আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

মামাবাড়ির আবদার ও বন্ধু ফকীর আবদুর রাজ্জাক

রণেশ মৈত্র  

ফকীর আবদুর রাজ্জাক ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব একটা পরিচিত না হলেও, সাংবাদিকতায় যশোরের সম্ভবত: জ্যেষ্ঠতম। তাঁর রিপোর্টিং অতীতে আমি দেখেছি সংবাদ এ। আজও ঐ পত্রিকাতেই দেখি তাঁর কলাম। আমার মত অনিয়মিত তিনি নন। দিব্যি নিয়মিত এবং স্বচ্ছন্দ গতিতে অক্লান্ত লিখে চলেছেন তিনি।

আমার দীর্ঘ ৬৫ বছরের সাংবাদিকতার জীবন অতিক্রান্ত করছি। এই ৬৫ বছরের মধ্যে যখন তিনি লেখা শুরু করেন (দিন, তারিখ এবং সালটা স্বভাবতই আমার মনে নেই) তখন থেকেই তাঁর বস্তুনিষ্ঠ, নির্মোহ, দুঃসাহসী প্রতিবেদন ও পরবর্তীতে তাঁর লেখা কলামগুলিরও আমি আজ পর্যন্ত একজন উৎসাহী।

তিনি আওয়ামী লীগ করেন কি না তা আমার জানা নেই অন্তত: সক্রিয়ভাবে। তবে তিনি যে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক তা কিন্তু কোন প্রকার রাখ-ঢাক না করেই দিব্যি প্রকাশ করে। যেমন আমি করে থাকি আমার দলীয় পরিচয় প্রকাশ।

রাজ্জাক সাহেব যশোরের মানুষ। যশোরের অনেক সাংবাদিক বন্ধুকে অতীতে চিনতাম। একসাথে বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি করতাম। তাই তাঁদের সাথে দেখা হতো যশোরের বা ঢাকায় বা অন্য কোন স্থানে। সংগঠনটির অকালমৃত্যু ( গলা টিপে আমার মত বললে ভুল হয় না) ঘটার পর সে সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র তিনি জনকণ্ঠের সাজেদ রহমানকে। তিনিও যথেষ্ট গুণী এবং জ্ঞানী সাংবাদিক।

আর অনেককে চিনতাম। জঙ্গিবাদের হাতে খুন হওয়া যশোরের একাধিক সাংবাদিক ছিলেন আমার কম-বেশী পরিচিত খবর পেয়ে ছুটে গেছি তাঁর শোকাতে স্ত্রীর সাথে দেখা করতে কলাম লিখবার নতুন উপাদান খুঁজতে।

সাপ্তাহিক রাখার সম্পাদক ও জঙ্গিদের হাতে খুন হন। তার আগে ঈশ্বরদী উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে এবং আরও অনেক জেলার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোন এক খবরকে কেন্দ্র করে কেউ কেটা একজন ধনী ব্যক্তি মানহানির মোকদ্দমা ঠুকেদেন রানার সম্পাদক, ঈশ্বরদী কয়েকজন সাংবাদিক এবং দিনাজপুরের একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। আমি তখন পাবনা জজকোর্টে ওকালতিও করতাম। স্বভাবত:ই সবাই মিলে আমাকে মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দিলে সাগ্রহে রাজী হলাম। আবার শঙ্কিত থাকলাম যদি জিততে না পারি তবে তো দুঃখের শেষ থাকবে না। তাই অভিজ্ঞ সিনিয়র একজন আইনজীবীকেও নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি কিন্তু সাংবাদিক বন্ধুরা কিছুতেই তা মানতে রাজী হন নি। তাই অগত্যা একাই চালালাম এবং জিতেও গেলাম। সাংবাদিক বন্ধুরা যাতায়াত খরচ এবং ফি দিতে চাইলেন কিন্তু নিই নি। কোন রাজনীতির যদি রাজনৈতিক কারণে, সাংবাদিক যদি সাংবাদিকতার কারণে মামলার শিকার হতেন আমাকে জানালে আমি ছুটে যেতাম সে মামলা বিনে পয়সায় করতে। আর করতাম গরীব মক্কেলদের কেস বিনে ফি তে।

পাবনাতে বগুড়ায় করতোয়া সম্পাদক মোজাম্মেল হক লালু, পাবনার সংবাদ এর হাবিবুর রহমান স্বপন, বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বার্তা বিভাগের Senior in-Charge আবুল হোসেন খোকন কোন না কোন সময়ে আমার মক্কেল হয়েছেন।

তবে আলোচ্য বন্ধু ফকীর আবদুর রাজ্জাক কদাপি মক্কেল হন নি। কিন্তু তাঁর সাথেই অজানিতে যেন বেশী ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠলো।

আজকের এই লেখার সেই ঘনিষ্ঠতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না জানি না। আজ মানে ১৯ জানুয়ারি ‘সংবাদে’ প্রকাশিত “রাজনীতির পথে প্রান্তে: মামাবাড়ির আবদারেরও একটা সীমা থাকে” শীর্ষক কলামটি নাড়ে আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়াটি জেনে।

বিষয়টি রাজনৈতিক এবং রাজনীতি নিয়েই তিনি লিখেছেন একেবারে হালের চলমান রাজনীতি। স্বভাবত:ই কোন কোন ক্ষেত্রে ঐ নিবন্ধের ব্যাপারে আমার মতানৈক্য প্রকাশ হওয়ার পর তিনি তা কেমন অর্থে গ্রহণ করবেন জানিনা। তবে এক পিসার মানুষ হিসেবে নিশ্চয়ই কিছু উদারতা দাবী করা অসঙ্গত: হবে না।

রাজ্জাক সাহেব লিখেছেন, “কামাল সাহেব সম্পর্কেই মূলত:। তিনি “নাচতে নেমে ঘোমটা দেওয়ার কথার উল্লেখ করেছেন। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল কয়েকদিন ধরেই বলছেন, “জামায়াতকে মনোনয়ন দিয়ে জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হবে সেটা তাঁর জানা ছিল না। আগে জানলে আমরা তা মেনে নিতাম না। ভাবটা এমন ড. কামালের মত একজন আলি ঊর্ধ্ব বয়সী ঐক্য ফ্রন্ট গড়লে জামায়াত থাকবেই। অর্থাৎ জামায়াতকে মেনে নিয়েই তাঁকে ফ্রন্ট গঠন করতে হবে।

বিষয়টি সাধারণভাবে সত্য এবং আমিও অনেকটা একমত। তবে ভিন্ন দলের একজন অভিজ্ঞ নেতা হয়ে রাজ্জাক সাহেব কি খেয়াল করেন নি ডা. কামাল “জামায়াত” কে নিয়ে একদিনও ঐক্যফ্রন্টের কোন মিটিং করেন নি। যখন তিনি বলেছিলেন ঐক্যফ্রন্ট হবে জামায়াত বর্জিত তখন কিন্তু মহা গণতন্ত্রী হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এক মহাজোট গঠন করেই ফেলেছে ( কিন্তু যথার্থ গণতান্ত্রিক বলে এবং ধোয়া তুলসী পাতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দলের বর্তমান নেতৃত্ব তা দিব্যি মেনেই নিয়েছেন। অনেক আসনে তাদেরকে নৌকা দেওয়া হলেও তাতে নৌকার মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের সারমর্ম সামান্যতমও ব্যাহত হয় নি। কিন্তু প্রবন্ধে বিষয়টি সম্পর্কে চুপচাপ থেকেছেন রাজ্জাক সাহেব। আবার ঐ নৌকায় চড়ে তারে উঠে কিছু পেতে যখন তিনি সচেষ্ট তখন এরশাদকে বলা হলো আপনার বিরোধী দল এবং আপনি বিরোধী দলীয় নেতা। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন। ফিরবেন কিনা জানা নেই তবে সন্দেহ আছে কারণ তিনি বলছেন, দেশে ফিরতে না পারলে বা অসুস্থ থাকলে বিরোধী দলীয় উপনেতা (এরশাদের আপন ভাই ) বিরোধী দীয় নেতার দায়িত্ব পালন করবেন। এবং নীতিহীন এই গুরুতর বিষয়টির প্রগতি সচেতন উপেক্ষা লক্ষণীয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে আমি কোন নেতার (ড. কামাল সহ) অন্ধ সমর্থক নই। কয়েক বছর তাঁর সাথে গণফোরাম করেছি বটে তার পর আর তাঁর সাথে সাক্ষাত যোগাযোগ নেই। তবে তিনি বা যে কেউ ভাল কিছু করলে চোখ বুঝে তাতে যেমন সমর্থন জানাই ঠিক তেমনই কেউ যদি অন্যায় করেন তাঁকেও এক পয়সার খাতির সচেতন ভাবে করি না। আসলে ছোটবেলা থেকেই এভাবে গড়ে উঠেছি - এখন জীবন সায়াহ্নে এসে তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোন মানসিকতা নেই।

এবারের নির্বাচনে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে অতিশয় দুর্বল ছিল এটাও যেমন ঠিক তেমনই আবার অনেকে মিলে বাকস ভর্তিও কাহিনী অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক। ঢাকার অবস্থানের কারণে সস্ত্রীক আমরা পাবনা গিয়ে ভোট দিতে পারি নি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেছি সে ভোট নৌকায় পড়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী যেহেতু জামায়াতের ছিল সেজন্য তা মানতে আপত্তি করি নি। কিন্তু নীতিগত দিকটা?

পাবনা-১ আসনে নির্বাচনে অভিজ্ঞ এবং ভোট ব্যাংক সম্পন্ন প্রার্থী অধ্যাপক সাঈদ গণফোরামে যোগ দিয়ে ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী হন। প্রতীক ধানের শীষ। সর্বত্র বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন, জিয়া বা গোলাম আজমের নয়। তাঁকে অসংখ্যবার আক্রমণ করা হয়েছে পোলিং এ জেষ্ঠদের খেদিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এক কেন্দ্রে ভোরে গিয়ে দেখেন বিশাল লাইন কিন্তু ভোট হচ্ছে না কারণ ভোট নেওয়া হচ্ছে না। জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন ঐ কেন্দ্রের সব ভোট আগেই হয়ে গিয়েছে।  অবাক হয়ে তিনি ফিরে আসেন।

ফেসবুকে ঐ দিন দুপুরে একটা খবর দেখলাম ২০০ মত ব্যালট বাকস ভর্তি বাকস এক জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। খবরটি যমুনা টিভি প্রচার করে। পরিণতি চ্যানেলটি তাৎক্ষণিক ভাবে বন্ধ। ২৪ ঘণ্টা মত বন্ধ ছিল কিন্তু সে খবরটুকুও অপর কোন চ্যানেল বা অনলাইন পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টারও প্রকাশ করা হয় নি। তা হলে কি বলা যাবে ঘটনাটিকে? সরকার বা নির্বাচন কমিশন তো খবরটি মিথ্যা এমন দাবী করেও কোন প্রেস রিলিজ দেয় নি।

পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার খবর নওগাঁর মান্দা থানার সি.পি.বি. প্রার্থী ও বিএসি প্রার্থী পৃথকভাবে জানিয়েছেন। এমন খবর আরও আছে। আবার এ খবরও আছে বহু কেন্দ্রে বিরোধীদলের পোলিং এজেন্ট আদৌ যায় নি। সেখানে পোলিং অফিসাররাও ভোটদানে নিরপেক্ষতা রক্ষায় সচেষ্ট থেকেছেন এমনটিও জানা যায় নি।

বিরোধীদলীয় অর্ধশতাধিক প্রার্থী বেলা ১০ থেকে বারটার মধ্যে তাঁদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। কী বলব এঘটনাকে? একতরফা সুষ্ঠু নির্বাচন?

জামায়াত-ড. কামাল ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বহু কথা রাজ্জাক সাহেব লিখেছেন।

ড. কামাল সাহেব বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ করবে জানলে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বের পদ নিতেন না। এ যাবত ঐক্যফ্রন্টের কোন সভায় জামায়াতকে ডাকাও হয় নি। বিএনপি এসেছে জামায়াত নয়। একথা কেন না জানে জামায়াত প্রশ্নে বিএনপি’র মধ্যে অনেক প্রশ্ন অনেক দ্বিমত আছে। মানতে হবে তাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং নেতৃত্ব ছন্নছাড়া (বিএনপি’র)। এ অবস্থায় কিছু কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। বিএনপি’র উচিত গণফোরমের দুইজন সহ শপথ গ্রহণ করে সংসদে যাওয়া এবং একজন মহিলা সংসদ ঐকমত্যের ভিত্তিতে মনোনয়ন দিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁদের সকল বক্তব্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। কিন্তু তারা তো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে।

এবারে আসা যাক জামায়াত প্রশ্নে ভিন্ন দিকে দৃষ্টি নিপাত্ত করা। সম্ভবত: ২০১০/১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট “বিসমিল্লাহ” “জামায়াত সহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দল ও ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম” জিয়া ও এরশাদের এই তিনটি মৌলিক উপাদানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ঐ সিদ্ধান্তের অনুকূলে সরকারী কোন গেজেট প্রকাশ না করে পঞ্চদশ সংশোধনীতে তা পালন করা হলো। জামায়াতে ইসলাম ঐ রায়ে জয় পেলেও এই সংশোধনীতে দিব্যি উৎসাহিত এবং আজ তারা প্রার্থী দেয়।

কেন? জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয় না কেন? এ কাজের দায়িত্বটা কার? বিএনপি’র ড. কামাল হোসেনের, গণফোরামের নাকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিপুল সংখ্যক আসন বিশিষ্ট সরকারের। সরকার চুপ এই প্রশ্নে। মাঝে মধ্যে আইনমন্ত্রীকে দিয়ে বলানো হয়, “বিএনপি জামায়াতের সাথে জোট করেছে বিএনপি’র সাথে আবার আলোচনা কিসের? কিন্তু বিএনপি কোন সুযোগে জামায়াতের সাথে জোট করেও পারে তা দিব্যি এড়িয়ে যাওয়া হয়। সরকার যদি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতো ১১ দল , ৫ দলের আন্দোলনের কর্মসূচী এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগের মেনিফেষ্টোতে তা ছিল ও তাহলে কি বিএনপি এমন কোন সুযোগ পেত। আজ ধীর স্থিরভাবে দলবাজি বা স্তাবকতামূলক মনোভাব পরিহার করে বিষয়টি নিস্পৃহভাবে ভাবলে উত্তর নিজের মনের কাছেই মিলবে।

প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে একটি সমাবেশ ডেকেছেন। বলেনে, নির্বাচন পূর্ব সংলাপে যারা অংশ নিয়েছিলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি তাদের সকলকেই আমন্ত্রণ জানাবেন। উন্নয়নের কাজে তিনি সকলকে সম্পৃক্ত করতে চান বলেই এমন আয়োজন। কিন্তু সর্বদা দোষারোপের রাজনীতি যে দেশকে গ্রাস করেছে তাতে কি তা সফল হবে? তবে সেখানে জামায়াতে ইসলামী আমন্ত্রণ পাবে না সত্য যদিও সরকারই তাদেরকে বৈধ দল হিসেবে টিকিয়ে রেখেছেন। তবে এরশাদের দল? নিশ্চিতভাবেই তারা সসম্মানে আমন্ত্রিত হবেন।

বন্ধুবর রাজ্জাকের লেখার একটি অংশ ভুলে গেছিলাম। ঐক্যফ্রন্ট সুরুতে অধ্যাপক বদরুদ্দোজার দলও ছিল কিন্তু জামায়াত ও ঐক্য ফ্রন্টে আসতে পারে বেবে তিনি চলে গেলেন। কোথায়? সরকারের সাথে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিদায় নিয়ে তিনি যদি পৃথকভাবেও বিরোধী অবস্থানে থাকতেন তা হলে তার হিস্মৎ বোঝা যেত। প্রশ্ন তো তা নয়। বিএনপি তাকে প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে অপমানিতও করে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। কাজেই বিএনপি যখন ঐক্যফ্রন্টের মূল দলে পরিণত হলো তখন ভবিষ্যতে আবারও যে তা ঘটবে না তা কি করে বলা যায়? দ্বিতীয়ত: ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা কে হবেন তা নিয়েও হয়তো তিনি সন্দিহান ছিলেন। কারণ ড. কামাল হোসেনের প্রতিই সকলের আকর্ষণ ছিল স্বভাবত:ই অনেক বেশী। এটাও হয়তো একটি কারণ হতে পারে।

সাংবাদিক যারা আজ আমরা করি তারা কোন কিছুর সামগ্রিকতা যদি না করি তবে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। মানুষ ভুল ধারণারও সৃষ্টি হয়। না আমি একথা নতুন বলছি তা নয় বন্ধুবর রাজ্জাক সাহেব বহুকাল যাবত তা জানেন।

আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল। মওলানা ভাষানী, শেখ মুজিবর রহমান সম্ভবত: ১৯৫৬ সালে দলটিকে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত করে তার ধর্মনিরপেক্ষ রূপ জাতির সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। স্বীধনতার পর ১৯৭২ এর সংবিধানে স্পষ্টভাষায় “ধর্মনিরপেক্ষতা”কে চায় মূলনীতির অন্যতম হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন। সেই থেকে আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ছিল “ধর্ম নিরপেক্ষতা” ও “গণতন্ত্র”।

কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জিয়ার বিসমিল্লাহ এবং জামায়াতে ইসলামী সহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে বৈধতা প্রদানের ফলে এখনও কি আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করতে পারি?

অত:পর আমদানি করা হলো হেফাজতে ইসলামী কে। এর তেঁতুল হুজুর যা যা কর্মসূচী তুলে ধরেছিলেন তাঁদের প্রথম সমাবেশে তা আমরা সবাই জানি। ওগুলির বেশীরভাগ ছিল সংবিধান বিরোধী। ওদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হলো। কিন্তু কোন যাদুমন্ত্রবলে যেন মামলাগুলো সবই প্রত্যাহত হলো। অত:পর হুজুর বয়ান দিলেন সুপ্রিম কোর্ট ভবন এলাকায় জাষ্টিশিয়া নামক শিশু কর্মীটিকে উলঙ্গ দেবী উল্লেখ করে, তা অপসারণ চাওয়ার সাথে সাথে মুহূর্তেই তা অপমানিত হলো। তাদের কথামত তরুণ-তরুণীদের পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হলো, সামনে হয়তো নারীকে আবারও অবরোধ রক্ষিতা করার চেষ্টা হবে কারণ হুজুর তাই চান।

এ আমরা কোথায় চলেছি রাজ্জাক ভাই? ভাবুন না একটু গভীরে গিয়ে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে।

আমরা মামাবাড়ির আবদার করছি না তো?

রণেশ মৈত্র, লেখক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক; মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ইমেইল : [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ