আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

এই ছাত্রলীগকে আমি চিনিনা!

ফজলুল বারী  

একদল দেখি ফেসবুকে এভাবে প্রোফাইল আপডেট করছেন- "ছাত্রলীগে জব শুরু করেছেন"! ছাত্রলীগ তাহলে জবও দেয়? তা বেতন কতো? আর অন্যসব সুবিধাদি? কী বললেন? বেতন লাগেনা বা লাগবেনা? তাহলে কী অমুক-তমুকের পকেট কাটবেন বা হলে অমুককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নেবেন? এটা কিন্তু ছাত্রলীগ না। এটা ভুল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নামে এখন যেটা ভুল গড়া হয়েছে তা ইতিহাস প্রাচীন সংগঠনটির সংগে মানানসই না। ছাত্রলীগ নামটি এদের ধারণ করেনা; ধারণ করতে পারেনা।

ছাত্রলীগের সঙ্গে মিছিলে কেটেছে আমার কৈশোর-যৌবন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মিছিলের সঙ্গে হেঁটে আমাদের প্রজন্মও সাংবাদিক হিসাবে বিকশিত হয়েছে। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরাই ছিলেন আমাদের বন্ধু। এদের প্রায় সবাই আমাদের মতো না খাওয়া পোড় খাওয়া, লিকলিকে গড়নের ছিলেন। সারাদিন মিছিল সংগ্রাম করে হলের মেঝেতে বা এক চৌকিতে দু’জন তিনজন ঘুমাতেন। সকালে নাস্তা করতেন হলের স্টলে বা মধুতে। যেখানে কম টাকায় খাবার পাওয়া যেতো। গ্রেপ্তার ভয়ের সময়গুলোতে তো চলতো আরও কঠিন জীবন।

এখনতো সব তেল চকচকে চেহারা। শুনি একেকজন দামী গাড়ি-বাড়ির মালিক। বাজারের সর্বশেষ দামী মোবাইল সেট ব্যবহার করেন। অনেক কল রিসিভ করতে হয়। তাই অনেকের একটা মোবাইলে চলেওনা। কারো কারো ব্যক্তিগত অফিস, স্টাফও আছে। আছে গোপন ব্যবসা-ঘরসংসার। ফেসবুকে মাঝে মাঝে দেখি ছাত্রলীগের অমুক নেতা অমুকের পড়াশুনার খরচ দেবেন! অমুকের চিকিৎসার সমুদয় খরচ মিটিয়ে দিচ্ছেন! বিশাল একদল 'সহমত ভাই', আপনি মহান দৃষ্টান্ত ভাই, আপনিই ছাত্রলীগ, আপনিই নেত্রীর কাণ্ডারি বলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সে সব পোষ্টে!

আমি অবাক হয়ে যাই, ছাত্রলীগের নেতা যে চাকরি করেনা, অফিসিয়ালি ব্যবসা নেই, সে কিভাবে এত টাকার মালিক বনে গেলে? সত্যি এই ছাত্রলীগ আমি চিনিনা।

আমাদের সময়ের ছাত্রলীগ নেতারা ছিলেন পোড় খাওয়া সংগ্রামী, সৎ। অনেক লাজলজ্জাও তাদের মধ্যে কাজ করতো। সর্বশেষ ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলন, ডাকসু নির্বাচনেও সবার ধারণা হয়েছে শুধু ছাত্রলীগ না মূলধারার কোন ছাত্র সংগঠনই এখন আর সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেনা। কারণ সাধারণ ছাত্ররা সারাক্ষণ এদের জীবন দেখে। প্রিয় প্রজন্ম সাধারণ ছাত্ররা এখন অনেক চালাক-চতুর। এদের ভয় দেখিয়ে শ্রদ্ধা ভালোবাসা পাওয়া যায়না। আদায়ও করা যায়না। তাই সুযোগ পেলে এরা ডাকসুর মতো জায়গায় অন্যজনকে ভোট দেয়।

এখন দেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে গড়পড়তা সব ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীই সাধারণ ধারণায় চাঁদাবাজ। ধান্ধাবাজ। এদের বেশিরভাগ নিয়মিত পড়াশুনাও করেনা। ব্যতিক্রমী কতিপয় থাকতে পারেন এখনকার নেতারা আর সাধারণ ছাত্রদের কাছে না দলে সংগঠনে তাদের আশ্রয় নেতার কাছে দায়বদ্ধ। অনেকে এমনও বলেন ছাত্রলীগ এত কষ্ট সংগ্রাম করেছে এখন একটু ভোগ করবেনা? কষ্ট যারা করেছে তাদের বেশিরভাগ এখন ভোগ করছে। এই ছাত্রলীগ বা এই সংগঠনগুলো কষ্ট করা সংগঠন না। এদের নেতাকর্মীদের প্রায় সবার জন্মই হয়েছে ভোগবাদী ধান্ধাবাজ সময়ে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের পর সে রকম রাজনৈতিক আন্দোলন আর এদেশে হয়নি।

এখন ছেলেমেয়েরা সংগঠনে যোগ দেয় ভাইদের মাধ্যমে বা কারণে। ভাইরা ভর্তি বা হলের সিটের জন্য তদবির করেন। পারিবারিক ভাবে বা কারণে এখন সংগঠনে যোগ দেয় কম। বুদ্ধিমান পরিবার কর্তা নেতা ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ান। তাদের ঘেঁটু নেতাদের মাধ্যমে যারা সংগঠনে যোগ দেয় এদের সিংহভাগ সংগঠনটি সম্পর্ক বিশদ জানেনা। এখন আবার বেশি জানা লাগেনা বা বেশি জানা ভালোনা। কিছু নেতার নাম স্লোগান জানলেই চলে। তাদের ভাইরাও এসব জানেনা। এ যেন বাংলাদেশের দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তার মতো। চালক গাড়ি চালাতে শিখেছে ওস্তাদের কাছে। ওস্তাদই ট্রাফিক রুল কিছু জানতোনা। শিষ্যকে শেখাবে কী করে। তাই পথ বাংলাদেশের দুর্ঘটনাময়। বাংলাদেশের রাজনীতিও এখন দুর্ঘটনাময়, কারণ এখানে কেউ তার সংগঠন জানেনা। জানে ভাই। নেত্রী। এনাফ।

একসময় তোফায়েল আহমদরা ছাত্রলীগ দেখতেন। সর্বশেষ দেখতেন ওবায়দুল কাদের। এখন যারা ছাত্রলীগ দেখেন তারা মূলত সেই গাড়ির ওস্তাদ কিসিমের। তার দরকার কে কে সবকিছুতে বলতে পারবে 'সহমত ভাই'। এটা যত ভালো বলা যাবে তাতে কালেভদ্রে নেত্রীর কাছে যাওয়া যাবে ছবি তোলা যাবে। আর একবার ছবি তুলতে পারলেই...! অতএব যা ঘটার তাই ঘটছে। এখন আবার গডফাদার নেতারাই ছাত্রলীগ নিয়ে গ্রুপিং করেন। গ্রুপিং বজায় রাখেন। এরজন্য খুনখারাবি থেকে শুরু করে হেন বাজে কাজ নেই যা তারা করেননা। আসলে এখন শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোথাও কোন নিঃস্বার্থ নেতাকর্মী নেই। শেখ হাসিনা দলটিকে ক্ষমতায় এনেছেন। ক্ষমতায় ধরে রেখেছেন। আর অন্য সবাই মিলে করে খাচ্ছেন!

সর্বশেষ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ সংগঠনের ভোগবাদী চরিত্রটি আর উৎকট প্রকাশিত হয়েছে। পদপ্রাপ্ত, পদবঞ্চিত উভয়পক্ষই ভোগের জন্য ভোগের আশায় এখানে এসেছেন। তাই পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের পিটিয়ে লাল বানিয়ে দিয়েছে পদপ্রাপ্তরা। কী বেয়াদব, আমাদের সহমত ভাই না বলে উল্টো প্রতিবাদ করে! ছাত্রলীগ দূরে থাক এদের কেউ কিন্তু বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনাকে ধারণ করেনা। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর কয়েক পাতা পড়ে থাকতে পারে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা এই বই ছাত্রলীগের চেয়ে বেশি পড়েছে মুখস্থ করে শিবিরের ছেলেমেয়েরা। তাদের অনেকে বইটি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনাও শুরু করে। ধান্ধার ব্যস্ততাও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই বইটি পড়েও বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করার চেষ্টা করেনি।

নতুন কমিটি ঘোষণার পর আরেকটি বিষয় বোঝা গেলো! কথিত গোয়েন্দা রিপোর্ট বলে যা শোনা যায় তা ফালতু। অথবা এটাই দক্ষতা আমাদের কথিত রাজনৈতিক সহমত ভাই গোয়েন্দাদের। নতুন কমিটি নিয়ে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের সতর্ক করছি। এই সংগঠনগুলো যারা করবেন তাদের এসব মেনে নিয়েই করতে হবে। যদি কারো সংগঠন বদলের ইচ্ছা থাকে তা অন্যকথা। যদিও জানি রাজনৈতিক জ্ঞানহীন ধান্ধাবাজরা এখন এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের মতো সোনার ডিম পাড়া সংগঠন ছাড়বার মতো বোকা নন। তাহলে এখন পদত্যাগ সহ এসব লোক হাসানোর কী দরকার!

ফজলুল বারী, প্রবাসী সাংবাদিক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ