প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮
একজন উপায়হীন মানুষ যদি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে শর্তহীন আত্মসমর্পণ করে বসে থাকে; তাহলে উপায়হীন মানুষের উপায়হীনতা থেকে কখনোই মুক্তি ঘটে না।
যে কোন দেশে "সংখ্যালঘু" গোষ্ঠী উপায়হীন ও দুর্বল হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু সংখ্যালঘুরা একজন ব্যক্তি বা একটি দলের প্রতি অন্ধভাবে অনুগত না থেকে যদি বিভিন্ন দলের সঙ্গে বারগেইন বা দরকষাকষি করে; তবে সংখ্যালঘু মানেই দুর্বল এই মিথ সরে যেতে বাধ্য। বরং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীই এতো গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাংক হয়ে দাঁড়ায় যে উলটো নানা রাজনৈতিক দল তাদের তোষামোদে বাধ্য হয়।
ভারতের মুসলমান জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু। কিন্তু নানা রাজ্যে এই সংখ্যালঘুরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দরকষাকষি করে; নিজেদের এমন একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে চলার চেষ্টা করে। কংগ্রেস অত্যন্ত সেক্যুলার বা অসাম্প্রদায়িক দল। কিন্তু দলটির দুর্নীতির কারণে ভারতের সংখ্যাগুরু ভোটাররা যখন সিদ্ধান্ত নেয়; বিজেপিকে ভোট দেবে; তখন মুসলমান জনগোষ্ঠী বিজেপিকে ভোট দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে বিপুল মুসলমান সমর্থন ছিলো। মুসলমানেরা বিজেপির নির্বাচনি প্রচারণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলো।
আবার হিন্দুত্ববাদী বিজেপি মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করায় সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে মুসলমানরা তাদের ভোট প্রত্যাহার করেছে এটা স্পষ্ট। এখন ভারতের মুসলমানরা বিজেপির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সম্ভাব্য জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টকে সমর্থন দেবে এটা প্রায় স্পষ্ট। ফলে বিজেপি এখন চেষ্টা করবে মুসলমান ভোটারদের মন জয় করতে। দরকষাকষিতে তাদের অবস্থান এখন আর মোটেও দুর্বল নয়।
পাকিস্তানে ধারাবাহিক সংখ্যালঘু নির্যাতনে হিন্দুদের সংখ্যা কম হলেও অন্তত ২০ টি আসনে কে ভোটে জিতবে তা নির্ধারণ করে হিন্দুরা। এই হিন্দু ভোটাররা পাকিস্তান পিপলস পার্টির ওপর নির্ভরশীল হয়ে থেকে দেখেছে; উচ্ছেদের সময় বা বিপদের মুহূর্তে তারা কাজে আসেনি। ফলে তারা ফ্লেক্সিবল বা পরিবর্তনশীল ভোটার চরিত্রটি গ্রহণ করেছে। তাদের ভোটে ২০১৩ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ঐ ২০ টি আসনে হানা দিয়েছিলো। তার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সেনেটে ও সাধারণ নির্বাচনে হিন্দু প্রার্থী দিতে বাধ্য হয়। তারা বুঝে গেছে, শুকনো অসাম্প্রদায়িকতার লিপ সার্ভিসে হিন্দু ভোটারদের চিঁড়ে ভিজবে না। কিন্তু এরপরেও সাম্প্রতিক নির্বাচনে হিন্দু ভোটাররা ইমরান খানের পিটি আই-এর দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এই যে পাকিস্তানের হিন্দু ভোটারদের ফ্লেক্সিবল ভোটার হয়ে পড়া; এ কারণে পাকিস্তানের "জামায়াতের ভোট ব্যাংক" অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক দুটি নির্বাচনে কট্টর ইসলামি ভোট ব্যাংক ধসে পড়েছে। তারা রাজনৈতিক গুরুত্ব হারিয়েছে। "হিন্দু ভোট ব্যাংক" পিপলস পার্টির দাদার সম্পত্তি সুতরাং মুসলিম লীগ নওয়াজকে যে কোন ভাবে "জামায়াতের ভোট ব্যাংক"- ধরে রাখার জন্য মরিয়া থাকতে হবে; ঐ দশাটি কেটে গেছে। হিন্দু ভোটারদের ফ্লেক্সিবিলিটি জামায়াতকে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে।
বৃটেনের রাজনীতির দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যাবে কনজারভেটিভ পার্টির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন মুসলমান। তার প্রধানমন্ত্রী হবার সম্ভাবনা আছে। বৃটেনের সংখ্যালঘু ভোটার মানেই লিবেরেল পার্টির কোলে বসে বঞ্চনার বেদনা নিয়ে কেবল তাদেরই মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবে; এ অবস্থা আর নেই। সংখ্যালঘুদের ভোটার হিসেবে ফ্লেক্সিবিলিটি তাদের ক্ষমতায়িত করে এটা প্রমাণিত হয়ে চলেছে দেশে দেশে।
এমেরিকার ডেমোক্র্যাটরা কেবল লিপ-সার্ভিস দিয়ে আর ইয়েস উই ক্যান বলেও যখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেনি; অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারেনি; তখন রিপাবলিকান দলের ডনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছিলো হিন্দু ও মুসলমানরা। সংখ্যালঘু মানে "সুন্দর সুন্দর কথা বলা অথচ বিন্দুমাত্র উপকার না করা" কথিত লিবেরেল দলের লেজ ধরে বসে থাকবে; সে অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। সংখ্যালঘুদের সমর্থন দেবার ফ্লেক্সিবিলিটি দেশে দেশে তাদের ক্ষমতায়িত করেছে; এটাই আজকের বিশ্ববাস্তবতা।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য