আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মাশরাফি কিংবা রোগীর জায়গায় থাকলে কী করতেন আপনারা?

দেবজ্যোতি দেবু  

মানুষ হাসপাতালে কেন যায়? জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে! চিকিৎসা সেবা তো ডাক্তারের চেম্বারেই পাওয়া যায়। তাহলে হাসপাতালে কেন যেতে হবে?

যেতে হয় কারণ ডাক্তারের চেম্বারে জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় না। তিনি শুধু ওষুধ লিখে দিতে পারেন, উপস্থিত সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত কোন সুযোগ সুবিধা সেখানে থাকেনা।

তার মানে দাঁড়ায়, হাসপাতালে যাওয়া রোগীরা একদম সংকটাপন্ন অবস্থায় জরুরি চিকিৎসা নিতে যাবেন। জনগণকে এই সুবিধা দেওয়ার জন্যই রাষ্ট্র হাসপাতালের ব্যবস্থা করে দেয়। সেখানে অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দেয়। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই রাখা হয়। কারণ, রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে এই চিকিৎসা সেবা।

জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য হাসপাতালে গেলেন; গিয়ে দেখলেন রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করার জন্য অভিজ্ঞ কোন ডাক্তার সেখানে উপস্থিত নেই। কী করবেন তখন? রোগীকে বিনা চিকিৎসায় মরে যাওয়ার জন্য ফেলে রাখবেন?

না, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা তা করি না। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে-পায়ে ধরে ডাক্তার এনে দেয়ার জন্য অনুরোধ করি। এমনটাই কি করার কথা? না, এমনটা করার কথা না। তবুও এটাই আমাদের করতে হয়। করতে হয় কারণ সরকারি হাসপাতালে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। যা আছেন তাদেরকেও সময় মত পাওয়া যায় না। জিজ্ঞেস করলে শুনতে হয় এতো রাতে ডাক্তার পাবো কোথায়? শুনতে হয় ডাক্তার সাহেব ছুটিতে আছেন। নতুবা শুনতে হয়, ডিউটি ডাক্তার বাইরে আছেন। কখন আসবেন জানি না। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনটাও শোনা যায় যে, ডাক্তার সাহেব কবে আসবেন সেটা কেউ জানে না!

বলতে পারেন, সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কী দরকার? প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গেলেই হয়। ভাই, শহরের রোগীকে না হয় ক্লিনিকে নিলেন, গ্রামের রোগীরা কোথায় যাবে? তাছাড়া ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা করানোর আর্থিক সঙ্গতি কতজনের আছে?

অসুস্থতা সময় দেখে আসে না। সেটা দিন-রাত যে কোন সময়ই হতে পারে। মানুষ অসুস্থ হয় বলেই হাসপাতালে যায়। আর তখন যদি শুনতে হয় ডাক্তার নেই, তখন কেমন লাগবে আপনার? তখনো খুব সহজেই সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাবেন। এসব অসঙ্গতি দেখার কি কেউ নেই বলে বলে ফেইসবুকে বিপ্লব শুরু করে দেবেন। দিন-রাত এক করে দিয়ে সরকারের পিণ্ডি চটকাবেন। তাই না?

সদ্য সাংসদ হওয়া মাশরাফি তার নিজ এলাকার একটি সরকারি হাসপাতালে রোগীদের খোঁজ খবর নিতে গিয়ে এমনই এক অসঙ্গতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। রোগীদের ভোগান্তি শুনে দায়িত্বরত নার্সদের সাথে কথা বলেছেন। জেনেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার অনুপস্থিত। এমন অবস্থায় তাঁর ঠিক কী করা উচিত ছিল? বাজার থেকে দুই টাকার সান্ত্বনা কিনে এনে রোগীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসাই কি তাঁর উচিত হতো? তখন কী বলতেন আপনারা? তখনো মাশরাফিকেও পচে যাওয়া সিস্টেমের নতুন সংস্করণ বলে পুনরায় বিপ্লবী বয়ান দিতেন।

মাশরাফি ঐ ঘুণে ধরা সিস্টেমের তোয়াক্কা না করেই রোগী সেজে ঐ ডাক্তারকে ফোন করেন। তিনি কেন অনুপস্থিত জানতে চান। তখন ঐ ডাক্তার সাহেব রোগীকে রবিবারে মানে আরও তিনদিন পরে আসতে বলেন! মানুষ হাসপাতালে কেন যায় সেটা উপরেই বলেছি। আর সেই বিচারে যখন একজন ডাক্তার উপস্থিত রোগীকে তিনদিন পরে আসতে বলেন তখন কেমন লাগবে আপনার? ঐ অবস্থায় আপনি কী বলতেন? ফোনে ভালোবাসার কথা বলতেন না নিশ্চয়ই!

একটু খেয়াল করে দেখুন, মাশরাফি কিন্তু রোগী সেজে ফোন করেছিলেন এবং ডাক্তার সাহেব এমন জবাব দিয়েছেন। এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে যখন জানতে চাইলেন ডাক্তার সাহেব কেন অনুপস্থিত, তখন তাঁর প্রশ্নের কোন উত্তর অপরপ্রান্ত থেকে ডাক্তার সাহেব দিচ্ছিলেন না। একজন মানুষকে বারবার প্রশ্ন করার পরও যখন সে কোন উত্তর দেয় না, তখন কী বলা উচিত ছিল তাকে? আপনি হলে কী বলতেন? মাশরাফি তাও ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছিলেন ডাক্তার সাহেব 'তাঁর সাথে ফাইজলামি করছেন কিনা'। আর এতেই আপনারা অভদ্রতা খুঁজে পেলেন? ঐ ডাক্তারের কোন দোষই চোখে পড়েনা আপনাদের? সাংসদ হিসেবে কেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও তো এই প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের সবার আছে, আছে মাশরাফিরও। তাহলে? অধিকারের প্রশ্নে আপনারা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেতাই মন্তব্য করতে পারবেন কিন্তু একজন ডাক্তারকে সাধারণ প্রশ্ন করতে দেখলেই আপনাদের গায়ে জ্বলে?

একজন নামকরা ব্যক্তি দেখলাম উনার লিখায় উল্লেখ করেছেন, মাশরাফির উচিত ছিল এই বিষয় সংসদে উপস্থাপন করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা "আপনি কী ছিঁড়েছেন জবাব দেন"! চিন্তা করেন, যারা একজন দায়িত্বহীন ডাক্তারকে বলা 'আপনাকে কী করবো বলেন' বাক্যটার মধ্যে অসভ্যতা খুঁজে পেয়েছেন তারাই আবার দাবি করছেন একজন মন্ত্রীকে এমন অশ্লীল প্রশ্ন করতে! কতোটা হিপোক্রেট আমরা!

আমি কখনো কারো খারাপ চাই না। তবে আজকে খুব করে চাই, আপনারাও যেন জীবনে একবারের জন্য হলেও রোগী নিয়ে এমন বিপাকে পড়েন। আমি শুধু দেখতে চাই তখন আপনাদের অবস্থা কী হয়। আমি শুধু জানতে চাই আপনারা তখন কী বলেন, কী করেন!

দেবজ্যোতি দেবু, সংস্কৃতি কর্মি, অনলাইন এক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ