আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সাম্প্রদায়িকতা, মুখোশ খুলে আয়নায় দাঁড়ান

জুয়েল রাজ  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার হওয়া ২৯ টি দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তার অফিসে কথা বলেন। এতে বাংলাদেশি প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নিখোঁজ হয়েছেন। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত নিপীড়নের বর্ণনা ও দেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে উল্লেখ করে তিনি ট্রাম্পের সহায়তা চান।  আর এই কারণেই সারা দেশের মানুষ ক্ষেপেছেন তার উপর। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন প্রিয়া, এই অভিযোগে।

প্রিয়া সাহার বক্তব্যের প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সত্যি বলছি, আমাকে আশাবাদী করেছে। কট্টর সাম্প্রদায়িক লোকটি ও বলছে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির দেশ,  সংখ্যালঘুদের পুষ্পশয্যা বাংলাদেশ!

মানুষের চেয়ে  সুন্দর এবং মানুষের চেয়ে  বড় বিচারক পৃথিবীতে আর কেউ নাই। মানুষের আদালতে যে রায় হয় সেটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ  রায়। আবার সেই মানুষই খুনি হয়, ধর্ষক হয়, আবার গণপিটুনিতে অংশ নেয়, দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে ভিডিও রেকর্ডিং করে। প্রিয়া সাহা বনাম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন পর্বের রায় মানুষের আদালতে বাংলাদেশ দিয়ে দিয়েছে। মানুষের এই দেশপ্রেমের কাছে প্রিয়া সাহা পরাজিত হয়েছেন। এই রায় আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে।

প্রিয়া সাহার আগে কি এই কথাগুলো আর কেউ বলে নি? হুম প্রিয়া সাহা যে কাজটা করেছেন সংখ্যার তথ্যগত ভুল করেছেন। তিনি ৩ কোটি ৭০ লাখের যে হিসাব দিয়েছেন সেই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে। আমার নিজের ও দ্বিমত আছে এই সংখ্যা নিয়ে।

প্রিয়া সাহার  মিথ্যাচার আমাকে আশাবাদী করেছে। আমরা যারা ৭১,দেখিনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমরা দেখেছি যে কোন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভাজন। হত্যা খুন ধর্ষণ দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র যাই ঘটুক সব বিষয়েই দুইটা তিনটা পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। একদল পক্ষে অন্যদল বিপক্ষে আর তৃতীয় পক্ষ সুশীল। যারা, তবে, কিন্তু দিয়ে একটা জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করেন।  ৭১-র যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও এখনো দুইটা পক্ষ বিরাজমান। দেশপ্রেম এইখানে বিভক্ত! এইবারই প্রথম প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে এক জায়গায় এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে বাংলাদেশের সব নাগরিক। তার মান আমাদের সুযোগ আছে এক হওয়ার।

আমাদের বাল্যশিক্ষায় শিখানো হয়েছিল মিথ্যা বলা মহাপাপ, আবার স্কুলের ধর্ম শিক্ষায় শিখানো হয়েছিল, কোন  মিথ্যা যদি জীবন রক্ষা করে তবে সেই মিথ্যায় পাপ নেই। প্রিয়া সাহার বক্তব্যে পর আমার মনে হয়েছে এই রকম মিথ্যায় পাপ নেই। একটি মিথ্যাচার অন্তত সারা জাতিকে এক করতে পেরেছে।

প্রিয়া সাহা বলার আগে,  আমেরিকা বা ডোনাল্ড ট্রাম্প কি এই তথ্য আদৌ জানতো না ।  যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ কোথায় সেটাই জানেন না ভাব ধরেছিলেন।  ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও আর্জি জানিয়েছেন কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করার। ইমরান খান  ট্রাম্পকে বলেছেন কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করলে ১০ কোটি মানুষ নাকি তাঁর কাছে ঋণী থাকবে। ভারত যদিও ট্রাম্পের দাবীকে নাকোচ করেছে, বলেছে মোদী এই অনুরোধ করেন নি। পাকিস্তান, ভারতে রাষ্ট্রদোহীতার অভিযোগ কেউ তুলেছে বলে শুনি নাই।

কিন্তু বাংলাদেশের মানুষই শুধু প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে নাখোচ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক তীর্থভূমি হিসাবে উল্লেখ করেছেন।  বাংলাদেশে কি আসলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বহমান?

সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত  নির্যাতনের সংবাদ কিছুই মানতে রাজী নন।

Office of the United Nations High Commissioner for Human Rights (OHCHR) এর সাইটে গেলে একটা ৪৬ পাতার পিডিএফ ফাইল পাওয়া যাবে যেখানে 'silent ethnic cleansing' নিয়ে একটা রিপোর্ট আছে, minorityrights এর ওয়েবসাইটে গেলে ৩২ পাতার 'challenges facing religious minorities in Bangladesh' নামে আরেকটি পিডিএফ আছে। ওটাও দেখে নিতে পারেন। কেউ কি এই তথ্যগুলো জানেন। কিসের ভিত্তিতে এইসব প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একবার ও কি প্রতিবাদ জানিয়েছেন?

প্রিয়া সাহার বক্তব্যে  সমস্যা কি? সংখ্যাগত ভুল , নাকি পুরো বিষয়টা মিথ্যা, নাকি নামটা  প্রিয়া সাহা বলে? এই বিষয় গুলো কেউ না বলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের এক ধরণের verbal torture শুরু করেছেন। তাদের  ১৪ পুরুষ উদ্ধার করে দিচ্ছেন।

২০১৮ সালে খোদ বাংলাদেশে বসেই আমেরিকান হাই কমিশন  সংখ্যালঘু সুরক্ষা দিতে পারেনি বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তাও সাংবাদিকদের ডেকে, সেখানে উল্লেখ করেছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে চললেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে পারেনি বাংলাদেশ। তাদের উচ্ছেদ ও জমি দখল হয়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।

পাঠ্যপুস্তকে ঐতিহ্যগত ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয় গুলোয় তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে অমুসলিম লেখকদের লেখা সরিয়ে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই—এমন সব বিষয়েও ধর্মীয় উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশসহ প্রায় ২০০টি দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকাস্থ আমেরিকান সেন্টারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যেমন: হিন্দু, বৌদ্ধ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের উচ্ছেদ ও তাদের জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে কার্যকর সুরক্ষা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

গত বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, বিশেষ করে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। জুন মাসে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চাকমাদের ৩০০ বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় ৭০ বছর বয়সী এক নারী হামলায় নিহত হন। একজন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা থেকে আগুন-সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরে হিন্দুদের ৩০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এতে বলা হয় হয়, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাংলা পাঠ্যপুস্তক থেকে দেশটির ঐতিহ্যগত ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়গুলোতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। যেমন অমুসলিম লেখকদের লেখা সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন সব বিষয়েও ধর্মীয় উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, দেশটির সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হলেও দেশটি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিতে চলে। ধর্মীয় বৈষম্য নিষিদ্ধ করে সব ধর্মের জন্য সমতার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ওপর জোর দিয়ে মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা,আরও  বিশিষ্ট নাগরিক, বেসরকারি সংস্থা ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।

নালিশের রাজনীতি নতুন কিছু নয়,পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমেরিকা সব জায়গায় নালিশ হয়েছে, আমেরিকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের  শুল্কমুক্ত প্রবেশ সুবিধা বাতিলের দাবীতে স্বয়ং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিঠি লিখেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীর বাঁচাতে পৃথিবীর সব দেশেই লবিং হয়েছে।  বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, আইন আদালত, সংবিধান কিছুই তারা মানতে রাজী নয়। ইউটিউবে ভিডিওটি খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে, ব্যারিস্টার তুহিন মালিক লন্ডনে এক সভায় জাতির জনক,  বাংলাদেশের সংবিধান সব কিছুকে জঘন্যভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছিলো।

লন্ডনে বিভিন্ন সংগঠন আছে যারা বাংলাদেশ রক্ষার নামে প্রতিমাসে এই দেশের মন্ত্রী এম পি দের নিয়ে এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করেন। এবং অবাক করার বিষয় এই  অংশটাই দেখলাম প্রথম প্রিয়া সাহার বিরোধিতা শুরু করেন। ঠিক এর একদিন আগে চট্টগ্রামে ইসকনের নামে গুজবের অবসান হয়। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাংচুর করার পরে দৈনিক ইনকিলাব (রাজাকার মান্নানের পত্রিকা) উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে নিউজ করল ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙায় ঢাকার শাঁখারী বাজারে হিন্দুদের মিষ্টি বিতরণ। সারা দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল তাণ্ডব। কারো কাছে কি সেই হিসাব আছে কতো সনাতন ধর্মাবলম্বী সেই সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল, কতো প্রার্থনালয় ধ্বংস হয়েছিল?

২০০১ সালের নির্বাচন,  ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবের পর সহিংসতা, সব কিছু দুর্বৃত্তদের নামে চালিয়ে দিয়েছে আমাদের গণমাধ্যম। বাংলাদেশে কয়টা মসজিদ ভাংচুর হয় আর কয়টা মন্দির ভাংচুর হয় সেই হিসাবটা একবার নিলেই হবে।

প্রিয়া সাহা মিথ্যাচার করেন নি, অর্ধসত্য বলেছেন, আর এর মাধ্যমে  সংখ্যালঘুদের একটি আগাম সতর্ক বার্তা দিয়ে গেল, হয় মুখ বুঝে মানিয়ে চলতে হবে, না হয় পালাতে হবে , কিন্তু বিচার দিতে পারবেন না। সিলেট অঞ্চলে একটা প্রবাদ আছে , ভাত দেয়ার মুরদ  নাই কিলাইবার ঠাকুর ( ভাত দেয়ার যোগ্যতা নাই কিন্তু বউকে মারধর করার ক্ষেত্রে এগিয়ে)। তবে যে ভুলগুলো করেছেন প্রিয়া, মুসলিম শব্দটা ব্যবহার করে, যদি বিএনপি জামায়াত বলতেন আওয়ামী লীগ মাথায় করে রাখতো, আর যদি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের দোষ দিতেন তাহলে জামায়াত বিএনপি প্রিয়ার পক্ষে দাঁড়াত। এই জায়গায় প্রিয়া সাহা ধরা খেয়ে গেছেন। প্রিয়ার দেয়া  লজ্জাই যেন আমাদের শেষ লজ্জা হয়। বাংলাদেশে আর একটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে না!

অনেকেই জানেন, পৃথিবীতে অভিবাসীর ক্ষেত্রে দুই ধরণের ফ্যাক্টর কাজ করে, Pull Factor এবং Push Factor,  যারা উন্নত জীবনের আশায় ভাল কামাই l Factor রোজগারের আশায় দেশান্তরী হন, তারা এই Pull Factor এর আওতায় পরেন। আর যাদের জোর করে উচ্ছেদ করা হয়, বা দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয় তারা Push Factor এর আওতায় পরেন। সংখ্যালঘু যারা দেশান্তরী হয়েছেন তারা বাধ্য হয়েছেন।

সাম্প্রদায়িকতা এই উপমহাদেশে নতুন কিছু নয়, এইটা নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই বরং দায় স্বীকার করে নিলেই বরং এর থেকে উত্তরণ সম্ভব। সমস্যাই যদি চিহ্নিত করতে না পারেন সমাধান কিভাবে দিবেন।

সাম্প্রদায়িক দাঙা, রক্তপাত, দেশ বিভাগ সবইতো সাম্প্রদায়িকতার ফসল।  মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাজউদ্দীন আহমদ নামটাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জন্যে ছিল মাথাব্যথার। তাঁর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে অজস্র, “তাজউদ্দীন ভারতে গিয়া হিন্দু হইয়াছেন” লেখা লিফলেট ছড়ানো হয়েছে শহরজুড়ে, পবিত্র কোরআনের হাফেজ একজন মানুষের নামের আগে শ্রী  পদবী যুক্ত করে তাঁকে শ্রী তাজউদ্দীন নামে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে সবসময়। মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানের মূল অস্ত্র ছিল ধর্ম। বাংলাদেশে এখনো আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা এমনকি খোদ শেখ মুজিবের পূর্ব পুরুষ হিন্দু ছিল বুএ প্রচারণা চালানো হয়। এবং কিছু মানুষ তা বিশ্বাস ও করে।

১৯৭১ সাল দেড় কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়েছিল বলা হয়।  যার এক কোটিই ছিলেন হিন্দু, দেশ স্বাধীন হল,একবুক আশা নিয়ে হিন্দুরা দেশে আসার পূর্বেই জানতে পারল শত্রু সম্পত্তি আইন পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এই আইন অনুসারে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানী নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের স্থাবর সম্পত্তি যা পাকিস্তান আমলে 'শত্রু সম্পত্তি' ও বাংলাদেশ আমলে 'অর্পিত সম্পত্তি' নামে অভিহিত হয়েছিল,তাই  নিরাশ হয়ে ভিটেমাটি ছাড়া এক কোটি হিন্দু ভারতেই শরণার্থী হয়ে রয়ে গেল, হিন্দুদের নামে থাকা সকল শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করা হল, শিল্পপতি হিন্দু রা বাস্তুচ্যুত হল, কিছু বলতে পারল না, তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট হবে। এবং শুধুমাত্র হিন্দুদের সম্পত্তিই শত্রু সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হয়েছে। তার পর ১৫ ই আগস্টের ট্রাজেডি সামরিক সরকারের সময় রাষ্ট্র কে পূর্নাঙ্গ ইসলামিক রূপ দেওয়া হল। পৃথিবীর আর কোন দেশে এই শত্রু সম্পত্তি আইন আছে আমি জানি না। যদিও বর্তমান সরকার আইনটি সংশোধন করে সম্পত্তি ফেরত নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

লন্ডনে আমি হাজারটা উদাহরণ দিতে পারব, প্রয়াত  হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস কে একবার বলেছিলাম এই যে সেমিনারের নামে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের উত্তরসূরিরা বাংলাদেশকে  প্রতিদিন বিক্রি করছে, আমি কয়েকটা সংগঠনের নাম ও সে সময় দিয়েছিলাম যারা এখনো লন্ডনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, শাপলা চত্বরে হাজার হাজার মানুষের লাশ গুম,  পিলখানা হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগের নীল নকশা, ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে অভিযোগ করছেন। এদের সদস্য সমর্থকেরা দেখলাম সবার আগে দেশদ্রোহিতার অপরাধে প্রিয়া সাহার শাস্তি দাবী করছেন।  ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডায় যারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন একবার কি তাদের জিজ্ঞাসা করে দেখেছেন, দেশকে কতবার কত ভাবে, শুধু ভাবমূর্তি নয় হাজার হাজার মূর্তিতে ভেঙেছেন। একবার জানার চেষ্টা করবেন।

গায়ের জোরে অসাম্প্রদায়িক হতে পারবেন না। আগে বাঙালি জাতীয়তাবাদ  প্রাণে ধারণ করুন। কথায় কথায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ এই দেশে এই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি চলবে না, হিন্দু লেখকের লেখা চলবে না, হিন্দু লেখা জাতীয় সঙ্গীত চলবে না, এইসব বন্ধ করেন।  ৭২ এর সংবিধানে দেশ ফিরে গেল, আদালতের রায়ে সাবেক স্বৈরশাসকদের সব সংশোধনী বাতিল করা হল, কিন্তু রাষ্ট্র ধর্মের জায়গায় হাত দেয়া হয়নি। কারণ সেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব।

এই সংবিধানে কি অন্য ধর্মের মানুষের  রক্তের দাগ নেই। সেদিন কি কেউ দাবী তুলেছিলেন এই দেশ  মানুষের কোন ধর্মের না। এই সংবিধান বাংলাদেশের কোন ধর্মের না।  করেন নি। তাই আগে নিজে আয়নায় দাঁড়ান । সত্যিকার অর্থেই নিজে কতটা অসাম্প্রদায়িক সেইটা বুকে হাত দিয়ে যাচাই করেন। 

জাতির জনক সেটি জানতেন মানতেন , বিশ্বাস করতেন বলেই বলতে পারেন,  "এই দেশ হিন্দুর না, এই দেশ মুসলমানের না। এই দেশকে যে নিজের বলে ভাববে, এই দেশ তার। এই দেশের কল্যাণ দেখে যার মন খুশিতে ভরে উঠবে এই দেশ তার। এই দেশের দুঃখে যে কাঁদবে এই দেশ তার। এবং এই দেশ তাদের যারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দিবে"।

এই যে কথায় কথায় সংখ্যালঘুদের ভারত চলে যাওয়ার কথা বলা, কিংবা অনেকেই অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন , আমরা তো তাঁদের খুব সম্মান দিয়ে রেখেছি এই দেশে, সরকারী চাকরীতে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি এই বেঈমানদের দেশ থেকে লাথি দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে  দেয়া দরকার। এই হইল অসাম্প্রদায়িকতার নমুনা । আরে ভাই তাঁর দেশে তাঁকে আপনি  আলাদা সম্মান দিয়ে রাখবেন কেন ? তাঁর মানে সমস্যা আছে কোথাও? আপনার সম্প্রদায়ের মানুষটির প্রতি আপনার যে সম্মান ভালবাসা একই ভালবাসা  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষটি ও আশা করে। বাংলাদেশের জাতীয় কালী মন্দির থেকে শুরু করে এমন কোন মন্দির বা শশ্মান ঘাট আছে যার ভূমি দখল হয়নি?

আরেকজন লিখেছেন,  আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই নিখোঁজ মানুষগুলি বাংলাদেশের কত শত, হাজার কোটি টাকা পাচার করে ভারতে গিয়েছে। যারা সেখানে গিয়েছে, তাদের মধ্যে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উচ্চ শিক্ষিত লোক রয়েছে। তাদের পেছনে রাষ্ট্রের  কোটি কোটি খরচ হয়েছে। তাদের বলেন, সেগুলি ফিরিয়ে দিতে। আপনার মত কিছু কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেনা। কেউ বা লিখছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, আমরা আসলে দুধ দিয়ে কালসাপ পুষছি। যুক্তি বটে! এবং এটাই বাস্তবতা, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সংখ্যালঘু বা হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে অন্তরে এই বিষটুকুও লালন করেন।

২০১৩ সালে  কবি নির্মলেন্দু গুন কবিতা লিখেছিলেন
রাইতভর ঘুমাইতে পারিনা
ওরা আবার কহন আহে,
যশোর মালোপাড়া,  অভয় নগর,
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসির নগর, কক্সবাজারের রামু,
নোয়াখালীর রাজাগঞ্জ, পঞ্চগড় এর দেবীগঞ্জ।

জুয়েল রাজ, সম্পাদক, ব্রিকলেন; যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি, দৈনিক কালেরকন্ঠ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ