প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এখলাসুর রহমান | ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮
২০০৬ সালে দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দীনকে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কত ফন্দিফিকির করেছিল ৪ দলীয় জোট সরকার৷ নিজেদের অনুগত নির্বাচন কমিশনার এমএ আজিজকে দিয়ে কমিশনকে দলীয়করণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো তারা৷ তখন ইয়াজ উদ্দীন ও এমএ আজিজের বিরুদ্ধে ছিল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল৷ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতান্ত্রিক চরিত্র অনুযায়ী না চললেই সৃষ্ট হয় এমন সংকট৷ বিঘ্ন ঘটে জননিরাপত্তার৷ বিপাকে পড়ে আইন শৃঙ্খলা৷ ইয়াজ উদ্দীন ও এমএ আজিজের অতিরিক্ত পক্ষপাত দুষ্ট বাড়াবাড়ির ফলেই জননিরাপত্তা সেনাবাহিনীমুখী হল৷
ক্ষমতায় এলো সেনাশাসিত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হারালো গণতান্ত্রিক দলগুলো৷ মানুষও সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে স্বাগত জানালো৷ দুই দলের নেতাদের উপরই তখন নেমে আসে নির্যাতন৷ অতঃপর ২০০৮ সালে অগণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সকল গণতান্ত্রিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট৷ বিএনপি বিরোধী দল হিসাবে চুপসে গেল৷ কারণ এদেশে কেউ বিরোধী দল হতে চায়না৷ বিরোধী দলের এমপিরা সংসদে যেতেও কোন আগ্রহবোধ করেনা৷ কেবল নিজেদের বেতন ভাতা প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতেই তাদের উপস্থিতি বজায় রাখে৷
কেন বিরোধী দলগুলো কি পারেনা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বলে জনগণের কাছে যেতে? বিরোধী দল হয়ে গণদাবি নিয়ে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তো দলগুলোর সরকার দলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখার কথা,তাই হওয়া উচিত নয় কি? কিন্তু না বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কেউই আর বিরোধী দল হতে চায়না৷
বিরোধী এমপি হলে তারা মনের দুঃখে সংসদেও যায়না৷ ২০১৪ সালে নির্বাচন হল বিগত দিনের বিরোধী দলকে মাইনাস করে৷ তারা নির্বাচন বর্জন করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধে চলে গেল৷ তারা দেশজুড়ে চালাল জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ৷ নির্বাচন হয়ে গেল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলকে বাদ দিয়েই৷ সেই সুযোগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন বিনাভোটে এমপি হয়ে গেল ১৫৪ জন এমপি৷
তখন বিরোধী দল কে হয়? নিয়ম মত জাতীয় পার্টিকেই হতে হয়৷ কিন্তু না তারাও সরকারে যেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে৷ তারা মন্ত্রিত্ব পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে৷ অত্যন্ত হাস্যকর ভাবে কেউ হল মন্ত্রী, কেউ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আবার কেউ বিরোধী দলীয় নেতা৷ এক্ষেত্রে মন্ত্রিত্বটাই প্রত্যাশার আর বিরোধী দলীয় নেতা হওয়াটা যেন দায়ে পড়ে৷ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকার অনেকের ধারনা ছিল টিকবে না৷ কারণ এখানে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিই এই নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে দূরে থাকে৷ ১৫৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও বিনা ভোটে জিতে যায়৷ এ সংখ্যক এমপি হলে ১ টি দলের পক্ষে সরকার গঠনই সম্ভবপর হয়ে ওঠে৷ কিন্তু না সরকার টিকে গেল৷ ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের সরকারই আজ মেয়াদ উত্তীর্ণ করলো৷ গণতন্ত্রের এই দুষ্টক্ষত নির্বাচনে উপেক্ষিত হল ভোটাররা৷ ভোটারদের মতামত ছাড়াও যে সরকার গঠন করা যায় ও টিকে থাকা যায় সেটা প্রমাণিত হল৷ এবার আসলো একাদশ সংসদ নির্বাচন৷
দশম নির্বাচনের মত এ নির্বাচন প্রধান বিরোধী দলবিহীন নয়৷ এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে ২০ দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মত শক্তিশালী রাজনৈতিক মোর্চা৷ নির্বাচন কমিশন কি এ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পেরেছে সকল দলের সমান প্রচারণার সুযোগ? নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছে দেশে প্রার্থীদের লেভেল প্লেয়িং নেই৷ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা বলেছেন, মাহবুব তালুকদারের কথা সত্য নয়৷ এতে কি খোদ নির্বাচন কমিশনেই দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান হলোনা? জনগণ কোন নির্বাচন কমিশনারের কথা বিশ্বাস করবে?
নির্বাচনের আর মাত্র ৮ দিন বাকি৷ এ পর্যন্ত অনেক সংসদীয় আসনে ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা পোষ্টার লাগাতে পারছেনা৷ মাইকিং, নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ কিছুই করতে পারছেনা৷ পুলিশি আতংকে বাড়ি ঘরে ঘুমাতে পারছেনা ধানের শীষের পক্ষের সমর্থকেরা৷ গণতন্ত্রে কাউকে ভোট না দেয়ার অর্থ এই নয় যে তাকে প্রচার কাজে বাধাদান করতে হবে৷ দমন, পীড়ন ও আতংকবাজী কোন গণতান্ত্রিক আচরণ নয়৷
এসময়ে চমৎকার কথা বললেন এ সরকারের একজন মন্ত্রী৷ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জোর করে আমি এই শেষ বয়সে নির্বাচিত হতে চাই না। আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। যদি আমাকে পছন্দ হয় ভোট দিবেন। দুই প্রার্থীকে দুই পাল্লায় দাঁড় করাবেন। এরপর যাকে যোগ্য মনে হবে তাকে আপনারা ভোট দিবেন।’ তিনি বলেন, '৭০-এ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে যেমন গণজোয়ার হয়েছিল, এবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোলাতে গণজোয়ার হবে।’ তোফায়েল আহমদের এই বক্তব্যই গণতন্ত্রের মূল কথা৷ কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা কী বলে? কয়টি সংসদীয় এলাকায় রয়েছে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার অবাধ স্বাধীনতা?
ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে অনেকেই গণতান্ত্রিক আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে৷ তারা ভুলে যাচ্ছে ক্ষমতা হারানোর পরিণতির কথা৷ কোন ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়৷ দমন পীড়নের বদলা দমন পীড়ন ৷ তবে এটাই কি বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়তি হয়ে উঠছে? নির্বাচনের আর মাত্র ৮ দিন বাকি৷ অথচ অনেক প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা এখনও কোন প্রচারণায় যেতে পারছেনা৷ তারা অপেক্ষা করছে সেনাবাহিনীর আগমন পর্যন্ত৷ তাদের বিশ্বাস সেনাবাহিনী এলে তারা নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবে৷ ভোট চাইতে যদি সেনাবাহিনী লাগে তাহলে কি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম কোন বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে? এই বিশ্বাসযোগ্যতা ভঙ্গের দায় কার? সেনাবাহিনী কি পারবে সকল দলের প্রচারণাকে সমান করতে? সেনা মোতায়েনের আগের দিনগুলোকে প্রার্থীদের কিভাবে ফিরিয়ে দেবেন তারা? সেনা উপস্থিতিতে এতদিন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার সুযোগ বঞ্চিত প্রার্থীরা যদি প্রচারণার সুযোগ পায় এটা কি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা নয়? জনগণের কাছে এটা কি দৃশ্যমান প্রমাণ হয়ে ফুটে উঠেনা যে এতদিন তাদের প্রচারণার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে?
কী বলেন রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক বিদগ্ধজনেরা?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য