আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ক্রিকেট না দর্শক, কীসের মান বাড়াবে বাংলাদেশ?

দেবজ্যোতি দেবু  

বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ বিশ্বের দরবারে এক অনন্য অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। বিশ্বের সকল ক্রিকেট দল আজ বাংলাদেশের নাম শুনলে একবারের জন্য হলেও সম্মান দেখিয়ে কথা বলে। খেলতে গেলে একবার হলেও চিন্তা করে জিততে পারবে কি না। আইসিসি'র সকল সদস্য দলই বাংলাদেশের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। তীব্র দাপট নিয়ে খেলে যাচ্ছে, বিশ্ব মাতিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অনেকে বলেন এ আর এমন কি! আজ ভাল, কাল খারাপ। এটাই বাংলাদেশ টিমের চরিত্র। কিন্তু কথাটা কি আদৌ সত্য? শুরুতে কেমন ছিল বাংলাদেশ দল আর আজ কেমন হয়েছে সেটা কি কেউ তুলনা করে দেখেছি?

বাংলাদেশ তাদের প্রথম একদিনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলে পাকিস্তানের সাথে ৩১ মার্চ ১৯৮৬ সালে। আইসিসি'র পূর্ণ কোন সদস্য দলের সাথে সেটাই ছিল প্রথম খেলা বাংলাদেশের। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৯৪ রানে। পাকিস্তান অনায়াসে সেই ম্যাচ ৭ উইকেট হাতে রেখেই জিতে যায়।



১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ প্রথম এশিয়া কাপের আয়োজন করে এবং আয়োজক হিসেবে যথেষ্ট সম্মান অর্জন করে। যদিও কোন ম্যাচ তারা জিততে পারে নি। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মোট ২২ টি ম্যাচে হেরে গিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে।



১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। সেই বছরই বাংলাদেশ আইসিসি'র নিয়মিত সদস্যপদ লাভ করে। এরপর যা হয় তা শুধুই ইতিহাস।



১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে আইসিসি'র নিয়মিত সদস্য দেশের মধ্যে পাকিস্তানকে প্রথম বারের মতো হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় বাংলাদেশ। সেই বছরই প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে এবং ২০০০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ তাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ভারতের সাথে। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে হারলেও অর্জন হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল করেন ১৪৫ রান আর দুর্জয় নেন ৬ উইকেট।



২০০৩ সালে কোন বাংলাদেশী বোলার হিসেবে টেস্টে প্রথম হ্যাট্রিক করেন অলক কাপালি। সেই ম্যাচ পাকিস্তানের কাছে মাত্র ১ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং অনেক পরাজয়ের পর ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ তাদের ওয়ানডে ম্যাচ জেতার স্বাদ পায়। ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ তাদের ১০০ তম ওয়ানডে ম্যাচে ভারতকে প্রথম বারের মত হারাতে সক্ষম হয় যা ছিল বাংলাদেশের ১০০ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৩য় জয়।



২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত টেস্ট ম্যাচ জেতার স্বাদ পায়। ঐ মাসেই বাংলাদেশ প্রথম বারের মত ৩-২ ব্যবধানে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতে।মোহাম্মদ আশরাফুলের করা ১০০ রানের সুবাদে সেই বছরই প্রথম বারের মত বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আরেক বিস্ময়ের জন্ম দেয়। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো শ্রীলংকাকে হারায়। ঐ বছরই কেনিয়ার সাথে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। সেই বছরই এক বছরে মোট ৪৯ টি উইকেট নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।



এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে নতুন চকম দেখায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে ৫ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে ভারত আর বাংলাদেশ প্রথমবারের মত যায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলেও পরের পর্বে আর উঠতে পারে নি।



২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে নিউজিল্যান্ড টিম বাংলাদেশে খেলতে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের ১৪ জন খেলোয়াড় ভারতে ICL খেলতে চলে যায়। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। সম্পুর্ণ নতুন দল নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে নিউজিল্যান্ডের কাছে।



সম্পুর্ণ নতুন দল নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ দল সবাইকে চমকের উপর চমক দিতে থাকে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ এবং ৩-০ তে ওয়ানডে সিরিজ জিতে। সাকিব আল হাসান ঐ বছরই বিশ্বের সেরা টেস্ট প্লেয়ারের সম্মান পান।



২০১০ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ সকল টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারানোর কোটা পুরণ করে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে ৪-০ তে ওয়ানডে সিরিজ এবং জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৩-১ এ ওয়ানডে সিরিজ জিতে। ঐ বছর তামিম ইকবাল বিশ্ব সেরা টেস্ট প্লেয়ারের মর্যাদা পান।



২০১১ সালে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডকে হারিয়েও বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে ব্যর্থ হয়। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারত এবং শ্রীলংকাকে হারিয়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তানের। মাত্র ২ রানে জিতে চ্যাম্পিয়ান হয় পাকিস্তান। কিন্তু বিশ্ববাসির টনক নাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।



২০১৩ সালে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ তে হারিয়ে দেশের মাটিতেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়েকে ৩-০ তে টেস্ট এবং ৫-০ তে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে রেংকিং-এ ৯ নাম্বারে উঠে আসে।



২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে সাকিব আল হাসান আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টি তিন ফরমেটেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন। ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। বিতর্কিত ম্যাচে ভারতের কাছে ১০৯ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পরে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসেই পাকিস্তানকে ৩-০ তে ওয়ানডে এবং ১-০ তে টি-টুয়েন্টি ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ তাদের গর্জন বিশ্ববাসীকে শোনায়। তারই ধারাবাহিকতায় ভারত আসে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে। ভারতকে ২-১ এ ওয়ানডেতে হারিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়।



টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড-
Opponent  M  W
v India 8 0
v Zimbabwe 14 5
v Pakistan 10 0
v Sri Lanka 16 0
v New Zealand 11 0
v West Indies 12 2
v Australia 4 0
v England 8 0
v South Africa 8 0

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড-
Opponent  M  W
v Pakistan 35 4
v Sri Lanka 38 4
v India 32 5
v New Zealand 25 8
v Australia 19 1
v Zimbabwe 64 36
v West Indies 28 7
v England 16 3
v South Africa 14 1

বিশ্বক্রিকেটে আমাদের ব্যক্তিগত কিছু রেকর্ড-
১) মো. আশরাফুল- সর্বকনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরী (১৭ বছর)।
২) মাশরাফি বিন মুর্তজা- ওয়ানডেতে এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট (৪৯ টি)
৩) সাকিব আল হাসান- আইসিসি র‍্যাংকিং-এ অল রাউন্ডার হিসেবে ক্রিকেটের তিনটি ফরমেটেই বিশ্বসেরা।
৪) সোহাগ গাজী- বিশ্বে সর্বপ্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরী এবং হেট-ট্রিক।
৫) আবুল হাসান- বিশ্বে দ্বিতীয় ক্রিকেটার যিনি অভিষেক টেস্টে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরী করেছেন।
৬) তাইজুল ইসলাম- বিশ্বে একমাত্র বোলার যিনি ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচে হেট-ট্রিক করেছেন।
৭) মুস্তাফিজুর রহমান- বিশ্বে একমাত্র বোলার যিনি জীবনের প্রথম দুইটি ওয়ানডে ম্যাচে মোট ১১ টি উইকেট নিয়েছেন।

১৯৮৬ থেকে ২০১৫ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত এই হচ্ছে বাংলাদেশের রেকর্ডের তালিকা। খেয়াল করলে দেখবেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই বা নিম্নমুখী না। বাংলাদেশ এগুচ্ছে, উন্নতি করছে। ৮৬ সালের বাংলাদেশ টিমের সাথে বর্তমান বাংলাদেশ টিমের অনেক তফাত। বাংলাদেশ এখন শুধু একটি হারার মেশিন না। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটি আতংকের নাম। যারা শুধু ভাবেন টাইগারদের দিয়ে কিছুই হবে না,শুধুমাত্র তাদের জন্যই এই বিশাল রেকর্ডের তালিকা।

এখন আসি মূল কথায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট যেভাবে দিনের পর দিন উন্নতি করছে সেভাবে কি আমরা যারা দর্শক, সমর্থক আছি আমাদের মানসিকতার কি উন্নতি সেভাবে হচ্ছে? বাংলাদেশের সাথে ফুটবল যতোটা মানানসই, ক্রিকেট ততোটা না। গ্রাম থেকে শহরে সবাই জানে ফুটবল কিভাবে খেলতে হয়। কিন্তু ক্রিকেট কতোজন চিনে? এখন মনে হতে পারে এটা অবান্তর প্রশ্ন। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো, মাত্র ১৮ বছর আগে বাংলাদেশে ঠিক কতোভাগ মানুষ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছে বা ক্রিকেট খেলা দেখতে চেয়েছে? একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে একটা ক্রিকেট টিম আছে সেটাই কেউ জানতো না। এইতো সেদিন, আইসিসি ট্রফি জেতার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কেউই তেমন একটা মাথা ঘামায় নি। কিন্তু আজ, ক্রিকেট বাংলাদেশে সম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা কি সত্যি ক্রিকেটকে সেভাবে সম্মান দেখাতে পারছি ?

টিভিতে পুরনো খেলা দেখতে বসলে দেখা যায় খেলার শেষে গ্যালারীর সব দর্শক মাঠে ঢুকে যেত। পিচের উপর উঠে নাচতো। খেলোয়াড়রা কোন রকম নিজেকে বাঁচিয়ে দিত দৌড়। কিন্তু এখন? এখন কি আর ঐসব দেশের দর্শকরা সেটা করে ? করে না। কারণ তারা সময়ের সাথে সভ্য হয়েছে, ক্রিকেট একটি সভ্য খেলা সেটা তারা বুঝে গেছে। কিন্তু যখন খেলাটা বাংলাদেশে হয় তখন চিত্রটা কেমন হয়? যাদের মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা আছে তারা বুঝবেন। বাকিদের জন্য বলি, গ্যালারীতে বসে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি, খেলোয়াড়দের নিয়ে বাজে মন্তব্য আর হেরে গেলে জয়ী দলের সমর্থকদের উপর চড়াও হওয়া। ভারত, পাকিস্তানের দর্শকও ঠিক এই মাপেরই।

কিছুদিন আগে ভারতীয় একজন দর্শককে নিয়ে কতো কিচ্ছা কাহিনী হলো। কেউ বলে মেরেছে, কেউ বলে মারেনি। আমিও বলছি ভারতীয় ঐ দর্শক "সুধীর গৌতম"কে অসম্মান করা হয়েছে। তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। গালাগালি করা, টিটকারী করা, ধাক্কা দেয়া সবই নির্যাতনেরই সামিল। কিন্তু এই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করা হয়েছে। বাঙ্গালী কিছু দর্শককে ধোয়া তুলসি পাতা দেখানো হয়েছে। যা আসলেই লজ্জাজনক।

কেউ কেউ বলছে ভারতীয় মিডিয়া এটাকে ইস্যু বানিয়ে বাজে নিউজ করেছে, বাংলাদেশকে ছোট করেছে। সেটাতো তারা করবেই। সেটাই তাদের কাজ। সুধীরকে আক্রমণ করার আগে সেটা ভাবা উচিত ছিল। তোমরা আক্রমণ করতে পারবে আর তাদের মিডিয়া সেটা প্রচার করবে না?



আমরা কেউ যদি ভারতে খেলা দেখতে যাই আর আমাদের সাথে যদি এমন কিছু হয় তাহলে কি বাংলাদেশের মিডিয়া চুপ থাকবে? তারাও সেটাই করবে যা ভারতীয় মিডিয়া করেছে। আগে পাক-ভারত ম্যাচ ছিল সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ। কিন্তু এখন আর পাকিস্তানের ক্রিকেটে সেই ধার নাই। তাই ভারতের ক্রিকেট ব্যবসাতেও তেমন একটা কাটতি নেই। ভারতের নতুন কোন প্রতিপক্ষ দরকার। আর এই মুহূর্তে বাংলাদেশের চেয়ে ধারালো প্রতিপক্ষ তারা এতো সহজে পাবে না। তাই বাংলাদেশের সাথে খেলাকে তারা এতো নেগেটিভ-পজেটিভ মিলিয়ে কাভারেজ দিচ্ছে। যেন নিকট ভবিষ্যতে তারা বাংলাদেশ ভারত ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট বাণিজ্য আবার সচল করতে পারে। তাই ওদের এতো মাথা ব্যাথা। সেটা আগে থাকতে বুঝা উচিত ছিল।

এখন প্রশ্ন করতে পারেন আমি কিভাবে নিশ্চিত হলাম যে বাংলাদেশের দর্শকদেরই দোষ ছিল? বাংলাদেশী দর্শকের একটা রূপতো ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করেছি। এখন আসি আরেকটা রূপে।

বিশ্বকাপ চলাকালীন অবস্থায় অস্ট্রেলিয়াতে মাশরাফির উপর হামলা করেছিল কিছু বাঙালি দর্শক। কারণটা ছিল আগের দিন ম্যাচ হেরে যাওয়া। এই ধরণের ঘটনা কি ভারত-পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোন দেশের দর্শকদের কাছ থেকে হয়েছে বলে শুনেছেন কোনদিন?



সাকিব আল হাসানের সাথে সিলেট স্টেডিয়ামে দর্শক নোংরামী করলো। সাকিব ধৈর্য্য হারিয়ে কলার চেপে ধরলেন ঐ দর্শকের। সাকিবের স্ত্রীর সাথে গ্যালারীতে বসে নোংরামী করলো শিল্পপতির ছেলে। জিনিসটা এতোটাই নোংরা ছিল যে, খেলার বিরতির সময় সাকিবের সাথে ঐ ছেলের হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। নিজের স্ত্রীর সম্মান বাঁচানোর জন্য খেলার মাঝেও বাইরে মনোযোগ দিতে হয়েছে তাঁকে।



মাত্র ২/৩ দিন আগে নাসির হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেইজবুক পেইজে তার বোনকে নিয়ে সেলফি তুলে আপলোড করেছিলেন। সেই ছবিতে নাসির আর তাঁর বোনকে নিয়ে এতো বাজে মন্তব্য এসেছে যে ক্ষোভে নাসির বাধ্য হয়েছেন সেই ছবি রিমুভ করতে এবং বলেছেন- "আপনাদের মত ফ্যান আমার দরকার নাই। আমাকে যারা পছন্দ করেন না তারা আমার ছবিতে লাইক দিবেন না। আমাকে ফলো করবেন না।"



নাসিরের ছবির এই অবস্থা দেখে মাশরাফি তাঁর ফেইসবুক পেইজ বাংলাদেশীদের জন্য রেসট্রিকটেড করে দিয়েছেন। বাংলাদেশী দর্শকদের এমন নোংরামী তিনি তাঁর পেইজে দেখতে চান না। সম্প্রতি স্টার হয়ে উঠা মুস্তাফিজের সাথে কোন মেয়ে ছবি তুলতে আসলেও সেই ছবি আর মেয়েদের নিয়েও করা হয় নোংরা মন্তব্য।



বাংলাদেশকে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে গৌরবের স্থানে নিয়ে গেল যে টাইগাররা, সেই টাইগারদের অবস্থা যদি এমন হয় দর্শকদের কাছে, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা তারা কি করতে পারে একটু ভেবে দেখুন।

বাংলাদেশে এখনও দেশপ্রেমিক দর্শক সেইভাবে তৈরি হয় নি। বাংলাদেশের সাথে ভারত বা পাকিস্তানের খেলা হলে এখনও দেখা যায় সেই দুই দলকে সমর্থন দেয়ার মানুষের অভাব হয় না। মাঠে পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দেয়া হয়। এখনও হিন্দু হলে ভারত আর মুসলমান হলে পাকিস্তানের সমর্থক, এই ভাবটা সবার মনে কাজ করে। এর থেকে বের হয়ে এসে অনেকেই এখনও মনে প্রাণে বাংলাদেশী সমর্থক হতে পারেন নি। তাদের মতে বাংলাদেশের কোন যোগ্যতা নেই। বাংলাদেশ জিতে গেলেও বলে প্রতিপক্ষকে টাকা খাইয়ে ম্যাচ জিতেছে, আবার হেরে গেলে বলে টাকা খেয়ে ম্যাচ হেরেছে। কিন্তু যোগ্যতা যদি নাই থাকে তাহলে বাংলাদেশের খেলার এতোটা উন্নতি কিভাবে হয়েছে প্রশ্ন করলেও তাদের কাছে কোন উত্তর থাকে না।

বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো উন্নতি করবে সেই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আগামীতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হিসেবে বাংলাদেশের নাম লেখা থাকবে সেটাও বাজি ধরে বলতে পারি। কিন্তু দর্শকদের মানসিকতার উন্নতি যদি না হয়, খেলার মানের সাথে সাথে দর্শকদের মানও যদি না বাড়ে, শিষ্ঠাচার যদি বাঙালি দর্শকেরা শিখতে না পারে, তাহলে এটা নিশ্চিত খেলোয়াড়দের কারণে বাংলাদেশের যতোটা সুনাম হবে, দর্শকদের কারণে ঠিক ততোটাই দুর্নাম হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের।

 

দেবজ্যোতি দেবু, সংস্কৃতি কর্মি, অনলাইন এক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ