আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

Advertise

সারাদেশে এ মুহূর্তে আ.লীগের ‘ছাতক মডেল’ কেন জরুরী?

আলমগীর শাহরিয়ার  

ছাতক মডেল কি? ছাতক ও দোয়ারবাজার উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। একদম তৃণমূল থেকে বেড়ে ওঠা একজন রাজনীতিবিদ। জনভিত্তি ও তুমুল জনপ্রিয়তা থাকায় নব্বইয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান। তারপর তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্নেহধন্য। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছেই তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। স্মরণ করা যেতে পারে, তখন সিলেট আওয়ামী লীগ সুরঞ্জিত আর সামাদ আজাদ বলয়ে বিভক্ত।

পুরো আওয়ামী লীগের রাজনীতিই নব্বইয়ের দশকে ছিল নিজেদের দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব আজকের মত অত নিরঙ্কুশ বা সংহত না। বঙ্গবন্ধুর সহচর ও সমসাময়িক অনেক জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের তাকে সমঝে চলতে হচ্ছে। ড. কামাল হোসেন দল ছেড়েছেন, আব্দুর রাজ্জাক দল ভেঙেছেন---সারাদেশে নেতা কর্মীদের মধ্যে এসবের ধাক্কা তখনো শেখ হাসিনাকে সামলাতে হচ্ছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকার পরও কৌশলগত নানা কারণে হেরেছে বিএনপির কাছে হেরেছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে একজন তরুণের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটেছে। তিনি আগামী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন। ভাটি বাংলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে উঠে আসা। চোখে মুখে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কিছু করার অঙ্গীকার, স্বপ্ন-বিহ্বলতা। তিনি মুহিবুর রহমান মানিক। একদিন জনগণের ভালোবাসার কালো মানিক হয়ে উঠবেন। তবে পথ কুসুমাস্তীর্ণ না। কণ্টকাকীর্ণ। পথে পথে কাঁটা বিছানো। কূট-কৌশলের রাজনীতির শিকার হবেন। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কোনদিন নূন্যতম অপমান, অসম্মান বা কোনও কেলেঙ্কারির নজির না থাকলেও একটি অপবাদের কালো ছায়া তাকে আজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে। কিন্তু জনগণের হৃদয় থেকে তাকে কেউ মুছে দিতে পারবে না।

১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগের শাসনামলে সমালোচিত সাংসদ জয়নাল হাজারী ও ডা. ইকবাল হারিয়ে যাবেন। টিকে থাকবেন আলোচিত মানিক। কারণ মানিক প্রমাণ করতে পেরেছিলেন তিনি পঙ্কিল রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তাই টানা দলীয় ডাবল হ্যাটট্রিক মনোনয়ন পেয়েছেন। ছাতক দোয়ারার গণমানুষের নিঃশর্ত ভালোবাসায় তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য। প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভাটি বাংলার এক পশ্চাৎপদ অথচ সব অর্থে ও সম্পদে সম্ভাবনাময়ী এক জনপদের। সকল আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও ক্যাবিনেটে স্থান না পাওয়ায় চাইলেও অনেক কিছু করতে পারেননি।

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ছাতক-দোয়ারায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পাথর, নদী বন্দরসহ শিল্প বিকাশের সব সম্ভাবনা ছিল। তবু তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এলাকায় শিক্ষা বিস্তার, বিদ্যুতায়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তার সুফল দুর্গম হাওর থেকে খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের বিচ্ছিন্ন ও প্রান্তিক মানুষরা আজ ভোগ করছেন। তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক দশকে বদলে যাওয়ার বাংলাদেশের তিনিও একজন গর্বিত শ্রমজীবী অংশীদার, লিডার।

তাঁর দুয়ার নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য দিনরাত অবিশ্বাস্য রকম অবারিত। হাওরের কর্দমাক্ত পায়ের লুঙ্গি পরা মলিন চেহারার কৃষক নিঃসঙ্কোচে ঢাকায় তাঁর বাসার দরোজায় কড়া নাড়েন যখন তখন। কোনদিন তারা আন্তরিক অভ্যর্থনা ছাড়া বিমুখ হননি। ক্লান্তিহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার অন্তর্গত রাজনৈতিক বোধ ও বিশ্বাস। শেকড়কে ভুলে না থাকার অঙ্গীকার। খুব কাছ থেকে নানা সময় অনেক উদাহরণসহ দেখেছি বলে বলতে পারি, আজকের সময়ে এমন রাজনীতিবিদ সত্যিই দুর্লভ, বিরল। হয়ত আদর্শবাদী রাজনৈতিক ধারার শেষ প্রজন্ম।

ভেবে অবাক হই আক্ষরিক অর্থেই সেই মাটির মানিক নিজ দলের কোন্দলের শিকার হয়েছেন বারবার। সিলেট ১৯ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনসম্পৃক্ত ও জননন্দিত নেতা মুহিবুর রহমান মানিক। অথচ  নিজ দলের একাংশ সবসময় তাকে ভুল বুঝেছেন। তার নিজ দলের স্থানীয় প্রতিপক্ষ সারাজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে ভোটের সময় বিএনপি বা বিরোধী দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিতেন। যা তাকে ভুগিয়েছে অনেককাল।

প্রায় তিন দশকের সেই অবিশ্বাস, সন্দেহ ও কোন্দল ভুলে ছাতক-দোয়ারায় আওয়ামী লীগ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবার সাংগঠনিক কঠোর ও স্থায়ী বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেবার ঘোষণা ছিল। তার আগেই দূরত্ব অতিক্রম করে মানিক বিরোধী শিবিরে থাকা নেতৃবৃন্দ হাত মিলিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনায় থাকা পরস্পরকে বুকে টেনেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। বাংলাদেশ অগ্রসর হবে বলে অনৈক্যের সুর আজ অভাবনীয় এক ঐক্যে পরিণত হয়েছে। এটাই আজকের বাংলাদেশে ছাতক মডেল।

টানা দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় সারাদেশে কর্মীর চেয়ে নেতা বেশি। আত্মত্যাগের চেয়ে অহমিকা ও গৌরব বেশি। দলের আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে অনেকে বিচ্যুত। একজন দৃঢ়চেতা স্বপ্নবান রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আজ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন উন্নত একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণের লড়াই চলছে। দেশে-বিদেশে শত্রুরা নানা ফ্রন্টে সক্রিয়। মরণকামড় দিতে সদা প্রস্তুত। অথচ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে আগুয়ান।

এমন যুগ সন্ধিক্ষণে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নিজের, দলের, সর্বোপরি, একটি সংহত রাষ্ট্রের অস্তিত্বের স্বার্থে সকল ভেদাভেদ, ব্যক্তিগত রেষারেষি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নাই। মনে রাখতে হবে, "আওয়ামী লীগ হারলে হেরে যায় বাংলাদেশ। তাই "মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় দেশপ্রেমী সকল জনগণ, নতুন প্রজন্ম আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে।

আলমগীর শাহরিয়ার, কবি ও প্রাবন্ধিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ১৯ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৮৯ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ