প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আরিফ জেবতিক | ২৮ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচন কমিশনকে প্রথমে বেনিফিট অব ডাউট দিয়েছিলাম বিএনপি অফিসের সামনের ঘটনায়। এর আগে কয়েকদিন আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ভিড় করে মনোনয়নের আবেদন জমা দেয়ার সময় কমিশন কিছু বলল না, কিন্তু বিএনপি অফিসের সামনে ভিড় বাড়তেই তারা হঠাৎ করে একটা সার্কুলার জারি করল যে পার্টি অফিসের সামনে ভিড় করা নির্বাচনী বিধির লঙ্ঘন। তারা পুলিশকে আদেশ করল সেই ভিড় সরিয়ে দিতে।
পুলিশ সেই আদেশ তামিল করতে গেলে বিএনপি কর্মীরা সংঘর্ষে জড়াল। মির্জা আব্বাসের কর্মীরা সবসময়ই সাহসী আর মারকুটে টাইপ। তারা নয়াপল্টনে সেদিন ভালো শোডাউন করেছে। গাড়ির উপরে দাঁড়ানো শার্ট খোলা ছবিটা একটা ফটোজনিক ব্যাপার, সেই ছবি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। লাঠি হাতে নিপুন রায় তেজদীপ্ত গলায় টিভিতে ইন্টারভিউ দিলেন। নিপুন রায়ও দেখতে ফটোজনিক, বয়সে তরুণি, লিঙ্গে নারী-সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম ব্যাপার। তার তেজ ভরা গলার ইন্টারভিউ চ্যানেলে-চ্যানেলে প্রচারিত হতে থাকল।
এই পুরো প্যাকেজে বিএনপির লাভ হয়েছ অনেক। সারাদেশে কর্মীদের মনোবল চাঙা হয়েছে। দীর্ঘদিন রাজপথে দাঁড়াতে না পারা বিএনপি কর্মীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। নির্বাচনের টান টান উত্তেজনার সময় এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
অনেকেরই মনে থাকতে পারে যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরে বিএনপি সরকার যখন পদত্যাগ করে, সেদিন সারাদিনই সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল তলানিতে ছিল।
ঐ সময় রাতে ওদিনকার আওয়ামী লীগ বিএনপির জনসভার নিউজ টিভিতে প্রচারিত হলো। বিএনপির জনসভাটি কাভার করা হয়েছিল এরিয়াল ভিউয়ে। বার্ড আই ভিউয়ে আকাশ থেকে (সম্ভবত ন্যাম ভবন অথবা হেলিকপ্টার থেকে, আমি নিশ্চিত না) ধারণ করার কারণে সেই জনসভার ছবি আওয়ামী লীগের জনসভার ছবির তুলনায় অনেক বড় জনসমাগম হিসেবে দেখাচ্ছিল টিভিতে। এই নিউজটা ছিল টার্নিং পয়েন্ট, ঢাকায় এতো বড় জনসভা দেখার পরদিন থেকেই বিএনপির কর্মীরা গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামার আত্মবিশ্বাস পেয়েছে এই ছবিতে। গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করা সেদিনকার বিএনপি মাত্র দুই মাস পরে তখনকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে একাই ১০৬ আসন পেয়েছিল সংসদে।
তো, এবার একই ঘটনা ঘটেছে। পল্টনের একশনের ছবি সারাদেশে বিএনপির কর্মীদেরকে উদ্দীপ্ত হওয়ার মেসেজ দিয়েছে।
ঘটনা ঘটার পরে নির্বাচন কমিশন পরে উপলব্ধি করেছে যে, পার্টি অফিসের সামনে ভিড় করা নিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধিতে কিছু বলা নেই, তারা ভুল করে ঐ আদেশটি দিয়েছিল।
আমার মনে প্রশ্ন, বিধিতে যে এমন কিছু বলা নেই, সেটা তো সবাই জানে, নির্বাচন কমিশন কি আসলেই জানত না?
২.
গত সপ্তাহে, ভোটের আগে নতুন কোনো ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে নির্দেশ জারি করেছিল ইসি। ওই চিঠিতে বলা হয়, ভোটগ্রহণের আগে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেওয়া যাবে না। তবে ইতোমধ্যে যেসব ওয়াজ মাহফিলের তারিখ নির্ধারণ রয়েছে, সেগুলো করা যাবে। এছাড়া মাহফিলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কথাও বলা হয়।
আপনি গত ৪৭ বছরের এদেশের ইতিহাসে কোনো নির্বাচনের আগে এরকম উদ্ভট কোনো আদেশ কোনো নির্বাচনের আগে দেয়া হয়েছে বলে দেখবেন না। কেয়ারটেকার সরকারগুলোর কোনো ভোট পাওয়ার মাথাব্যথা ছিল না, কিন্তু কোনো কেয়ারটেকার সরকারও এরকম কোনো আদেশ দেয়নি। ওয়াজের কারণে নির্বাচন প্রভাবিত হয়েছে এমন কোনো অভিযোগও আমি সেই ৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত পাইনি। তাহলে হঠাৎ এবারই কেন এই আদেশ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল? নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বসিয়ে রেখে ওয়াজ করতে হবে, এমন আদেশ যারা দিতে পারে এরা আসলে কোন দেশে বাস করে? বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে কি এদের বিন্দুমাত্র সংশ্রব নেই?
গতকাল ইসি এই আদেশটি শিথিল বা পরোক্ষভাবে প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। কী ক্ষতি হয়েছে তা গত এক সপ্তাহের বিভিন্ন ওয়াজের যে ভিডিওগুলো ইউটিউবে আপলোড হয়েছে, সেগুলো দেখলেই বুঝবেন।
আমাদের গ্রামে প্রতিবছর আমাদের পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ঈদগায়ে একটি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন গ্রামবাসী। কালকে সেই উদ্যোক্তাদের একজন কনফিডেন্টলি আমাকে বলেছে, ' ভাই, সরকার দেশে ওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে।' বাক্যটি আবার পড়ুন। সে 'নির্বাচন কমিশন' বুঝে না, তার ভাষ্য 'সরকার' এই ওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে। তো, সরকারে আছে? আবার জিগায়! সরকারে আছে আওয়ামী লীগ। সো, আওয়ামী লীগ সরকার ওয়াজ বন্ধ করে দিয়েছে-এটাই হচ্ছে তৃণমূলে কৌশলী প্রচারণা।
নির্বাচনের আগে এই প্রচারণার মূল্য কতটুকু সেটা শুধু ভোট করতে অভ্যস্ত লোকজন বুঝবে, ঢাকায় বসে অনেকেই বুঝবে না।
তো, যথারীতি ড্যামেজ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনের উপলব্ধি হয়েছে যে এই সার্কুলার নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি আর বিরূপ প্রচার হচ্ছে, তাই গতকাল তারা আগের ঘোষণা থেকে সরে এসেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে অপপ্রচারের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটার মূল্য কে চুকাবে?
৩.
নির্বাচন হচ্ছে প্রতিনিয়ত কৌশলের খেলা। নির্বাচনের রেফারি হিসেবে নির্বাচন কমিশনের তাই হতে হয় তীক্ষ্ণ ধীসম্পন্ন, স্মার্ট। নির্বাচন কমিশনের আচার আচরণ দেখে আমার কেন যেন সন্দেহ হচ্ছে, তারা কি আসলেই এসব সার্কুলার দেয়া আর প্রত্যাহারের আফটার এফেক্ট বুঝছে না?
নাকি কোনো কৌশলী খেলোয়াড় সকলের অগোচরে খেলে দিচ্ছে কোথাও?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য