প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শারমিন শামস্ | ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯
নষ্ট সিস্টেমই একজন শিক্ষার্থীর মনে 'প্রতিষ্ঠিত' হবার নষ্ট স্বপ্ন ঢুকায়ে দেয়। সেই নষ্ট স্বপ্নের পিছনে সে তার গোটা যৌবন ব্যয় করে। অথচ একটু চোখ মেললেই সে দেখতে পায় জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে তথাকথিত এস্টাব্লিশমেন্টের কোন প্রয়োজন তো নেইই, বরং পুরোটাই ফাঁকিবাজি আর ভণ্ডামি।
ছোটকাল থেকে আমাকে যে পরিমাণ প্রেশারে রাখা হইসে স্বপ্নে উদ্ভুতকরণের নামে, এটা স্রেফ একটা শয়তানি ছাড়া আর কিছুই না। না, শুধু বাপ মা করে নাই। করেছে শিক্ষক, প্রতিবেশী, বন্ধু, ক্লাসমেট সবাই। সবাই চোখে আঙ্গুল দিয়া বারবার দেখাইতে চাইছে তাদের বাতলাইয়া দেয়া পথ ছাড়া এস্টাব্লিশমেন্টের আর কোন সুযোগ নাই। সেই পথটা হইলো হয় বিসিএস ক্যাডার, নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, নয়তো কর্পোরেটে বড় পদ, নয়তো ব্যাংকে হোমড়া চোমড়া হয়ে ওঠা। আমি এর কোনটাই হতে পারি নাই।
আমার জীবন ব্যর্থ হয় নাই। কারণ প্রতিষ্ঠিত হবার, মেধাবী হবার, সফল হবার সমস্ত সংজ্ঞার মুখে আমি স্রেফ জুতো মেরে চলে এসেছি।
তোমরা যারা জীবনকে সফল বলতে ভাল রেজাল্ট, উচ্চ উচ্চতম শিক্ষা, ডিগ্রী, বড় পদ, উচ্চ বেতন, গাড়ি বাড়ি বুঝাও তাদের ভেতরের সমস্যাটা এই সমাজই তৈরি করে দিসে। কারণ আইফোন এইট থেকে আইফোন নাইন না নিলে তোমাদের ঘুম হয় না, নতুন রেস্তোরায় চেক ইন না দিলে পেট গুড়গুড় করে, পনেরো হাজারের পোশাক না কিনলে ফ্রাস্ট্রেশন হয়।
আমি এই সকল পুঁজিবাদী স্বপ্ন ও চাহিদার বিপরীতে নিভৃতে স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবন কাটাতে ভালবাসতে শিখেছি। নিজে। একা। কেউ আমাকে শেখায়নি। বরং আজীবন একেকটা প্রতিভাধর মেধাবীর চকচকে রেজাল্টের সংবাদের পর আমাকে তেলাপোকা ভেবে শুধু লাথি মারতেই চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে তো আমার কিছু যায় আসে নাই!
যে ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবে না ভেবে গলায় দড়ি দিয়া মরলো, সে এই নষ্ট সিস্টেমের নষ্ট স্বপ্নে বিভোর একটি বিভ্রান্ত মানুষ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার আকাঙ্ক্ষা একটি আস্ত মনুষ্য জীবনের চেয়ে বড় মনে করে যে, তাকে নিয়া এই দুনিয়া আসলে আর কীই বা করতে পারে?
বরং সে তাকিয়ে দেখতে পারতো ওই মানুষগুলোর দিকে যারা মাত্র দশ টাকা মজুরি বাড়ানোর পরও সেই মজুরিটা না পেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। সেই মেয়েটা, যার পিরিয়ডের সময় তাকে বাথরুমে যেতে দেয়া হয় না কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে বলে, সেই বাচ্চাটা যাকে ধর্ষণ করে রেখে গেছে তিনটে পাষণ্ড পুরুষ আর সে এখন স্তব্ধ, বধির।
এদের সকলের আমাদের প্রয়োজন। আমরা যারা সমাজের প্রিভিলেজড শ্রেণি। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরেছি। আমরা যারা সকালে ডিমপোচ খেয়ে বাইরে বের হই রোজ। আমাদের সামর্থ্য আছে কিছু করার। অথচ আমরা দৌড়াচ্ছি শুধু নিজের সাফল্য আর ব্যর্থতার পিছে, যে সাফল্য বা ব্যর্থতা একান্তই নিজের, এককেন্দ্রিক, স্বার্থপর।
আত্মহত্যা জঘন্য। আরো জঘন্য নিজেকে একটি নষ্ট সিস্টেমের নষ্ট স্বপ্নে সেদিয়ে দেয়া। এতটাই দেয়া, যেখানে আর কারো কোন জায়গা নেই, বাবা মা বোন ভাই বন্ধু প্রেমিক প্রেমিকা সব যেখানে অচ্ছুত, কারো যেখানে কোন মূল্য নাই।
যারা এমন স্বপ্নে মশগুল, এই পৃথিবী তাদের নিয়ে ভেবে কীই বা করবে আর?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য