আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

বই, বই কেনা এবং লাইব্রেরি

বদরুল আলম  

বই, বই কেনা এবং লাইব্রেরি- শিরোনাম নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে  ছিল না। কিন্তু শিরোনামে একটা ভুল করে আটকে গেছি। শিরোনামে 'পাঠাগার" না লিখে ইংরেজি "লাইব্রেরি" শব্দটা ব্যবহার করেছি। আমরা মুখে কথা বলার সময় দু 'চারটা ইংরেজি কথা বলে ফেলি। কিন্তু যখন বাংলা লিখি তখন চেষ্টা করি, সেখানে যেন ইংরেজি শব্দ ঢুকে না যায়। তারপরও এই লেখাটার শিরোনামে বাংলায় পাঠাগার না লিখে ইংরেজিতে "লাইব্রেরি" লিখেছি। তার একটা কারণ আছে-পাঠাগার কথাটার একটা গাম্ভীর্য আছে, একটা ঐতিহ্য আছে। আমার হালকা কথাবার্তা দিয়ে এত সুন্দর শব্দটার অপমান করতে ইচ্ছে করছে না।

বই হচ্ছে জ্ঞানের বাহক। বই ছাড়া জ্ঞান অর্জন সম্ভব না। তাই আমাদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। যখন লেখা ছাপার অক্ষরে, বই আকারে প্রকাশিত হয়নি তখনও জ্ঞান —পিয়াসু মানুষ  জ্ঞানার্জনের জন্য এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছুটে বেরিয়েছে, অর্থ ব্যয় করে জ্ঞানী মানুষদের একসঙ্গে জড়ো করে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছে। এখন আর সে প্রয়োজন নেই। মানুষ তার লব্ধ জ্ঞান যুগ যুগ ধরে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছে বিপুল জ্ঞানের আধার গ্রন্থাগার। তবে মানুষ যেমন খাবারের জন্য বেঁচে থাকে না, বেঁচে থাকার জন্য-ই খায়, তেমনি মানুষ বই পড়ার জন্য বেঁচে থাকে না, বেঁচে থাকার জন্য বই পড়ে। কাজেই বেশি করে বই পড়তে হবে।

প্রিয় লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখায় ওমর খৈয়ামের কথা জেনেছি। তিনি বলেছিলেন,’–
Here with a loaf of bread
beneath the bough.
A flash of wine, a book of
verse and thou,
Beside me singing in the wilderness
And wilderness is paradise enow.

"রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা-যদি তেমন বই হয়"।

মজার একটা বিষয় আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি-অনেক পিতা-মাতার ধারণা ছাত্রাবস্থায় বিশেষত বিদ্যালয়, কলেজে পাঠরত অবস্থায় পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ে ছেলে-মেয়েরা অযথা সময় নষ্ট করে, তার চেয়ে যদি ঐ সময়টাতে পাঠ্য বিষয়ে পড়াশোনা করে তবে পরীক্ষার ফলাফল যা করেছে তার চেয়ে আরও ভালো করত পারতো। এ ধারণা একশভাগই ভ্রান্ত। অনুর্বর মাটির সঙ্গে সার মিশে গিয়ে যেমন জমিকে অলক্ষ্যে ভর করে, তেমনি শিশু মনেও পাঠ্য পুস্তকের বাইরের বই পড়া ভবিষ্যতে তাদের চিন্তা চেতনা ও মননে সুস্পষ্ট ছাপ রাখে।

আমরা যদি মনে করি পাঠ্যপুস্তক নিরেট সাদা ভাতের মতো আর এর সঙ্গে পাঠ্য বিষয় বহির্ভূত বিভিন্ন প্রকার বই বিভিন্ন প্রকার মজাদার ব্যঞ্জনের মতো খাবারকে সু-প্রাচ্য উপাদেয় করে তুলে। তাই বুঝতে পারা যায় য়ে, পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি কেন অন্য বইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
 
বেশ আগে খবরের কাগজে দেখেছিলাম ভেনিজুয়েলার বামপন্থী রাষ্ট্রনায়ক হুগো শাভেজ তাঁর দেশে "পাঠ বিপ্লব" শুরু করেছিলেন। এর অংশ হিসেবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একটি বাম বিপ্লবাত্মক বইও উপহার দিয়ে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বারাক ওবামাকে তিনি যে বইটি উপহার দিয়েছেন তা এডুয়ার্ডো গ্যালিয়ানোর একটি বিখ্যাত বাম বিপ্লব ক্লাসিক। হুগো শাভেজ বেশ আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারিত এক ভাষণে তাঁর দেশের জনগণকে পাঠে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর বিপ্লবে, ভাষণে নিদিষ্ট করে একটি স্লোগান জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন। তা হল 'পাঠ' এবং 'পাঠ'। এতদিন বিশ্বনেতারা তাদের জনগণকে কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন, কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো নেতা জনগণকে পড়াশুনার নির্দেশ দিয়েছেন, তাও আবার সরাসরি প্রচারিত ভাষণে। এমনটা বিশ্ব আর কখনো অবলোকন করেনি।

আমাদের দেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঠ বিপ্লব খুবই প্রয়োজন। সেই স্বপ্ন দেখি।

পৃথিবীর অনেক দেশে লাইব্রেরির জন্য আলাদা মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়, এমনকি পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও একজন লাইব্রেরিমন্ত্রী রয়েছেন। আমাদের দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় লাইব্রেরিগুলো অথচ মজার ব্যাপার হলো এই মন্ত্রণালয়ের  কোন যোগসূত্র নেই।
    
বিখ্যাত রোমান দার্শনিক  সিসেরো বলেছিলেন, "বাড়িতে  একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করার মানে হচ্ছে বাড়িটিতে প্রাণের যোগ ঘটানো। তাহলে প্রত্যেক বাড়িতে পাঠাগার গড়ে তোলা মানে নতুন একটি প্রাণ সৃষ্টি করা। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি তোমার একটি বাগান ও একটি গ্রন্থাগার থাকে, তবে প্রয়োজনীয় সবই তোমার আছে।

বদরুল আলম, প্রভাষক, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ, সিলেট; এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ