প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এখলাসুর রহমান | ০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অবিশ্বাস্য জয় পেলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মহাজোটের বাইরে মাত্র ৭ টি আসন পেলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু তারা শপথ গ্রহণ করলোনা। মহাজোটের জাতীয় পার্টিও ২২ টি আসনে জেতে একবার সরকারে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে আরেকবার বিরোধী দলে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করছে। যে জাতীয় পার্টি গড়ে উঠেছিল গণতন্ত্র হত্যাকারী হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ দশ বছর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামপন্থী দলগুলো লড়াই করেছে গণতন্ত্রের জন্য। বুকে পিঠে স্বৈরাচার নিপাত যাক ও গণতন্ত্র মুক্তি পাক লিখে স্বৈরশাসনের গুলিতে জীবন দিয়েছে নূর হোসেন। এ ছাড়াও জীবন দিয়েছে ডা. মিলন, ফিরোজ জাহাঙ্গীর সহ আরও অনেকেই।
সেদিনের গণতন্ত্র ঘাতক দলটিকেই একাদশ সংসদে নির্বাচিত গণতন্ত্র রক্ষায় বিরোধী দল হতে অনুরোধ করতে হবে। ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া দলটি বিরোধী দল না হয়ে সরকারে থাকতেই বেশী আগ্রহ প্রকাশ করে চলেছে। এক্ষেত্রে বিরোধী দল হতে পারতো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু তারাও শপথ নিলোনা। না হয় মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কে বিরোধী দলীয় নেতা করে রাজনীতির এই শূন্যস্থানটা পূর্ণ করা যেতো।
মহাজোটের যৌথ ভোটের অংশীদারিতে নির্বাচনে জিতেছে আওয়ামী লীগ,দুই জাতীয় পার্টি, দুই জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও তরিকত ফেডারেশন। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি(এরশাদ) ছাড়া অন্যরা নির্বাচন করেছে নৌকা প্রতীকে। সুতরাং নৌকা বিভক্ত করে কি আর এসব দলকে বিরোধী দল বানানো যায়? তাছাড়া তারাও কি বিরোধী দল হতে চাইবে? নিজের দলীয় প্রতীক বিসর্জন দিয়ে নৌকায় উঠে তারা সাংসদ হয়েছে। এখনকার স্বপ্ন মন্ত্রী হওয়া। সুতরাং বিরোধী দলীয় নেতা হওয়ার ইচ্ছে হবে কার? জাতীয় পার্টি(এরশাদ) এর নেতাদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই মন্ত্রী হওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। দশম সংসদ নির্বাচনে দলটি সরকার দল ও বিরোধী দল দুটোই হয়েছিল। এবারও কি তাই হতে চলেছে? গতবার দলটির চেয়ারম্যান এরশাদ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এই ৫ বছরে দূত হিসাবে তিনি কি কাজ করেছেন তা কেউ জানেনা। তবে দলটির বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে রওশন এরশাদের ভূমিকাও দেখেছে মানুষ। আরও দেখেছে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙ্গার মন্ত্রিত্বের ভূমিকা।
কে হচ্ছেন একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা? নির্বাচনের আগে মানুষ ভেবেছিল এবার বিরোধী দল হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এমনটি হলেই গণতন্ত্র তার যথার্থ রূপ পেতো। সরকার দল, দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের জন্য এমনটিই বিদগ্ধজনের কাম্য ছিল। কিন্তু নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ও অবিশ্বাস্য ভরাডুবি ঘটলো দলটির। তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সাংসদ হিসাবে শপথ গ্রহণ করলোনা। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বিরোধী দলের সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হলোনা অথবা হতে দেওয়া হলোনা। সরকারকেই নিয়ম রক্ষার জন্য বিরোধী দল খুঁজতে হচ্ছে। প্রয়োজনে মহাজোটে বিভাজন ঘটিয়ে বিরোধী দল সাজিয়ে নিতে হবে। সুতরাং এখানে সাধু সেজোনা, হও কথাটি প্রযোজ্য হতে পারলোনা। এমনই সময়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ তার উত্তরসূরি ঠিক করলো ছোট ভাই জি,এম কাদেরকে। তবে কি তিনি তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে অবসরে যাচ্ছেন? নির্বাচনী ফলাফলের পরপরই কেন তার এই সিদ্ধান্ত?
সরকার দলের পাশাপাশি শক্তিশালী বিরোধী দল না পেলে গণতন্ত্র কি এগোয়?তবে কেন বিরোধী দল নির্মূলের পন্থা নেয়া হল?হামলা,মামলা ও অন্যের ব্যালটে সিল মারার অগণতান্ত্রিক রীতি দৃশ্যমান না হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিরোধী দল হতে পারতো বলেই অনেকের ধারনা। নেত্রকোনা-৪ এর ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মোহন গঞ্জ খালিয়াজুরীতে যেতে পারেনি । মোহন গঞ্জে এ প্রার্থী ছিল নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রার্থীর মত। বাচ্চারাও ভয়ে ধানের শীষ বলেনি। কেন্দ্রগুলোতে প্রকাশ্যে টেবিলের উপর ভোট দিতে হয়েছে ভোটারদের। কেউ ভয়ে সবার সামনে নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকে ভোট দিতে সাহস পায়নি। কেন্দ্রগুলোতে ছিলোনা কোন ধানের শীষের এজেন্ট। শত শত মানুষের অভিযোগ তারা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোট অন্যেরা দিয়ে দিয়েছে। আরও একটি চমকপ্রদ বিষয় হলো ধানের শীষের যেসব সমর্থক মামলার আসামী হয়ে পুলিশের ভয়ে কেন্দ্রে যায়নি তাদের ভোটও চলে গেছে নৌকায়। এই পদ্ধতি আজকে ঐক্যফ্রন্টের উপর প্রয়োগ করল ১৪ দল। কিন্তু ক্ষমতা কি চিরস্থায়ী?একদিন যে ১৪ দলের উপর ঐক্যফ্রন্ট অথবা অন্য কেউ প্রয়োগ করবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে? গণতন্ত্রের শুভ্রতায় এই অগণতান্ত্রিক কালোরীতিটা সবার জন্যে আতংকের বিষয় নয় কি?
মানুষ এবার এমন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চায়নি। এবার তারা সরকার দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল দুটোই চেয়েছিল। ঐক্যফ্রন্ট কমপক্ষে ষাট সত্তরটি আসন পেয়ে সংসদে গিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত করবে এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তা হলোনা। ঐক্যফ্রন্টের ৭ সাংসদ শপথ না নিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুন-নির্বাচন দাবী করছে। পুন-নির্বাচনের দাবীতে রাস্তায় নেমেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটও। জাতীয় পার্টি একবার বলছে সরকারে থাকবে আরেকবার বলছে বিরোধী দলে থাকবে। রওশন এরশাদ বলছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের এমন অবস্থা হবে জানলে তারা আলাদা নির্বাচন করতে যেতো। কেন বাংলাদেশের রাজনীতিকদের আকাঙ্ক্ষা কেবলই সরকার দলের এমপি হওয়া?সরকার দলেরও আকাঙ্ক্ষা বিরোধী দলকে নির্মূল করে সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের সংকট সৃষ্টি করা?যেটি এখন বাংলাদেশে দৃশ্যমান হল। যথার্থ বিরোধী দল বিহীন গণতন্ত্র কি গণতান্ত্রিক ধারায় থাকতে পারবে ও পেরেছে কোথাও?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য