আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্য

রেজা ঘটক  

বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানিগুলো আপনার অজান্তেই আপনার ফোন থেকে নিয়মিত কেটে নিচ্ছে টাকা। এক্ষেত্রে এরা নানান কৌশল ও ষড়যন্ত্র করে আপনাকে নানান কিসিমের প্রোগ্রামে সাবস্ক্রাইব করে থাকে। আপনি এদের নতুন কোনো অফারে নিজে এসএমএস পাঠিয়ে সাবস্ক্রাইব না হলেও, এরা জোরজবরদস্তি মূলক আপনাকে কিছু অফারে অটোমেটিক সাবস্ক্রাইব করাবে, যা আপনি একদম জানেন না। 



আপনার অজান্তেই এরা এমন অসংখ্য অফার দেশের নানান শ্রেণিপেশার ভোক্তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর মাস শেষে বা সপ্তাহ শেষে বা কোনো কোনো অফারে দিন শেষে আপনার ফোন থেকে এজন্য কেটে নিচ্ছে একটাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা, বিশ টাকা, ত্রিশ টাকা, চল্লিশ টাকা এমন কি পঞ্চাশ টাকা। যা আপনি একদম জানেন না।



আপনি জীবনেও এমন অফারের নাম শোনেন নি, অথচ ওরা আপনাকে এসএমএস করে জানাবে, আপনি এই অফার এনজয় করার জন্য এত টাকা কেটে নেওয়া হলো। এটি যদি আপনি বন্ধ করতে চান, তাহলে ফিরতি এসএমএস করুন। তখন আবার ওরা আরেকটা ফি কেটে নেবে। এসব শয়তানি তো আছেই।



এছাড়া বিভিন্ন মোবাইল সেটের সঙ্গে নানান কিসিমের প্রোগ্রাম অটো সেট করা থাকে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে মোবাইল সেট কোম্পানি গুলোর কিছু গোপন চুক্তি থাকে। যেসব গ্রাহক সেসব সেট কিনবে, তারা গ্রামীন বা রবি বা বাংলালিংক বা সিটিসেলের সেসব অফার গুলো অটো সাবস্ক্রাইব হয়ে যায়। ফলে গ্রাহকের অজান্তেই তার ফোন থেকে দিনে/সপ্তাহে/মাসে টাকা কেটে নিচ্ছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। আপনি কোনো অফারের সাবস্ক্রাইব করেন নি অথচ ওরা জোর করে আপনাকে সাবস্ক্রাইব করে দিচ্ছে। আবার আনসাবস্ক্রাইব করতেও আপনার থেকে কৌশলে টাকা কেটে নিচ্ছে। এটা স্রেফ প্রতারণার এক ব্যবসা।



আপনি খেয়াল করে দেখবেন, সারাদিনে আপনার মোবাইলে নানান কিসিমের এসএমএস আসে। এসএমএস বিড়ম্বনা তো আছেই। তারপর মাঝে মাঝে আবার অটো মেশিনে আপনাকে ফোন দেবে। এই ফোনেরও কোনো মা-বাপ নেই। রাত বিরাত নাই। যখন তখন। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) ভোর সাড়ে চারটায় আমার মোবাইলে একটা কল আসে। একই নম্বর থেকে বুধবার বিকেলেও ফোন আসে। বিদেশি নম্বর ভেবে রিসিভ করে পুরো বোকা বনে গেলাম। এদের নম্বরগুলো সাধারণত এরকম ৮৪৬৬, ৭৮৬, ২০০১, ২১২৯৫৯৯। তো আপনি নম্বর না দেখে ভুলে রিসিভ করলেই ওরা অটোমেটিক মেশিন থেকে সেই আজব অফারটি আপনাকে শোনাবে, এবং যথারীতি আপনার থেকে টাকা কেটে নেবে।



এভাবে মোবাইল কোম্পানিগুলো আপনার অজান্তেই আপনাকে নিয়ে এক মস্তবড় ফাঁদ পেতেছে। আপনি টেরও পাচ্ছেন না কখন আপনার ফোন থেকে কত টাকা কেটে নিচ্ছে। এমন কি এ বিষয়ে সরকার বাহাদুর বা মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবরই নিরব।



বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি মোবাইল কোম্পানিগুলোর এসব কৌশল বা ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা সম্পর্কে জানে, কিন্তু দেশে যেহেতু আইন ঠিকমত কাজ করে না। তাই একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীকে টু-পাইস দিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো এই অবৈধ ব্যবসাটি অবাধে করে যাচ্ছে। এমন কি এটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে তেমন জোরালো কোনো নিউজ হয় না। কারণ মিডিয়াগুলো এদের বিজ্ঞাপনের টাকায় চলে। তাই এই বিষয়ে এরা পুরোপুরি অবগত থাকলেও কৌশলে একেবারে চুপচাপ থাকে।



দেশের নির্বোধ জনসাধারণ মোবাইল কোম্পানিগুলোর এই অবৈধ খপ্পরে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজেদের অজান্তেই এদের দিয়ে দিচ্ছে। এটা দেখারও যেন বাংলাদেশে কেউ নেই। আমাদের টেলিফোন বিষয়ক মন্ত্রণালয় আছে। সেখানে অভিযোগ করলেও এর কোনো সুরাহা হয় না। কারণ প্রয়োজনীয় লোকগুলো এসব মোবাইল কোম্পানি তাদের অবৈধ টাকায় আগেই পকেট করে রাখে। ফলে আইন নিজস্ব গতিতে একদম আগায় না। আইন এক্ষেত্রে বধির হয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটায় উল্টো সমর্থন যোগায়। আমরা যেন এক মগের মুল্লুকে বসবাস করছি!



প্রথম কথা, মোবাইল কোম্পানিগুলোর সারাদিনের এত হাজার হাজার এসএমএস ঝামেলা একজন গ্রাহক হিসেবে আমাকে কেন প্রতিদিন সইতে হবে? কোনো একটি মোবাইল কোম্পানির সিম ব্যবহার করলেই সেই মোবাইল কোম্পানিকে তো আমি অবাধে এভাবে বিড়ম্বনা যোগান দেওয়ার লাইসেন্স দেইনি। এদের নতুন কোনো অফার থাকলে সেজন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে পারে। রেডিও-টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিতে পারে। সরাসরি গ্রাহককে দিনের মধ্যে হাজারবার এসএমএস করে একই অফার বারবার জানানোর কী আছে?



তারপর এসব আজব অফার থেকে এভাবে কৌশলে টাকা কেটে নিচ্ছে এরা। এর কি কোনো প্রতিকার নেই? এ বিড়ম্বনা নিয়ে আমি কয়েকবার লিখেছি। লিখে এদেশে কোনো কাজ হয় না। কারণ আইন এখানে টাকার পেছনে লুটোপুটি খায়। মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতি মিনিটে গ্রাহক হিসেবে আপনার থেকে যে আয় করছে, তার বিপরীতে এসব কৌশল ও ষড়যন্ত্র প্রয়োগ করে আপনার অজান্তে আরো বেশি ইনকাম করছে। এক্ষেত্রে সরকার নিরব; পাবলিক ভোদাই হলে যা হয়।



বিভিন্ন কনটেন্ট প্রোভাইডার বা সিপি কোম্পানিগুলো মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে মিলে যৌথ প্রযোজনায় এই অবৈধ ব্যবসাটা বাংলাদেশে করছে এখন। কনটেন্ট প্রোভাইডার বা সিপি কোম্পানিগুলো মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে কিছু চুক্তি করে এসব অবৈধ ব্যবসাটি যৌথ প্রযোজনায় করার জন্য। যা সরকারও জেনে না জানার ভান করে। মাঝখানে পকেট কাটা যাচ্ছে আমজনতার। আপনি একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, মানে আপনাকেই ওরা এসব প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বোকা বানিয়ে টাকা কামাচ্ছে, আপনারই অজান্তে।



অনেক সময় মোবাইলে গভর্মেন্ট ইনফো আসে। এটা সরকারিভাবেই করা হয়। এটা সহ্য করা যায়। কিন্তু দিনের মধ্যে হাজারবার এসএমএস/ফোন আপনি আর কত সহ্য করবেন? আমাদের প্রধানমন্ত্রী'র ফোনে নিশ্চয়ই এসব যায় না। মন্ত্রী বা সাংসদদের ফোনে নিশ্চয়ই এসব যায় না। আপনি আম পাবলিক, সুতরাং আপনাকেই এই বিড়ম্বনা নিরবে সহ্য করতে হবে। এ কোন মোবাইল কোম্পানির রাম রাজ্যে আমরা বসবাস করছি!



আমরা মোবাইল কোম্পানিগুলোর এসব প্রতারণা ও কৌশলী অবৈধ ব্যবসাকে সরকারের দৃষ্টিগোচর করাতে চাই। বিটিআরসি এ বিষয়ে যতদিন ব্যবস্থা না নেবে, ততদিন এরা এই অবৈধ ব্যবসা করে জনগণের পকেট কাটতে থাকবে। আর মোবাইল কোম্পানির এক এসএমএস বা ফোনের বিড়ম্বনা আপনি কেন প্রতিদিন সহ্য করবেন? এজন্য আপনাকে তো কোনো টাকা দিচ্ছে না, উল্টো আপনার পকেট কাটছে এরা। সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন হয়ে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে জনগণ এদের কাছে চিরদিনই পকেট হারাতে থাকবে। আমরা চাই, বিটিআরসি এ বিষয়ে একটা খোলামেলা সিদ্ধান্তে আসুক। নইলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করাই বন্ধ করে দিতে হবে।



বর্তমান যুগ কমিউনিকেশনের যুগ। যোগাযোগ না করে থাকা যায় না। তাই একান্ত দায় ঠেকে আমার মত যারা মোবাইল ব্যবহারকারী, তাদের জন্য এটা সত্যি সত্যি খুবই বিড়ম্বনার। এ বিষয়ে কার কাছে বলব? বলে কি হবে? এদেশে বলে কি কোনো দিন কিছু হয়েছে? কিন্তু মোবাইল কোম্পানিগুলোর নানা কিসিমের অফারের আড়ালে এসব প্রতারণা থেকে আপনি যতই সতর্ক থাকুন না কেন, আপনিও এদের কোনো না কোনো ফাঁদে আপনার অজান্তেই পা দিয়ে বসে আছেন। অতএব সাধু সাবধান। নিজেরে যত চালাক ভাবেন না কেন, মোবাইল কোম্পানি আপনার পকেট কাটছে আপনাকে বুঝতে না দিয়েই।

রেজা ঘটক, সাহিত্যিক, নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ