আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

হে নুসরাত হায় নুসরাত

ফজলুল বারী  

বাংলাদেশ জুড়ে এখনও নুসরাত ট্রমা চলছে। ফেনীর সোনাগাজির মাদ্রাসা পড়ুয়া এই মেয়েটির ডাক নাম রাফি। কিন্তু গিভেন নেম তথা নামের প্রথম অংশ নুসরাত নামেই সে এখন দেশজুড়ে পরিচিত। দেশবাসীর কাছে সে এখন সাহসিকা। ট্রাজেডি কন্যা। এর আগে কখনো কোন মাদ্রাসা ছাত্রী হত্যাকে কেন্দ্র করে দেশ এভাবে আলোড়িত একজোট হয়নি। কারণ এই এক নুসরাতকে ঘিরে আজকের বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা যায়। এখনও বাংলাদেশের ধর্মভীরু গ্রামীণ সমাজের অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানোকে অগ্রাধিকার দেন। তারা এটিকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কম খরচের এবং নিরাপদ মনে করেন। বিশেষত মেয়েদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে। কিন্তু এক নুসরাতের ঘটনায় দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার অন্ধকার দিকটিও বেরিয়ে এসেছে। মাদ্রাসাও এখন আর গ্রামের মেয়েদের জন্যে নিরাপদ নয়। সমাজের পাপ-তাপ মাদ্রাসাকেও স্পর্শ করেছে। খুব বাজে প্রকৃতির কিছু লোকজনও মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্বে আছেন। সোনাগাজির মাদ্রাসার ঘটনাস্থলটি এর দৃষ্টান্ত মাত্র।

এখানে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে ছাত্রীর দেহ ভোগ করতে চান! পিয়ন দিয়ে ছাত্রীকে অফিসকক্ষে ডেকে এনে তার গোপন অঙ্গে হাত দেন। লোলুপ ভোগবাদী অধ্যক্ষের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সহায়ক হিসাবে সরকারি দলের অসৎ লোকজন এবং পুলিশের সমন্বয়ে তিনি গড়ে নিয়েছিলেন একটি দুষ্ট চক্র। নুসরাতের মতো প্রতিবাদী মেয়ে এর প্রতিবাদ করে মাকে দিয়ে মামলা করানোয় তিনি শুধু না, ক্ষিপ্ত হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অসৎ নেতৃত্ব এবং পুলিশের ওসিও। যেন, হুজুরের চরিত্রে কলঙ্ক দেয় এমন বেয়াদব মেয়ে! একটি মামলাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ গ্রেফতার হলেও জেলখানায় বসে দুষ্ট চক্রকে দিয়ে তিনি নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ছক তৈরি করেন।

এই দুষ্ট চক্রের সহায়ক থানার ওসি মাদ্রাসার হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবির শাস্তি হিসাবে নুসরাতকে থানায় ডেকে এনে তার বক্তব্যের ভিডিও করে সেটি আবার ছড়িয়ে দেন অনলাইনে। পুরো ছকটি ছিল পুড়িয়ে মেরে বলা হবে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে স্থানীয় কিছু সাংবাদিকও ভাড়া করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে নুসরাত না মরাতে ফাঁস হয়েছে সবকিছু। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মেয়েটি যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মেয়েটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর চেষ্টা করছেন, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার কথা বলছিলেন, তখনও ঘটনাস্থলের থানার ওসি টিভি চ্যানেলকে বলছিলেন, অধ্যক্ষ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলছিলেন এক কথা আর তাঁর সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তখনও শয়তান হুজুরের রক্ষায় মানববন্ধন করছিল, সবাইকে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিল! নাজুক পরিস্থিতিতে ওসিকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও ওসির শয়তানির সহায়ক এসপি এখন ওসিকে বাঁচাতে চাইছেন! আর দেশে প্রধানমন্ত্রী চাইছেন দোষীদের বিচার। দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন? বুঝতে পারছেন সংঘবদ্ধ শয়তানদের কারণে এখানে খোদ প্রধানমন্ত্রীও কতোটা নিরাপত্তাহীন? এখন দেখা যাচ্ছে ওই এসপিকেও ওখান থেকে সরাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নুসরাতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেখে এসপি দোষ খুঁজতে শুরু করেছেন নুসরাত পরিবারের! তারও কি রিমান্ডে যাবার সময় হয়েছে?

এখন নুসরাতের ঘটনার এনাটমি করা যাক। খতিয়ে দেখা যাক এমন ঘটনা কেনো ঘটলো। নুসরাতের ঘটনার পর মাদ্রাসায় বলাৎকার-গ্রেফতার সহ নানা ঘটনার খবর ঝড়ের মতো আসছে। হঠাৎ যে এর মওসুম চলছে তাও নয়। যে সমাজ যত রক্ষণশীল-রাখঢাক বেশি সে সমাজের ভেতরটা তত অন্ধকার। বলাৎকারের জন্যে চার্চের যাজকদের আজ বিচার হচ্ছে। ধর্মীয় অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের কারণে যাজকরা বিয়ে-সংসার করতে পারেননা। কিন্তু তারাওতো মানুষ। যৌন ক্ষুধা তাদেরওতো হয়। তারা বলাৎকার করেন। এখন এসব ধরা পড়ছে বিচার হচ্ছে। তিরিশ-চল্লিশ বছর আগের ঘটনারও বিচার হচ্ছে যাজকদের বলাৎকারের। আবাসিক মাদ্রাসায় বলাৎকারের কারণ আবাসিক হুজুরদের কেউ কেউ এরমাধ্যমে যৌনক্ষুধা মেটান। এতদিন ভয় দেখিয়ে যেটি আড়াল রাখতে পারতেন সেটি আর আড়াল করা যাচ্ছেনা। পুরুষতান্ত্রিক রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার কারণে ধর্ষণ বাংলাদেশের একটি ব্যাধির নাম। এতদিন হুজুররা এরজন্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষা-মেয়েদের খোলামেলা চলাফেরাকে দায়ী করে ওয়াজ-নসিহত করতেন। এখনও করেন। এখন এ খাতে কিছু ইউটিউবি ওয়াজিও সৃষ্টি হয়েছে। ইউটিউবের সাবস্ক্রাইব দিয়েও তারা কামাই করেন। কিন্তু নুসরাতের ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মাদ্রাসাও এই যৌন নিপীড়ন-ধর্ষণ ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়। হুজুররা কী বলবেন নুসরাতের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? দেশের সব মাদ্রাসায় এমন ঘটেনা। যদি তাই হয় তাহলে এই ঘটনার তারা নিন্দা করছেননা কেনো?

চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার আল্লামা শফি হুজুরকে এখন দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার মুরব্বি মনে করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার স্বার্থ নিয়ে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি তিনিই করেন। যেহেতু সরকারের সঙ্গে এখন শফি হুজুরের সম্পর্ক ভালো, তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর লোকজনকে বলে দিয়েছেন তাকে যাতে কেউ আর তেঁতুল হুজুর না ডাকেন। নুসরাতের ঘটনার পর শফি হুজুর যথারীতি চুপ। এরমাঝে তিনি কাদিয়ানি মারতে হেলিকপ্টারে উড়ে পঞ্চগড়ও গেছেন। কিন্তু নুসরাত নামের মাদ্রাসা ছাত্রী মেয়েটি যাকে নিয়ে বাংলাদেশ কেঁদেছে, দুর্ভাগা মেয়েটির জন্যে শফি হুজুররা কাঁদেননি। এরমাঝে আবারও প্রমাণ হলো বাংলাদেশের এসব ধর্মীয় নেতা দেশের মূলধারা বিচ্ছিন্ন। পরের সমস্যা তারা খুঁজে বেড়ান। নিজেদের সমস্যা দেখেননা। তা স্বীকার করেননা। দোষ স্বীকার করলেতো তা সংশোধনের সুযোগ হয়।

ঘটনার সুযোগ নিয়ে বিএনপি বলেছে নুসরাতের ঘটনার জন্যে আওয়ামী লীগ দায়ী। আসল সত্য হচ্ছে সরকারি দল দায়ী। যে যখন সরকারে থাকে এর নেতাকর্মীরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে। ফেনী হচ্ছে এর উর্বর ভূমি। আমি ফেনীতে পড়াশুনা করেছি। ফেনীর রাজনীতি আমি চিনি-জানি। জয়নাল হাজারীর যুগ থেকে ফেনীতে ভয়ের রাজনীতির সূত্রপাত। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জয়নাল হাজারী এলাকা থেকে পালিয়ে গেলে ফেনীর ভয়ের রাজনীতির কর্তৃত্ব নেন রব জাসদের সাবেক নেতা ভিপি জয়নাল। মাস্টারপাড়ার দখল কর্তৃত্ব স্থানান্তরিত হয় ফেনী হাসপাতাল-একাডেমি আর পলিটেকনিক এলাকায়। আজকের নিজাম হাজারীর কর্তৃত্বেও ফেনী যে এতটুকু বদলায়নি তা দেশবাসীকে জানান দিয়েছে নুসরাতের ঘটনা। এর নেতাকর্মীদের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ-বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার নীতি আদর্শের কিছুই জানেনা বা এসব তাদের জানার দরকারও পড়েনা। অতএব যেখানে যখন দরকার হয় এরা ভাড়ায় খাটে। সর্বশেষ তারা এক বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজের ভাড়া খাটতে গিয়েছিল। অথচ এক সময় ফেনী ছিল অন্য এক শহর। শহীদুল্লাহ কায়সার, জহির রায়হানের মতো সন্তান জন্ম দিয়েছে ফেনী। ট্রাঙ্ক রোডের দু’পাশের ঢালুতে অনেকগুলো ছাপাখানা ছিলো। এসব ছাপাখানা থেকে বেরুনো সাহিত্য পত্রিকার সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

অথচ কী ভয়ংকর একটি সত্য সেখানে নুসরাতের মতো একটি মেয়েকে পুড়িয়ে মারার অপচেষ্টা ভণ্ডুল হওয়ায় তাকে মুমুর্ষু অবস্থায় আনা হয় ঢাকায়। এই সরকার দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে নতুন মর্যাদা দিয়েছে। এই মর্যাদার সুযোগ অপব্যবহার করে পরীক্ষার ১৪৪ ধারার ভিতরে একজন পরীক্ষার্থিনী মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র করেন মাদ্রাসারই অধ্যক্ষ! কারণ মেয়েটি হুজুর অধ্যক্ষের ফুলের মতো চরিত্রে কলঙ্ক দিয়েছে। এই হত্যা চক্রান্তে যারা জড়িত হন তারা মাদ্রাসারই শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নামধারী গুণ্ডা-কিলার। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে মাদ্রাসার একাধিক ছাত্রী! তারা কেরোসিন বোরকা কিনে এনেছে।

নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে ওড়নায় তার হাত বেঁধে গলা থেকে সারা শরীর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বলেছে যা এবার মর গিয়ে। তুই আমাদের সিরাজ হুজুরকে কলঙ্ক দিয়েছিস। সবাই জানে সিরাজ হুজুর পবিত্র মাওলানা। আর তুই বলেছিস হুজুর হাত দিয়েছে তোর গোপন অঙ্গে। প্রশ্নপত্রের বিনিময়ে তোকে ভোগ করতে চেয়েছে। পরিকল্পনা ছিল এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মেরে প্রচার করা হবে নুসরাত আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সব খুনের সব পরিকল্পনা সব সময় ঠিকমতো কাজ করেনা। এখানে আগুনে পুড়তে পুড়তে নুসরাত ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে আসে নীচে। পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তার গায়ের আগুন নিভিয়ে তাকে হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করেন। যে নুসরাত পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় গিয়েছিল সেই নুসরাত বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের দেয়া আগুনে পুড়ে ফেনী হয়ে গিয়ে পৌঁছে ঢাকা মেডিকেলের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে। নুসরাত এখানে পৌঁছতে পারায় বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ আর তার দোসরদের মুখোশ উন্মোচন সহজ হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটটি এক সময় ছিল ছোট। বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা আন্দোলনের উপকার হচ্ছে মেডিকেলের এই শাখাটির দক্ষতা বেড়েছে। ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে চমৎকার একদল চিকিৎসক এখানে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। নুসরাতকে যখন সেখানে আনা হয় তখনই এখানকার ডাক্তাররা বলেন ৮৫ ভাগ পুড়ে যাওয়া এ মেয়ের বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু চিকিৎসা চলতে থাকে। মিডিয়ায় বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সংবাদ পৌঁছে যাবার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেন নুসরাতের চিকিৎসার। তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সিঙ্গাপুরও এই রোগিণী নিতে চাচ্ছিলোনা। আমাকে এক ডাক্তার বলেন পুড়ে যাওয়া লেদারের মতো শক্ত হয়ে গেছে নুসরাতের বুক। সে শ্বাস নিতে পারছিলোনা। শ্বাস নিতে সহায়তার জন্যে তার পুড়ে যাওয়া বুকের শক্ত চামড়ার কিছুটা কেটে দেয়া হয়। মেয়েটি যখন এভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তখনো এক নিষ্ঠুর সোনাগাজি দেখছিল বাংলাদেশ! সেখানে নুসরাতের জন্যে নয়, মানববন্ধন হচ্ছিলো বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের জন্যে। এবং সবাই অবাক হয়ে জানলো মানববন্ধনের পিছনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। থানার বদমাশ ওসি যে নুসরাতের ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়েছিল সে তখনও টিভি চ্যানেলকে বলছিল বদমাশ অধ্যক্ষ সিরাজ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভাড়াটিয়া সাংবাদিক দিয়ে রিপোর্ট করানো হয় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল মেয়েটি।

সমাজ কতোটা রাজনীতি-নীতিহীন অসভ্য হয়ে উঠেছে সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছে নুসরাতের ঘটনা। অনলাইন বিপ্লবের যুগে এখন এসব অসভ্য চেনা এখন অনেক সহজ। ফেসবুকের মন্তব্য অথবা টিভি চ্যানেলগুলোর ইউটিউব চ্যানেলগুলোয় এক ঘণ্টা বসলেই টের পাওয়া যাবে কোথায় পৌঁছেছে দেশ! পরিবারগুলোরইবা শিক্ষা কী! মুখে এদের নেত্রী শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া অথবা এরা কোন একটা ধর্মীয় সংগঠনের অনুসারী। কিন্তু লিখতে গিয়ে নারী বা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি এদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধার প্রমাণ নেই। এরা বেশি ব্যবহারে অভ্যস্ত ‘চু—‘, ‘গো—‘ এসব! অনলাইনে এদের প্রায় সবাই একেকজন ধর্ষক অথবা বলৎকারকারী! যেন অনলাইনে বসার আগে অনলাইন থেকে বেরিয়ে এরা এসবই করে কাপড় ভেজায়! নুসরাতের এমন মৃত্যুর পরও কিন্তু অসভ্যগুলো মেয়েটিকে কটাক্ষ করে নির্দয় লিখেই যাচ্ছে! আমি ২০০৭ সাল থেকে দেশের বাইরে। তখনো বাংলাদেশ কিন্তু এতোই বেআইনি, নিষ্ঠুর-নারীর সম্মানবিরোধী ছিলোনা।

মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নুসরাত পরিস্থিতির পুলিশি ভূমিকা পালটায়। সোনাগাজি থানার ওসিকে প্রত্যাহার, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একশন শুরু হবার পরই নুসরাত হত্যা তদন্তের মোড় পাল্টাতে শুরু করে। যারা মেয়েটিকে পুড়িয়ে মেরে তার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছে তারা সফল হয়েছে। নুসরাত সত্যি সত্যি মরে গেছে। কিন্তু মরার আগে কাঁদিয়েছে সারা বাংলাদেশকে। মরার আগে ডায়িং ডিক্লারেশনে খুলে দিয়ে গেছে বদমাশ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের মুখোশ। বাংলাদেশের কোন মাদ্রাসা ছাত্রীর এমন সাহসী ভূমিকা এই প্রথম। মাদ্রাসার অন্ধকার এভাবে আর আগে কখনো বেরোয়নি। নুসরাতের মৃত্যু সোনাগাজির চেহারাও পালটে দেয়। যেখানে বদমাশ মাদ্রাসা হুজুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে সেখানে এই মৃত্যুর খবরে মানববন্ধনওয়ালারা পালিয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষার ট্র্যাজেডি দেখুন, এই মাদ্রাসা ছাত্রীর লাশ কিন্তু তার মাদ্রাসায় নেয়া হয়নি। ছাত্রীর মৃত্যুতে কোন সুরাকালামও পড়া হয়নি সেই মাদ্রাসায়! যে স্কুলের মাঠে নুসরাতের জানাজা হয়েছে সেখানে যোগ দিয়েছেন কয়েক হাজার শোকার্ত মানুষ। এর মাধ্যমে তারা জানান দিয়েছে বদমাশ হুজুরের মুক্তি দাবিকারী মানববন্ধনওয়ালারা মানেই সোনাগাজি না। তারা ভাড়াটে।

দেশের অবস্থা এখন এমন যে নুসরাত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে চলমান সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও অনেক মানুষের সন্দেহ আদৌ এ ঘটনার বিচার হবে কিনা। সবাইকে বলি, শেখ হাসিনার কারণে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে শেখ হাসিনার কারণে। মীর কাশেম আলীর টাকা খেয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা টাকা খেয়ে ঢোল হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে সুবিধা করতে পারেনি। বিচার ফাঁসি হয়েছে। নুসরাতের ঘটনায়ও শেখ হাসিনাকে যেভাবে সিরিয়াস দেখছি, আমি আশাবাদী এর বিচার হবে। এই সুযোগে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটা কথা বলি: আপনি দিনরাত এত পরিশ্রম করেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী দিনরাত ধান্দামো করে আপনার পরিশ্রমের ওপর ভর করে করে খাচ্ছে। দ্রুত আপনার দলটায় শুদ্ধি অভিযান দরকার। ফেনী দিয়ে শুরু হোক এই শুদ্ধি অভিযান। কেন্দ্রীয়ভাবে শুদ্ধি অভিযান চালাতে গেলে মাহবুবুল আলম হানিফের মতো দুর্নীতিবাজকে দায়িত্বে রেখে আপনার দল শুদ্ধ হবেনা।

ফজলুল বারী, প্রবাসী সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ