প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শিতাংশু গুহ | ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
মার্কিন কংগ্রেসে জামায়াত ও হেফাজতের বিরুদ্ধে বিল উঠেছে। বিলটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত নির্বাচনের আগে এই বিল তাৎপর্যবহ। শুক্রবার ২০ নভেম্বর এটি মার্কিন কংগ্রেসের নথিভুক্ত হয়। একই দিন কংগ্রেস বিবেচনার জন্যে বিলটি ‘ফরেন এফেয়ার্স কমিটি’-তে পাঠায়। বিলে বাংলাদেশে ধর্মীয় চরমপন্থিদের উত্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিলটি স্পন্সর করেছেন ইন্ডিয়ানার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস। সমর্থন দিয়েছেন হাওয়াই’র ডেমোক্রেট কংগ্রেসওমেন তুলসী গ্যাবার্ড। এতে বাংলাদেশের হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামিকে ‘ধর্মীয় চরমপন্থি’ গ্রুপ বলে অভিহিত করে বলা হয়েছে, এরা গণতন্ত্র ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জন্যে হুমকিস্বরূপ।
বিলের শিরোনাম, “গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্মীয় গ্রুপের হুমকিতে উদ্বেগ প্রকাশ’। বিলটি বাই-পার্টিজান, অর্থাৎ ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় পার্টির সদস্যের দ্বারা উত্থাপিত ও সমর্থিত। এতে বলা হয়, ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ৩০লক্ষ শহীদ, ১ কোটি শরণার্থী ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনের জন্যে জামায়াত অনেকাংশে দায়ী।
সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের জন্যেও বিলে জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে। এতে হেফাজতকে চরমপন্থি গ্রুপ হিসাবে বর্ণনা করে বলে হয়েছে, এই গ্রুপটি বাংলাদেশকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র থেকে ধর্মীয় স্বৈরতন্ত্রে পরিণত করতে উদ্যত। আরও বলা হয়, এই ধরণের ধর্মীয় চরমপন্থি গ্রুপ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং সংখ্যালঘু গ্রুপের প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ায়।
বিলে বাংলাদেশে আইএস-সমর্থিত গ্রুপের ক্রমবর্ধমান কর্মকাণ্ড এবং এতদাঞ্চলে আল-কায়দার তৎপরতায় ন্যাটোর উদ্বেগের কথা উল্লেখ রয়েছে। এতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ভিকটিমদের স্বীকৃতি এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ভিত্তি হিসাবে ধরার জনের কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বিলে বাংলাদেশ সরকারকে রেডিক্যাল সংস্থাগুলোকে ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১৮’র নির্বাচনের আগেপরে অর্থাৎ ২০১৩’র নভেম্বর থেকে ২০১৪’র জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের আক্রমণে ৪৯৫টি হিন্দু বাড়িঘর ধ্বংস; ৫৮৫টি দোকান আক্রমণ ও লুটপাট; ১৬৯টি মন্দির ভাঙচুর হয়েছে।
বিলে বলা হয়, ধর্মীয় চরমপন্থিরা বৌদ্ধ, খৃস্টান ও আহমদীয়দের ওপরও আক্রমণ চালাচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম দাবি না মানলে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জ্বিহাদের হুমকি দিয়েছিলো। ন্যাটোর এলাইড ল্যান্ড কমান্ডার জেনারেল জন ডব্লিউ নিকোলাস বাংলাদেশে আল কায়দার ক্রমবর্ধমান তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও বিলে উল্লেখ আছে।
এতে বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের কথা উল্লেখ আছে। বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যে যে আহবান জানিয়েছে, সরকারকে সেটি বিবেচনায় নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
এই সময়ে এই বিল ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে চলমান ঘটনার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে এবং তারা বাংলাদেশে ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত দেখতে চায়? বিলে বারবার জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের কথা উঠে এসেছে। যদিও বাংলাদেশে মিডিয়ায় অজ্ঞাত কারণে হেফাজতের কথা তেমনটি উঠে আসেনি।
বাংলাদেশে নির্বাচনী ডামাডোলে জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাপক হৈচৈ হচ্ছে, কিন্তু হেফাজত নিয়ে তেমন কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিলো না? এই বিল পরিষ্কারভাবে জামায়াত-শিবির-হেফাজতকে একই পাল্লায় মেপেছে। প্রবাস ও দেশের কিছু কিছু বুদ্ধিজীবী প্রচ্ছন্নভাবে হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। তাদের খোঁড়া যুক্তি হচ্ছে, ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধী, হেফাজত তা নয়’?
নির্বাচনে কৌশলগত কারণে সরকার হেফাজতের সাথে জোটবদ্ধ হলেও চরমপন্থি গ্রুপ হেফাজত ভালো হয়ে যেতে পারেনা। মুক্তমনা বুদ্ধিজীবীগণ অবশ্যই সরকারি দলকে ভোট দেবেন, কিন্তু তারপরও হেফাজতকে সমর্থন করতে পারেন না? যারা জামায়াতের বিরুদ্ধে তারা একই কারণে হেফাজতের পক্ষে থাকতে পারেন না?
জামায়াত ও হেফাজত একই মায়ের দুই সন্তান। হেফাজত যখন বিএনপি ঘেঁষা ছিলো, তখন খারাপ ছিলো, আর আওয়ামী লীগ ঘেঁষা হবার সাথে সাথে ওরা ভালো হয়ে যায় কী করে? বিলে স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশকে মৌলবাদ রুখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে জামায়াত, শিবির ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক হেফাজতের সাথে পার্টনার বা অর্থ লেনদেন বন্ধের জন্যে মার্কিন সকল এজেন্সি’র প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য