প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রেজা ঘটক | ০১ জুলাই, ২০১৫
প্রথম আলো তাদের ফান সাময়িকী রস-আলো-তে সাতজন ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় (ক্যাপ্টেন এমএস ধোনি, অজিংকা রাহানে, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, শিখর ধাওয়ান ও রবীচন্দন অশ্বিন)-এর মাথা অর্ধেক ন্যাড়া করে একটা ফেক বিজ্ঞাপন বানিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশী পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে ‘টাইগার স্টেশনারি, এখানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত মুস্তাফিজ কাটার পাওয়া যায়। স্টেডিয়াম মার্কেট, মিরপুর, ঢাকা’। এর ঠিক নিচে সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারের অর্ধেক নেড়ে ছবি দিয়ে সেখানে লিখেছে- আমরা ব্যবহার করেছি, আপনিও করুন।
প্রথম আলো বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় প্রথম শ্রেণীর দৈনিক পত্রিকা। সেই পত্রিকা এভাবে একটি জঘন্য ফেক বিজ্ঞাপন বানিয়ে বাংলাদেশী তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারকে যেভাবে অপমান করেছে, যে ভাষা ব্যবহার করেছে, যে রুচিবোধের পরিচয় দিয়েছে, তাতে এই দৈনিক পত্রিকায় যে কোনো রুচিশীল ব্যক্তি এখন আর কাজ করেন না, তা তারা প্রমাণ করেছে। একটি দৈনিক পত্রিকার রুচিবোধ, পছন্দ এবং ফান করার মত মেধা কতোটা দেউলিয়া হলে, তারা এমন একটি জঘন্য অপকর্ম করতে পারে, তা যে কোনো বোধসম্পন্ন ব্যক্তি-ই এর নিন্দা করবে।
ভারতীয় একটি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া এই সংবাদটি ছেপে সেখানে দাবি করেছে, বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেটারদের নগ্নভাবে অপমান করেছে। 'বাংলাদেশী নিউজপেপার মকস ইন্ডিয়ান টিম' হেডিংয়ের ওই নিউজটিতে এখন পর্যন্ত ৬১৩টি কমেন্ট পড়েছে। যেখানে অধিকাংশ ভারতীয় জঘন্য ভাষায় এর প্রতিবাদ করেছে। পাশাপাশি তারাও বাংলাদেশকে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করেছে।
এখন দেখার বিষয় আমাদের তথ্য মন্ত্রণালয় যার অধীনে দৈনিক পত্রিকা, তারা এখন প্রথম আলো'র বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।
প্রথম আলো'র যার মাথা থেকেই ফেক এন্টি-কাটারের এই বিজ্ঞাপনের আইডিয়া আসুক না কেন, এটি যে শুধু ভারতের ক্রিকেটকেই অপমান করেছে তাই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় দলের পেসার মুস্তাফিজকে নরসুন্দর বা নাপিতের সঙ্গে তুলনা করেছে। আর সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখানো হয়েছে মুস্তাফিজের ক্লায়েন্ট। কী জঘন্য!
প্রথম আলো এমন ফান করার ঔদ্বত্ত্য দেখিয়েছে, যা বাংলাদেশকেও অপমান করার সামিল। কি নিয়ে ফান করা যায়, কতোটা ফান করা যায়, তা যদি প্রথম আলো'র মত একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকের মেধা ও রুচিবোধে না কুলায়, তাহলে এর প্রথম ও প্রধান প্রতিবাদ হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। যাতে অন্য কোনো দৈনিক এমন ফান করার দুঃসাহস না দেখায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এভাবে ভারতীয়দের গালাগালির টার্গেট বানানোর প্রথম আলোর নীলনকশা মোটেও কেবল ফান-বিজ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অত্যন্ত পরিকল্পিত করেই প্রথম আলো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বে ছোট করার হীন উদ্দেশ্য নিয়েই এই জঘন্য কাজটি করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার জন্য এটি প্রথম আলোর একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনালের পর আইসিসি'র প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামাল পদত্যাগ করেন। আইসিসি'র চেয়ারম্যান ভারতীয় শ্রীনিবাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোস্তফা কামালের যুদ্ধ এখন অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নাকানি- চুবানি খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন মহল ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করছে। তেমন একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রথম আলো যে অপকর্মটি করেছে, এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটকেই বিশ্বে অপদস্ত করার সামিল।
এমনিতে এই প্রথম আলো আবার বাংলাদেশে ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকার প্রকাশ্যে ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে দালালি করে। এবার সেই প্রথম আলো কি উদ্দেশ্যে, কাদের পরামর্শে, কোন লক্ষ্যে এমন একটি অপরাধ করল, তা মোটেও যে সহজ কোনো ভাবনার প্রতিফলন নয়, এটা যারা মনে করবেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করবেন। প্রথম আলো অত্যন্ত গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটি করেছে। এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনোই সুযোগ নেই।
প্রথম আলো যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করেই, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিত ভাবেই এই অপকর্মটি করেছে। যাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এক ধরণের ঝামেলা মোকাবেলা করতে হয়। তার মানে প্রথম আলো এই বিজ্ঞাপনের আড়ালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্ষতি চায়, এটাই আসল কথা।
প্রথম আলো'র এই অপকর্মের তীব্র প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য প্রথম আলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ছোট করার মত ঔদ্বত্ত্য প্রথম আলো কোথায় পেল, তার জবাবদিহিও সরকারকে এখন নিশ্চিত করতে হবে, নতুবা এমন সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে অনেকেই আমাদের জাতীয় ক্রিকেট নিয়ে নানান কিসিমের ফান ও মস্করায় মেতে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে।
আশা করি, তথ্য মন্ত্রণলায় বিষয়টি সিরিয়াসলি বিবেচনা করবে। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনাকে মোটেও সহজভাবে নেবে না। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আসলে অভিশাপ বয়ে আনবে। যা আমরা মানতে পারি না।
প্রথম আলো'র এই জঘন্য অপকর্মের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিশ্চয়ই এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে এর ব্যাখ্যা চাইতে পারে। যা দু'দেশের ক্রিকেট সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো কঠিন করে তুলবে। যা প্রথম আলো'র পরিকল্পিত কোনো নীলনকশারই অংশ। আমরা প্রথম আলো'র এই ফানের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই। নইলে এভাবে কোনো দেশের জাতীয় ক্রিকেটারদের অপমান করার মত ঔদ্বত্ত্য যে কারোরই থাকা উচিত নয়, সেটি সবাইকে আগে উপলদ্ধি করতে হবে। নইলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নানাভাবে প্রথম আলো'র মত অনেকেই পেছন থেকে কোপ মারার চেষ্টা করবে। যা এখনই শক্তহাতে দমন করতে হবে। এজন্য কোনো ধরণের শৈথিল্য বা গড়িমসি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যই ভয়ানক দুঃসংবাদ ডেকে আনতে পারে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য