈতিক খেলা। বিষয়টা কেবলই তার দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সম্পর্কিত।

কিছুদিন আগে প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদ নাম দিয়ে একটি সংগঠন গঠিত হয়। যার সভাপতি সেলিম তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মানু মজুমদার। উল্লেখ্য এই পরিষদের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়া অন্য কোন পদে কেউ নেই। এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, এব্যাপারে কিছুই জানিনা। এটা হয়তো একটা সিন্ডিকেট মাত্র। সুবিধাভোগের অসৎ উদ্দেশ্যে এটা গড়ে উঠেছে। শুনেছি একলাখ টাকার অনুদান ভুয়া প্রতিরোধ যোদ্ধা সেজে রাজাকাররাও পেয়েছে। শুনছি ভুয়া তালিকা করা হচ্ছে।

বিশ্বজিৎ নন্দী বলেন, ১৯৭৬ সালের ১৪ আগস্ট প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিল মফিজ উদ্দীন, নিখিল দাশ, জুবেদ আলী, সুবোধ দাস ও দীপাল দাস কিন্তু আজ তাদের নামও তালিকায় নেই। ১৯৯৬ সালেও প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে একটা অনুদান দেয়া হয়। সেটাও সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট প্রকৃত প্রতিরোধযোদ্ধাদের হাতে পৌঁছতে দেয়নি। বিশ্বজিৎ নন্দীর কথার হুবহু চিত্র ফুটে উঠলো আরেক প্রতিরোধ যোদ্ধা স্বপন চন্দের কথায়। তিনি বলেন, আমার নামে এক লাখ টাকার চেক হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান আমাকে বললেন আপনার নামে ত চেক হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসাইনমেন্ট অফিসার শামীম মুশফিককে ফোনও দেন। আমি পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনি বারবার সাজ্জাদ স্যারকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন কেন। আপনি ত ভুয়া। আপনার চেক হবেনা। আপনি মানু মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করেন। অতঃপর এই কালক্ষেপণে চরম অসুস্থ স্বপন চন্দের অনুদানের চেক প্রাপ্তি হলনা। চেকটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে বাতিল হয়ে গেল। কাদের সিদ্দিকী কি এসব অসুস্থ অসহায় সাথীদের হয়রানির কোন খবর রাখেন?

একসময়ের নায়ক হয়ে ওঠে খলনায়ক। কাদের সিদ্দিকীর বদলে যাওয়া চেহারা দেখার শুরু হয় সেদিন যেদিন রাজাকার মীর কাশেম আলীর দিগন্ত টেলিভিশনে সাক্ষাতকার দেন তিনি। কাদের সিদ্দীকির একজন সহযোদ্ধা বিশ্বজিৎ বন্দীর একটি খোলা চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। চিঠিটিতে তিনি লিখে:

শ্রদ্ধেয় কাদের ভাই,
সালাম নিবেন। জানি, আমাকে এখন আপনি চিনতে পারবেন না। আমি মুক্তাগাছার গোবিন্দপুর গ্রামের বিশ্বজিৎ নন্দী।

পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিব বলে, আপনার সাথে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেমেছিলাম। আপনি বলতেন, "পিতা হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে ঘরে ফিরবেন না।" অথচ আপনি আজ কেবল ঘরেই ফিরেন নি, আপনার ঘরে আজ ঐ খুনিদের আনাগোনা। একত্রে বসে পরিকল্পনা করেন, কিভাবে মুজিব কন্যার পতন ঘটাবেন।

১৯৭৬ সালের ১৮ আগস্ট দিনটির কথা কি মনে আছে। অপারেশনে পাঠিয়েছিলেন মুক্তাগাছায়! সেনাবাহিনী আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল।

আমাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আরেকটি কলঙ্কের ইতিহাস হোক, তা চাইনি বলে, টানা ৮ ঘণ্টা যুদ্ধ চালাতে গিয়ে সহযোদ্ধা পাঁচজনের মৃত্যু হয়। হাতে-পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ আজ আপনিই ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছেন।

যৌবনের ১৩টা বছর আমি কাটিয়েছি কারাগারে। ৭ বছর ছিলাম কনডেম সেলে। যে জিয়ার হয়ে আজ আপনি মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন, সে জিয়ার সামরিক আদালতে ১৯৭৭ সালের ১৮ মে আমার ফাঁসির রায় হয়।

আমি বিশ্বজিৎ ওদের চোখে অপরাধী হলেও, আপনি এখন ওদের কাছে মহামানব। ভালো থাকবেন হে মহামানব। ক্ষমতায় গিয়ে, যদি পারেন, আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সেই ১৩টা বছর ফিরিয়ে দিবেন। তা না হলে, আপনি আমার কাছে বাকি জীবনটা বিশ্বাসঘাতক হয়েই থাকবেন।

ইতি
বিশ্বজিৎ নন্দী
টাঙ্গাইল।

বিশ্বজিৎ নন্দীর এই হারিয়ে যাওয়া ১৩টা বছর কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন কাদের সিদ্দিকী? বিশ্বজিৎ নন্দীকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। ১৫ আগস্ট, ২০১৭ সালের কালের কণ্ঠ পত্রিকায় তার বক্তব্য ছিল:
"নিজে কিছু পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। একইভাবে নিজের স্বার্থে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করিনি। দেশকে ভালোবেসেছি, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছি। সেই ভালোবাসা থেকেই ভালোবাসার মানুষ হত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রতিরোধযুদ্ধ করি। কেউ কেউ আমাকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করতে বলেছেন। তাঁদের পরিষ্কার বলে দিয়েছি, দেশকে, জাতিকে যা দেওয়ার তা দিয়েছি। আমার নিজের চাওয়ার কিছু নেই। তাঁরা জানেন, আমি এখনো বেঁচে আছি, কোথায় আছি। তাঁরা কি খোঁজ নিয়েছেন কোনো দিন? "কেমন আছে বিশ্বজিৎ নন্দী, কিভাবে কাটছে তার দিন সে খবর কি কখনও নিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী? খবর নিয়েছেন কি বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের কেউ? বিশ্বজিৎ নন্দী বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ সংগ্রামে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে তার সামরিক আদালত। আর সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচারিত হয় দুষ্কৃতিকারী বিশ্বজিৎ নন্দীর ফাঁসি। পরবর্তীতে ভারত সরকার ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মৃত্যুদণ্ড রদ করতে বাধ্য হন। ১৯৮৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পান বিশ্বজিৎ নন্দী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বজিৎ নন্দীর বয়স ছিল ১৫, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামের সময় ২০। প্রবল আমিত্ব ও অহমিকা নায়ককে যে খলনায়কে পরিণত করে তুলতে পারে তার নজির কাদের সিদ্দিকী। প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় হতেই তার আমিত্ববোধ প্রকাশের শুরু। প্রতিরোধ যোদ্ধা বাহিনীর নাম প্রতিরোধ যোদ্ধা বাহিনীও ছিলনা, জাতীয় মুক্তিবাহিনীও ছিলোনা। নাম ছিল কাদেরিয়া বাহিনী। শোনা যায় সৈয়দ নূর নামের একজন প্রতিরোধ যোদ্ধাকে কাদের সিদ্দিকীর নির্দেশে ভবানীপুর নামক স্থানে ফায়ারিং স্কোয়াডে মেরে ফেলা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ ছিল। কী সে বিদ্রোহ ছিল? সৈয়দ নূর হত্যার কারণ বের হলে হয়তো ইতিহাসের একটা নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

সম্প্রতি ঢাকায় কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার নামকরণ কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর মিলন মেলা ছিলো না, ছিলো জাতীয় মুক্তিবাহিনীর মিলনমেলা। কেন তৎকালীন সময়ে মানে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলাকালে সেটার নামকরণ কাদেরিয়া বাহিনী না বলে জাতীয় মুক্তিবাহিনী বললে কি প্রতিরোধ যুদ্ধের কোন ব্যাঘাত ঘটতো?
জাতীয় মুক্তিবাহিনীর মিলনমেলায় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমবেত করতে কাদের সিদ্দিকী শ্যামগঞ্জ, হালুয়া ঘাট, নালিতাবাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর সকালে নালিতাবাড়ি ও বিকেলে হালুয়া ঘাটে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ৮ অক্টোবর গিয়েছেন নেত্রকোনা সার্কিট হাউজে ও শ্যামগঞ্জে চাত্রাকান্দা গ্রামে শহীদ রজব আলীর বাড়িতে।

উল্লেখ্য কলমাকান্দা উপজেলার পাঁচগাঁও যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী রজব আলী শহীদ হয়েছিলেন। একই দিনে শহীদ হয়েছিলেন নেত্রকোনা সদরের ঝান্টু রায় ও ঠাকুরাকোনার বাউসী বাজারের পল্টু সাহা। কাদের সিদ্দিকী ২৮ অক্টোবর তারিখে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে সারাদেশের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ে একটি সমাবেশের ডাক দেন। এই সমাবেশটির নাম দেন জাতীয় মুক্তিবাহিনীর মিলন মেলা। মিলনমেলায় জমায়েত বাড়াতেই তিনি এই সফর করেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সমাবেশে আসার আগ্রহ জাগাতে তিনি বলেন, আমি প্রতিরোধ যোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ও এককালীন ২৫ লক্ষ টাকা প্রদানের দাবি তুলবো। প্রতিরোধযোদ্ধাদের এই সমাবেশে উপস্থিত করাতে তিনি এও বলেছেন এই মিলন মেলাটি ১৪ অক্টোবর করার কথা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি সেসময় দেশে থাকবেন না তাই প্রোগ্রামটি ২৮ অক্টোবর ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিরোধ যোদ্ধারা যখন জানতে পারল সেই প্রোগ্রামে প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না তখন তারা সেখানে যাননি। অল্পসংখ্যকের উপস্থিতি ছিল মাত্র। শেষ মুহূর্তে তিনি যোগ দিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। জিয়ার ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করতে চলেছেন তিনি। যে কাদের সিদ্দিকী হাসানুল হক ইনুর সাথে এক মঞ্চে উঠতে পারবেন না বলতেন তিনি এবার আসম আব্দুর রবের সাথে এক মঞ্চে উঠে গেলেন! ২০ দল ও জামায়াত সবার সাথেই মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলেন তিনি।

বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী একটি কলামে লিখেছেন: এরশাদ সাহেব পরিস্থিতি ভালো বোঝেন। ঢাকার এক সাংবাদিক বন্ধু এ সম্পর্কে আমাকে একটা ধাঁধা বলে তার উত্তর চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর রাজনৈতিক ‘কেবলা’ একটাই। সেখানেই তাঁরা মাঝে মাঝে যান। তাহলে এরশাদ সাহেব রইলেন আওয়ামী মহাজোটে আর কাদের সিদ্দিকী গেছেন ঐক্যফ্রন্টে—এর রহস্যটা কী? বলেছি, এরশাদ সাহেবকে যতটা বুদ্ধিমান ভাবা হয়, তিনি তার চেয়েও বেশি বুদ্ধি রাখেন। নইলে স্বৈরাচারী হিসেবে পতনের পর তিনি বাঁচতে পারতেন না। কিন্তু কাদের সিদ্দিকী নিজেকে যতটা বুদ্ধিমান মনে করেন, ততটা বুদ্ধিমান নন। বুদ্ধিমান হলে শুকনো ধানের শীষ থেকে ফসল আশা করতেন না। 'তবে চটকদার বড় বড় কথা বলায় তার জুড়ি মেলা ভার। অতীতে অনেক কথা বলেছেন, বাপের বেটি হলে ক্ষমতা ছেড়ে আমার সাথে নির্বাচনে আসো, বাপ মারা গেলে দজ্জাল বোনের সাথে একত্রে থাকা যায়না ইত্যাদি কত কথা। এবার বললেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন কিছুদিন আগেও হয়তো কোথাও নির্বাচন করলে বিজয়ী হতে পারতেন না। কিন্তু, আজ তিনি সারা দেশের নেতা। টুঙ্গিপাড়ায় দাঁড়ালেও তিনি শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে নির্বাচিত হবেন।’

তিনি একথাটাকে আরও জোরদার করতে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দুই রিকশাওয়ালা ও এক সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আমাকে ড. কামাল সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন। আমিও চ্যালেঞ্জ করে বলছি, শেখ হাসিনা কামালের সঙ্গে এক আসনে নির্বাচন করলে তিনি পরাজিত হবেনই।’ কিন্তু শোনা যাচ্ছে ড. কামাল হোসেন নির্বাচনে জিততে পারবেন না এই ভয়ে নির্বাচনই করতে চাচ্ছেন না? তবে কি কাদের সিদ্দিকী ড. কামালকে সূর্য মার্কা নিয়ে জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাকে নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছেন? আর তিনি কি মনে করেন গামছা মার্কা নিয়ে জিতে আসতে পারবেন? নাকি তিনি ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছেন? মনোনয়ন পেতে ইন্টারভিউ দিতে চলেছেন তারেক রহমানকে? তার এই ভূমিকাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন তখনকার সাথী যোদ্ধারা? বিশ্বজিৎ নন্দীর দাবি তার ১৩ বছর কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন তিনি? বিশ্বজিৎ নন্দীকে ফাঁসি দেয় জিয়ার সামরিক আদালত। আজ তিনি জিয়ার দলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন। বিশ্বজিৎ নন্দী দাবি করেছেন জিয়ার ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে যেন তিনি তার ১৩টা বছর ফিরিয়ে দেন।

খোলা চিঠির বক্তব্য সত্য হলে তিনি কি তা পারবেন?

এখলাসুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ