আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সখিনা-জরিনা-কুদ্দুস আর আমার কী?

দিব্যেন্দু দ্বীপ  

প্রত্যেকের সামর্থ্যের একটা অলিখিত সীমানা আছে, সেটি একেবারেই অন্তর্নিহিত, টাকা পয়সা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়লে তা বাড়ে না। এটিই মৌলিক সামর্থ্য, যত দ্রুত সম্ভব সেই সীমানায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারাটাই জীবন। মানুষ সবচে বেশি হতাশ এবং বিরক্ত হয় অগ্রযাত্রার সে পথে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে, একইসাথে মানুষ সবচে খুশি হয় সেই যাত্রাপথে কেউ সাথী হলে।

তবে লক্ষ্য মানেই কিন্তু লক্ষ্য নয়, অর্জন মানেই অর্জন নয়, কী লক্ষ্য, কেন সেটি লক্ষ্য এগুলো অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। তবে মুক্তবাজার ব্যবস্থা মানুষকে সুযোগ দিয়েছে ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেটির চর্চা করার। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় টাকা পয়সার বৃদ্ধি ঘটিয়ে নিজের সামর্থ্য শতগুণ করছে নিচ্ছে মানুষ, তাই এ যুগে মানুষের সামর্থ্য বিবেচনা করা খুব সহজ কথা নয়। যে যা করবে চায়, নিয়মের মধ্যে করতে পারে, যদিও এইসব নিয়মের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অনিয়ম, যেগুলো নৈতিকতার মানদণ্ডে পরিমাপ করা গেলেও বেআইনি নয়।

তাই সমালোচনার সুযোগ থাকলেও কোনো ধরনের বাধা দেওয়ার সুযোগ এ সভ্যতায় নেই, থাকা উচিৎও নয়। কিন্তু সমালোচনার সুযোগটি যদি সংকীর্ণ হয়, তাহলে ভুল চিন্তা, ভুল চর্চাগুলো ‘লক্ষ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করে সমাজে, যেগুলো শুধুমাত্র উৎসব বা আনন্দ আয়োজন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কথা।

গণ মানুষ, ছা-পোষা মানুষ বিরক্ত হয়, বিপন্ন বোধ করে যখন কেউ ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য আশেপাশের সবকিছু তুচ্ছ করে, মাড়িয়ে যায়। বিষয় হচ্ছে- গণমানুষের এই নীরব হতাশার জায়গাটি কখনই চিহ্নিত হয় না, কারণ, কখনই তারা এগিয়ে এসে এই বিরুদ্ধতার কথা বলতে পারে না, যেহেতু এ সকল সফলতার ধ্বজাধারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন উচ্চ শিক্ষিত সৌখিন মানুষ, যারা এ সভ্যতায় পূজিত হয় খুব। এরকম রক্ত মাংসের দেব দেবীর প্রতি অবমাননা দেখাবে সাধ্য কার!

সফলতা বোধহয় মোটা দাগে দুই প্রকার-

১. প্রাণ-প্রকৃতির সাথে থেকে সফলতা, এবং

২. প্রাণ-প্রকৃতির বিপরীতে অবস্থান করে একান্তই ব্যক্তিগত সফলতা।

যেমন, এ যুগে এসে যদি কেউ বলে যে আমার লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীর সাত মহাদেশে সাতটি পর্বতে আরোহণ, হতে পারে, এটি কারও লক্ষ্য হওয়াটা দোষের নয়, কিন্তু এটা একান্তই ব্যক্তিগত লক্ষ্য, এখানে সামস্টিক স্বার্থ এক তিলও জড়িত নয়। কারণ, এই সাতটি পর্বতের একটিও এখন আর অধরা নয়, কোনোকিছু অজানা নয়।

এখন এই সাফল্য অর্জনেও দুই প্রকার মানুষ দেখা যায়-

১. যারা স্বাভাবিকভাবে লক্ষ্যটা অর্জন করতে চায়;

২. যারা যে কোনো প্রকারে, সবাইকে সবদিক থেকে বঞ্চিত করে, দাপিয়ে, মাড়িয়ে, সকল ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে লক্ষ্যে পেঁৗছাতে চায়।

ফলে বর্তমানে এই যে চারপাশে সফলতার বাহাদুরি -এগুলো একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়, যা কৌশলী মানুষ গণমাধ্যমের আশ্রয় নিয়ে সমষ্টির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে মাত্র।

আবার এই লক্ষ্য অর্জনের আরও দুই প্রকার বিভক্তি হয়-

১. লক্ষ্যটি শুধুই একটি অভিধা, পথ এবং পরিক্রমা পুরোটাই মূলত আনন্দ আয়োজনের বৃত্তাকার বা সর্পিল কিছু পথ বৈ কিছু নয়।

২. আবার কিছু লক্ষ্য আছে, যা প্রকৃতপক্ষেই অর্জন করতে হয়, যাত্রা পথের প্রতিটি মুহূর্তে চিন্তিত হতে হয়, প্রতি পদে পদে কষ্ট করতে হয়, উত্থান-পতন হয়, পরিশেষে যেটি অর্জিত হয়, সেটি একান্তই নিজের জন্য থাকে না, হয় সকলের জন্য।

যেমন, কেউ যখন চাঁদের যাওয়ার স্বপ্নটি দেখেছিল, সেটি নিশ্চয় কোনো সভা সমিতি থেকে সিদ্ধান্তটি হয়েছিল না, কিন্তু ব্যক্তিগত হলেও তা ছিল নতুন এবং অজানা কিছু। ফলে যখন অর্জিত হয়েছে সেটি সকলের হয়েছে।

অনেক সময় স্থূল আনন্দ আয়োজনগুলোকেও মানুষ এখন বিশেষ কষ্টশিষ্টের কাজ হিসেবে দেখাতে চায়, জনগণের সমর্থন আদায় করতে চায়, ফান্ড গঠন করতে চায়। এর মধ্যে বিশেষ চাতুর্য আছে, স্বার্থপরতাকে মোড়কবন্দি করার চেষ্টা আছে, সাধারণ মানুষের চোখে এভাবে অনেকটা ঠুলি পরানো সম্ভব হয়েছেও।

যেমন, বর্তমান সময়ের ক্যাম্পিং, বা তাঁবু টাবু খাটিয়ে যে ভ্রমণ পরিকল্পনা মানুষ করে সেগুলো এ ধরনের ঠুলি পরা এবং পরানো আয়োজনের মধ্যে পড়ে।

তবে যতকথাই বলি না কেন জীবনচর্চা সার্বজনীন করা আধুনিক এবং উন্নত এ ব্যবস্থায়, যোগাযোগ মাধ্যমের পরাক্রমশালী এ যুগে খুব সহজ কথা নয়।

কিন্তু মানবিক বোধ জাগ্রত রাখতে পারলে অন্তত ঠুলি পরা এবং ঠুলি পরানোর বিষয়টি সমাজে থাকবে না, অন্তত কমে আসবে, মানুষ সচেতন হবে, দায়িত্বশীল হবে।

দিব্যেন্দু দ্বীপ, লেখক, সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ