আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

হায়, জীবন এত সস্তা কেনে?

দেব দুলাল গুহ  

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'হায়, জীবন এত ছোট কেনে?এ ভুবনে?' আর আমি বলি, 'হায়, জীবন এত সস্তা কেনে? এই দেশে?'

ফায়ার সার্ভিসের ২২টির উপরে ইউনিট একসাথে কাজ করেও, নৌ-সেনা-বিমানবাহিনী একসাথে কাজ করেও, বনানীর মতো দেশের অভিজাত একটি এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা আর উন্নত সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও একটি বহুতল ভবনের আগুন নেভাতে আমাদের সাড়ে ৭ ঘণ্টা লেগে যায়!

আর আমরা আছি কান্নারত মেয়েটাকে পিঠে নিয়ে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীর চোখে জল দেখে তাঁকে বাহবা দেওয়া নিয়ে, আর আছি উৎসুক জনতার ভিড় দেখে তাদেরকে গালি দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত! (সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে কিন্তু এই মানুষগুলোই এগিয়ে এসে অনেকের জীবন বাঁচিয়েছিল। এদেরকে কেন সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় না?)

অথচ কেউ বলি না, এমন অভিজাত জায়গাতেও কেন ভবনের পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই?

হেলিকপ্টারে করে পানি এনে ঢালতে যে খরচ হয় আর যতটুকু কাজ হয়, তা দিয়ে অগ্নি নির্বাপণের কয়টা লাল সিলিন্ডার কেনা যায়?

কেন প্রতিটি ভবনের বাইরের দিকে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি থাকে না?

একটা ক্রেন দিয়ে একসাথে কয়জন মানুষকে নিচে নামানো যায়? একটা হেলিকপ্টার থেকে দড়ি ফেলে কয়জনকে একসাথে উদ্ধার করা যায়? সেই সময়ে যদি হেলানো অবস্থায় কয়েকটা বড় তাঁবু উপরে থেকে ফেলে তাতে করে আটকে পড়াদের নিচে নামানো যায় দ্রুত, অথবা যদি নিচে গোটা রাস্তাজুড়ে ফোমের কার্পেট পেতে দেওয়া যায়, যাতে লাফিয়ে পড়লে কেউ আহত হবে না, এমন ব্যবস্থা কি অবাস্তব?

আর একজন আহত মানুষকে বহন করতে দেখলাম ৮-১০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী ছুটছেন! স্ট্রেচারে করে বহন করতে তো ৪ জনের বেশি লাগার কথা না। এই সময়ে উপস্থিত দর্শনার্থীদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে ভেতরে আটকে পড়াদেরকে কি আরও দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হতো না?

আমার লিস্টে একজন অস্ট্রেলিয়া নিবাসী বাংলাদেশী লিখেছেন, তার রান্নাঘরেও অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার আছে এবং সেটার গায়ে মেয়াদ লেখা আছে। মেয়াদ শেষে নিজ গরজে এসে পালটে দিয়ে যায়। যদি কেউ ভুল করেও রান্নাঘরে সিগারেট খাওয়ার জন্যও আগুন ধরায়, তাহলেও সেই যন্ত্রের মাধ্যমে আগুন ধরার খবর চলে যায় ফায়ার সার্ভিসের কাছে, ছুটে আসে দমকল বাহিনী!

এসব বাস্তবায়ন করা কি খুব কঠিন? মোটেও না। প্রতিটি ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক। ধোঁয়া হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপর থেকে পানি পড়তে থাকবে, এমন ব্যবস্থা রাখতে না পারলেও যেন মেয়াদসহ সিলিন্ডার থাকে। ট্রেনিং দেওয়া হোক ভবনের বাসিন্দাদেরকে, কীভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় বা কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হয় শেখানো হোক। পাশাপাশি সব নাগরিকের জন্য ফায়ার ফাইটারদের ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করা হোক। তাহলে এই বিপুল উৎসুক জনতাকে উদ্ধারকর্মে দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে হতাহতের পরিমাণ কমিয়ে আনা যাবে।

আর দুদিন পরপর এভাবে আগুন কেন লাগছে সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি। কেউ কি ইচ্ছা করে সরকারকে চাপে ফেলতে আগুন লাগাচ্ছে? নাকি বিদ্যুতের কেবলগুলো নিম্নমানের? সর্বোপরি, এত ঘনঘন আগুন লাগাটা স্বাভাবিক কিছু বলে মনে হচ্ছে না। সুতরাং সতর্কতা আবশ্যক। মহান করুণাময় আমাদের সবাইকে নিরাপদে রাখুন।

দেব দুলাল গুহ, প্রভাষক, লেখক ও কলামিস্ট। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ